আমাদের মহাজাগতিক ইতিহাস

আমরা তো নানাভাবে নিজেদের বর্তমান অবস্থাকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ফেলে যাচাই করে দেখি। জাতীয় ইতিহাস, উপমহাদেশীয় ইতিহাস, পৃথিবীর ইতিহাস ইত্যাদি কত-কী! যদি একটু অন্যভাবে দেখতে চাই? ধরুন, কোনো দেশ-জাতির সীমানা না মেনে, এই গ্রহটিকে নিজেদের ঠিকানা ধরে নিয়ে, যদি এই মহাবিশ্বের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নিজেদের এক নজর দেখে নিতে চাই, কেমন হবে সেটি? এ রকম ইতিহাসের আলোচনার শুরুতে নিশ্চয়ই আসবে ‘শুরু’র কথা। এবং ভেবে দেখুন, যেকোনো প্রাচীন ইতিহাসের শুরুটা সব সময়ই কেমন যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। বোঝা যায় কি যায় না, ধরা যায় কি যায় না ধরনের অবস্থা থাকে। আমরা বর্তমানের অনেক কার্যকারণের সঙ্গে অতীতের অনেক কিছু মেলাই, চেষ্টা করি একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর। আমরা যদি জানতে চাই, ‘শুরু’তে ​মহাবিশ্ব কেমন ছিল, কী হবে এর উত্তর? সত্যি বলতে কি, এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।

পদার্থবিজ্ঞানীরা বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের কথা বলেন, কিন্তু যা কিছু ব্যাখ্যা করা হয় তার সবই বিগব্যাংয়ের পরের ঘটনা। কত পরের ঘটনা? সেটা আমরা একটু পরেই দেখব। তাহলে মহাবিস্ফোরণের সময় কী ঘটেছিল, কেমন ছিল সেই অবস্থাটা, তা আমরা জানব কী করে? না, সেটা আমাদের জানার কোনো উপায় নেই। বলা যেতে পারে, ওই সময়টাতে সবই শূন্য ছিল। নাহ, এই বাক্যটি বরং বিভ্রান্তি বাড়াবে। কারণ আমাদের মনে হতে পারে, তখন ‘সময়’ বলতে কিছু একটা ছিল এবং শূন্য বলতে ‘শূন্যস্থান’-জাতীয় কিছু বোঝানো হচ্ছে। না, তা নয়। তখন স্থানও ছিল না, সময়ও ছিল না। মানে স্থান-কালের সৃষ্টি তখনো হয়নি। ওগুলোও সৃষ্টি হয়েছে মহাবিস্ফোরণের পরে। একটু কল্পনা করে দেখুন, এমন এক ইতিহাস নিয়ে বসেছি আমরা, যখন সময়েরও সৃষ্টি হয়নি! আদি বলতে এই আদিকেই বোঝানো হচ্ছে। তো, যা বলছিলাম, তখন স্থান-কাল ছিল না, বস্তু ছিল না, আলো ছিল না, শব্দ ছিল না, মোট কথা কিছুই ছিল না। থাকা বলতে ছিল ‘নাথিংনেস’, যার বিস্ফোরণে তৈরি হলো সামথিং—এই মহাবিশ্ব। অবশ্য তখনো তার বর্তমান রূপ কল্পনাতীত ছিল, সে ছিল এক শিশু মহাবিশ্ব। ওই সময়ে এবং এর পরে কী ঘটেছিল বিগব্যাং তত্ত্ব তার ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছে। এই তত্ত্ব আমাদের জানিয়েছে, মোটামুটি ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের এই মহাবিশ্ব একটা সিঙ্গুলারিটি হিসেবে অস্তিত্বশীল হয়।

