চলে গেলেন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী শিশিরকুমার ভট্টাচার্য

করোনাস্তব্ধ সময়ে একে একে নক্ষত্রপতনের খবর আসছে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে অনেক কীর্ত্তিমানের মুখ। কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে, কেউ স্বাভাবিক রোগেভুগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো আরেকটি নাম-  শিশিরকুমার ভট্টাচার্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। দীর্ঘদিন তিনি পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন, তাঁর বড় ছেলে শোভনের বন্ধু ভূ-পর্যটক তারেক অণু। তিনি এই মুহূর্তে রাজশাহীতেই আছেন।

শিশিরকুমার ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪০ সালে বরিশালের ধামুরা গ্রামে। তিনি খুলনার বিএল কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এমএসসি পাশ করেন ১৯৬৩ সালে। এরপর লন্ডনের কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যলয় থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে পিএইচডি করেন। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে ডক্টরেট করা প্রথম দিকের বাংলাদেশীদের একজন। জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করেছেন, তৈরি করেছেন নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যুু প্রক্রিয়ার একটা মডেল। সে বিষয়ক তাঁর একটা মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় বিশ্বখ্যাত অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস জার্নালে, ১৯৮০ সালে। তারপর দেশে ফিরে আসেন। প্রথমে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে  যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। পরে একই বিভাগের অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

অবসরের পর শিশিরকুমার ভট্টাচার্য বিজ্ঞান লেখালেখিতে মনোযোগ দেন। বার্ধক্য আর পারকিনসনের মতো দুরারোগ্য রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে লিখেছেন ব্ল্যাকহোল, ছোটদের বড়দের মহাবিশ্ব পরিচয়, মানুষ ও মহাবিশ্ব, মহাজাগতিক মহাকাব্য, আইনস্টাইন : জীবন ও আপেক্ষিক তত্ত্ব নামে বেশ কিছু মূল্যবান বই। বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের দ্য গ্রান্ড ডিজাইন বইটিকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন সৃষ্টির মহান পরিকল্পনা নামে।

শিশিরকুমার ভট্টাচার্যের লেখার ভাষা ছিল প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য। বারো থেকে আশি- সব বয়সীরা যাতে বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন বিষয়গুলি সহজেই বুঝতে পারেন, সেভাবেই তিনি লিখতেন।

শিশিরকুমারের ভট্টাচার্যের দুই ছেলে। বড় ছেলে শোভন লন্ডন প্রবাসী এবং ছোট ছেলে রাজন কর্মরত ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী সান্ত্বনা স্যানাল  সাবেক স্কুল শিক্ষিকা।

মহান এই জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীর প্রতি বিজ্ঞানচিন্তার পক্ষ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।