এই সিঙ্গুলারিটি ব্যাপারটা কী? কোত্থেকেই বা এল? সত্যি বলতে কি, আমরা তা জানি না। এই সিঙ্গুলারিটি অনেকটা ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মতো ব্যাপার, যার ঘনত্ব অপরিসীম এবং মহাকর্ষীয় চাপ অকল্পনীয় রকমের বেশি। এটা আসলে একটা গাণিতিক ধারণা, যা মনকে খানিকটা বিমূঢ় করে দেয়। বিন্দুর মতো ‘কিছু একটা’র ঘনত্ব কীভাবে অসীম হয় সেটি বুঝে ওঠা সত্যিই কঠিন। আমাদের মহাবিশ্ব শুরুতে আসলে এই নাথিংই ছিল, এই সিঙ্গুলারিটি নামক নাথিং, যার ঘনত্ব এবং তাপমাত্রা ছিল অসীম। কোত্থেকে এল এটা, কেনই-বা এল? আমরা জানি না। শুধু জানি, এই যে মহাবিস্ফোরণের ফলেই তৈরি হলো স্থান ও কাল। দেখা দিল অকল্পনীয়-বিপুল পরিমাণ শক্তির বিকিরণ, চলল বিকিরণ থেকে কণা-প্রতিকণা জোড়া তৈরি এবং ধ্বংসের খেলা। খুদে মহাবিশ্ব প্রচণ্ড গতিতে সম্প্রসারিত হতে লাগল, বড় হতে লাগল, তাপমাত্রা কমতে লাগল, একসময় তৈরি হলো প্রোটন-নিউট্রনের মতো ভারী কণা। এসব কণার সংঘর্ষে তৈরি হতে লাগল নতুন নতুন কণা। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে কণাগুলো মিলিত হয়ে নিউক্লিয়াস ও পরমাণু গঠন করতে সক্ষম হলো। অন্যদিকে চারটি মৌলিক বল আলাদা হয়ে গেল পরস্পর থেকে। এ সময়েই বিপুল পরিমাণ ধূলিকণারও জন্ম হলো, সম্প্রসারিত মহাবিশ্বের কোথাও কোথাও তারা জড়ো হতে হতে জন্ম হলো নক্ষত্রের, জন্ম হলো গ্রহের এবং এ ধরনের অনেক গ্রহ-নক্ষত্র মিলে তৈরি হলো গ্যালাক্সি। তেমনই এক গ্যালাক্সির এক সাধারণ নক্ষত্রের চারপাশে জড়ো হলো কতিপয় গ্রহ, সেই গ্রহগুলোর মধ্যে অতিসাধারণ একটিতে জৈব অণুগুলোর মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি হলো প্রোটিন আর উদ্ভব হলো প্রাণের। আর তখনই এই সাধারণ গ্রহটি হয়ে উঠল অসামান্য। কারণ, এতে রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব। বৃক্ষ আর জীবের জন্ম হলো, তারা আপন নিয়মে বিবর্তিত হতে লাগল, আর তারই একপর্যায়ে জন্ম হলো মনুষ্য প্রজাতির। কত সহজে, একটানে বলে যাওয়া গেল আমাদের এই মহাজাগতিক ইতিহাস! কিন্তু যত সহজে বলা গেল, ঘটনাগুলো মোটেই তত সহজে ঘটেনি; বরং এক মহা জটিল প্রক্রিয়ায়, সৃষ্টি ও বিনাশের নানা জটিল খেলা শেষে মহাবিশ্বের বর্তমান চেহারা দাঁড়িয়েছে, যার সামান্যই আমরা আজ পর্যন্ত জানতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। আমরা বহুকাল আগে থেকেই জানতে চাইছি, এটা তো এ রকম বুঝলাম, কিন্তু কেন এ রকম? জানতে চাইছি, এ রকম ঘটেছিল বুঝলাম, কিন্তু কেন ঘটেছিল? এই যে প্রশ্ন করা, প্রশ্নের উত্তর খোঁজা, উত্তর পেলে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা, এগুলোই বিজ্ঞানীদের কাজ। সেই কাজ তাঁরা করে চলেছেন শত শত বছর ধরে।

শুরুতে যে বলেছিলাম, আমরা একবারে ‘শুরু’ সম্বন্ধে কিছুই জানি না, জানি মহাবিস্ফোরণের কিছুক্ষণ পরের ঘটনাবলি, সেই কিছুক্ষণটা কতক্ষণ? এ সময়টি একটা গাণিতিক হিসাবের মাধ্যমে বের করা যায়। শুধু সময়টি নয়, ওই সময়ে মহাবিশ্বের অন্যান্য রাশি—যেমন ভর বা দৈর্ঘ্য—কেমন ছিল তা-ও বের করা যায়। আর এই তিনটি রাশি জানা থাকলে অন্য অনেক কিছুই জানা সম্ভব হয়। এই যে গাণিতিক হিসাব, সেটি করা যায় তিনটি প্রাকৃতিক ধ্রুবকের সমন্বয়ে। এই তিনটি ধ্রুবক হলো—বিশ্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক G, প্লাংকের ধ্রুবক h, এবং শূন্যস্থানে আলোর বেগ c; এই তিনটি ধ্রুবক পাওয়া যায় তিনটি সূত্র থেকে। G পাওয়া যায় নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র থেকে:

Fg=GM1M2/r2

এখানে M1এবং M2 হচ্ছে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বস্তর ভর এবং r হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব। আর G হলো মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, যার মান:

G = 6.67 x10-11 Nm2kg-2

প্লাংকের ধ্রুবক য আছে তাঁর কোয়ান্টাম সমীকরণে:

E = hv, এখানে ঊ হলো শক্তি, v হলো কম্পাঙ্ক এবং য হলো ধ্রুবক, যার মান: h = 6.63 x 10-34Js.

আইনস্টাইনের ভর-শক্তির সমতা সূত্র তো সবার চেনা। সেখান থেকেও বের করা যায় আলোর বেগ: E=mc2, এখানে E হচ্ছে শক্তি, m হচ্ছে বস্তর ভর, আর c হলো আলোর বেগ, যার মান: c = 3 x 108 m/s.

গাণিতিক সমীকরণকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গণিতের একটা বিমূর্ত সৌন্দর্য আছে। খালি চোখে দেখা যায় না, তবে অনুভব করতে পারলে অনির্বচনীয় আনন্দে মন ভরে ওঠে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের ছাত্রদের তো একটা বিরাট দায়িত্বই হলো এসব সমীকরণ বোঝার চেষ্টা করা। আপাত জটিল এসব সমীকরণ আর হিসাবনিকাশগুলো ঠিকমতো বুঝতে পারলে সেগুলো বিমূর্ত সংগীতের মতোই আনন্দময় হয়ে ওঠে। উদাহরণ দিই। যে তিনটি ধ্রুবকের কথা বললাম, এখন সেগুলোকে আমি এক বিশেষ পদ্ধতিতে সমন্বয় করে দেখাব। প্রথমে এই সমন্বয়টি দেখুন :

Abdul Gaffar

এখানে,

Abdul Gaffar

এই সমীকরণের বাঁ পাশে যে tp লেখা হলো তার কারণ কী? কারণ হলো, ডান পাশে যে ধ্রুবকগুলোর সমন্বয়টি করা হয়েছে, তাদের এককগুলো হিসাব করলে কাটাকাটি করে শেষ পর্যন্ত শুধু সময়ের একক (সেকেন্ড) থেকে যায়। তার মানে হলো—এই সমন্বয় থেকে সময় পাওয়া যায়। এই সময়কে প্লাংকের সময় বলা হয় বলে ঃঢ় লেখা হয়েছে। ধ্রুবকগুলোর যে মান ওপরে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সমীকরণে বসালে সময়ের যে মানটি পাওয়া যাবে, সেটি এ রকম:

tp = 5.38 x10-44s। কী অকল্পনীয় ক্ষুদ্র সময় কল্পনা করতে পারছেন? ১-এর পরে ৪৪টি শূন্য দিলে যে বিশাল সংখ্যাটি পাওয়া যায়, সেটি দিয়ে ৫.৩৮-কে ভাগ করলে এই সময়টি পাওয়া যাবে। এটাই মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রতম সময়। এই সময়টি আসলে কী? এটা হলো মহাবিস্ফোরণের পরের সেই সময় যখন থেকে ওপরের তিনটি সূত্র কার্যকরী হয়েছিল (যদিও এগুলো আবিষ্কৃৃত হয়েছে কয়েক বিলিয়ন বছর পরে)। আমরা মহাবিশ্ব সম্বন্ধে যা জানি তা আসলে এই সময় এবং এর পরের ঘটনাবলি। এর আগের কোনো কিছুই আমরা জানি না। অদ্ভুত লাগছে না? আমরা পদার্থবিজ্ঞানের যেসব সূত্র এখন পড়ি, সেগুলোর মধ্যে অন্তত তিনটি সূত্র মহাবিস্ফোরণের ঠিক এই সময় পর থেকেই ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছিল (আসলে ক্রিয়াশীল হয়েছিল সব সূত্রই, তবে এই হিসাব থেকে সরাসরি তিনটির ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে এগুলোর কথা বলছি)।

আসুন, আরও দুটো সমন্বয় করে দেখি। ওই তিনটি ধ্রুবককে যদি ভিন্নভাবে সমন্বয় করি তাহলে আমরা যথাক্রমে ওই সময়ে মহাবিশ্বের দৈর্ঘ্য এবং ভর পাব। সমন্বয় করতে হবে এভাবে :

Abdul Gaffar

স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যায় যে ওই সময় মহাবিশ্ব খুবই ক্ষুদ্র ছিল, অকল্পনীয় ক্ষুদ্র; এবং যেহেতু সবকিছুই ছিল শক্তিরূপে, বস্তুকণার সৃষ্টি কেবল শুরু হয়েছিল তাই মহাবিশ্বের মোট ভরের পরিমাণও যে অতি সামান্য হবে তা-ও ধারণা করা যাচ্ছে। আদি মহাবিশ্ব ঠিক এই অবস্থা থেকে সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছিল আর আজকে, এই বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পর, আমরা দেখতে পাচ্ছি এই বিপুল আয়তনের মহাবিশ্বকে।

এই রাশিগুলো ব্যবহার করে শিশু মহাবিশ্বের অন্য বিষয়গুলোও জেনে নেওয়া যায়। নিচের টেবিলে সে রকম কিছু রাশির হিসাব দেখানো হলো।

রাশি মাত্রা মান

ক্ষেত্রফল L2 2.61 x 10-70 m2

আয়তন L3 4.22 x 10-105 m3

ঘনত্ব ML-3 5.15 x 1096 Kg /m3

বল MLT-2 1.21 x 1044N

চাপ ML-1T-2 4.63 x 10113 Pa

তাপমাত্রা ML2T-2 1.41 x 1032 Kelvin

এখানে কেবল কয়েকটি রাশির হিসাব দেখানো হয়েছে, যে কেউ চাইলেই অন্য রাশিগুলোও একইভাবে বের করতে পারবেন। রাশিগুলোর মানের দিকে তাকালেই আমাদের এই মহাবিশ্বের আদিরূপটি বুঝে ওঠা যায়। দেখুন, আয়তন কত ক্ষুদ্র ছিল। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। এত ক্ষুদ্র যে আমাদের তা কল্পনাতেই আসে না। আর এখন? এত বিপুল এত বিশাল এই মহাবিশ্ব যে তার সীমানা খুঁজে পাওয়া যায় না। সত্যিকার অর্থেই অসীম এক মহাবিশ্বে বসবাস আমাদের। আবার ঘনত্বের দিকে দেখুন। যেহেতু আয়তন খুব ক্ষুদ্র ছিল, ঘনত্ব ছিল অকল্পনীয় রকমের বেশি। তা-ই হওয়ার কথা। তখন যা কিছুই থাকুক না কেন, থাকতে হয়েছে ওই ক্ষুদ্র জায়গাটুকুর মধ্যেই, ঘন সংবদ্ধ অবস্থায়। আর সে কারণেই ঘনত্ব এবং চাপ দুটোই এত বেশি ছিল। বলের যে পরিমাণ দেখা যাচ্ছে, সেটিও বিপুল। কারণ, তখনো প্রকৃতির মৌলিক বলগুলো আলাদা হয়নি, ফলে সম্মিলিতভাবে তাদের পরিমাণ যে বিপুল হবে, তাতে আর সন্দেহ কী? আবার তাপমাত্রার কথা ভাবুন। এই ভয়াবহ উত্তপ্ত অবস্থায় যেকোনো বস্তুর অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব, সেটিও সহজেই অনুমেয়।

আমাদের সেই শিশু মহাবিশ্ব নিজে থেকেই সম্প্রসারিত হয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র থেকে বিপুল আকার ধারণ করেছে, ঘনত্ব কমতে কমতে এখন একেবারেই কমে গেছে (গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর পারস্পরিক দূরত্ব দেখলেই বোঝা যায়, কতটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভরবিশিষ্ট বস্তুগুলো)। বায়ুমণ্ডলের চাপ আর তাপমাত্রাও কমে গিয়ে একটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। আর নিজেকে সে সাজিয়েছে এক অপূর্ব সাজে। অজস্র গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি, তার ভেতরে আমাদের চাঁদ-সূর্য-পৃথিবী, তার ভেতরে নদী-পাহাড়-সমুদ্র-বনভূমি-হ্রদ-মরুভূমি-বিস্তীর্ণ প্রান্তর। তার ভেতরে আমরা, আমাদের প্রাণী ও বৃক্ষজগত্, আমাদের সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনার হাজারো গল্প।

খুব তো বলছি, কিন্তু নিজেদের কি আমরা এই গ্রহের বাসিন্দা বলে ভাবতে পারি? ভেবেছি কখনো যে এই গ্রহের—শুধু গ্রহের বলি কেন, এই মহাবিশ্বেরও—যা কিছু আছে তার সবই আমার এবং আমিও সবার? যদি ভেবেই থাকি, তাহলে ক্রমাগত নানাভাবে নিজেদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর গণ্ডিতে বেঁধে ফেলছি কেন? একবার অন্তত নিজেকে এই অপূর্ব গ্রহের একজন সৌভাগ্যবান নাগরিক হিসেবে ভেবে দেখুন, দেখবেন পৃথিবীর সবকিছুকেই কতটা আপন মনে হচ্ছে, সব মানুষকে কতটা কাছের মনে হচ্ছে, প্রাণী আর বৃক্ষজগতের জন্য—এমনকি জড় বস্তুগুলোর জন্যও—কেমন মন ভরে ওঠে গভীর মমতায়। দেশ-কাল-জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা এই সবকিছুর সীমানা ছাড়িয়ে নিজেকে বিশ্বনাগরিক ভাবার এই বিপুল-গভীর অনির্বচনীয় আনন্দ দিতে পারে বিজ্ঞানের এই অসামান্য তত্ত্বগুলো।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা