মহাবিশ্বের সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা

মহাবিশ্বের সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনাটি কী? এ রকম প্রশ্ন করা হলে আমরা প্রায় সবাই হয়তো ধন্দে পড়ে যাব। মনে হবে নানান কথা, ভাবব আকাশপাতাল অনেক কিছু। উত্তরও হতে পারে নানা রকম। সেসব উত্তরের অধিকাংশই জটিল সব বিষয় নিয়ে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সহজ উত্তরটি হয়তো মনেই আসবে না আমাদের। কারণ ওটাকে আমরা তাত্পর্যপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনেই করি না। কিন্তু সত্য হলো এই যে এই ঘটনা না ঘটলে আমাদের অস্তিত্বই থাকত না। হ্যাঁ, ঘটনাটি হলো বস্তু (Matter) বা ভরের সৃষ্টি।

আমরা অনেক কিছুর সৃষ্টি নিয়ে ভাবি, কিন্তু সেসব সৃষ্টির মূলে যে ছিল ভর সৃষ্টির ঘটনা সেটি ভাবিই না। আমাদের হয়তো মনে হয়, ভর বা বস্তু ব্যাপারটা চিরকাল ধরেই ছিল, কেবল এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তর ঘটেছে। এ রকম ভাবনার পেছনে কারণও আছে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে ওরকম রূপান্তরের ঘটনা দেখেছি অনেক, দেখছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বাইরেও যে অনেক কিছু থাকে, সেগুলোও তো একটু ভেবে দেখা দরকার! নিশ্চয়ই ভাবছেন, ভর সৃষ্টির ব্যাপারটি কীভাবে সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা হলো? হলো এই কারণে যে বস্তুরূপ না থাকলে এই মহাবিশ্বের কোনো কিছুই দৃশ্যমান হয়ে উঠত না। মানে, চোখে দেখা যেত না। আপনি-আমি এবং আমাদের চারপাশের যে দৃশ্যমান জগত্, সেটি দৃশ্যমান এই কারণে যে এদের ভর আছে, অর্থাত্ বস্তুরূপ আছে। একটু খুলেই বলি ব্যাপারটা।

মহাবিশ্বের সবকিছুকে আপনি নানাভাবে ভাগ করতে পারেন। সবচেয়ে মৌলিক ভাগটি হবে এ রকম: শক্তি (Energy) এবং বস্তু (Matter)। এবার শক্তির ব্যাপারটা ভাবুন। আপনার চেনা শক্তি কোনগুলো? তাপ? শব্দ? আলো? বিদ্যুচৌম্বকীয় শক্তি? তাপের কথাই ধরা যাক। ওটা যে আছে, তার নানা প্রমাণ আপনি নিজেই দিতে পারবেন। শীত বা গরমের অনুভূতি যে আসলে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ঘটে, সে কথা আমরা সবাই জানি। রান্না করা বা কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য যে তাপ লাগে, তাও জানি। জানি, বুঝি, অনুভব করি কিন্তু দেখেছি কি কখনো? মানে, তাপকে কি দেখা যায়? কিংবা শব্দ যে আছে সেটাও তো জানি, শুনতে পাই। কিন্তু দেখেছেন কি কখনো এই শক্তিকে? সুইচ টিপে দিলে বাতি জ্বলে, ফ্যান ঘোরে, আরও কত কী হয়। জানি যে বিদ্যুেচৗম্বকীয় শক্তিই এর কারণ। কিন্তু দেখেছেন কখনো সেই শক্তিকে? না, এর কোনোটাই দেখা যায় না। ভাবতে পারেন, আলো তো আমরা দেখতে পাই! না, পাই না। আমরা আলোর কতগুলো বৈশিষ্ট্যের ফলাফল দেখি। যেমন প্রতিফলন, প্রতিসরণ, বিচ্ছুরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ইত্যাদি। আলোকে কিন্তু আমরা দেখি না, বরং আলো আমাদের দেখতে সাহায্য করে। কোনো বস্তুর ওপর পতিত হয়ে প্রতিফলিত রশ্মিটি যখন আমাদের চোখে এসে পৌঁছায় তখন আমরা ওই বস্তুটিকে দেখতে পাই।

তাহলে কী দাঁড়াল ব্যাপারটা? দাঁড়াল এই যে শক্তিকে দেখা যায় না। অর্থাৎ কোনো কিছু শক্তিরূপে থাকলে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে না, যদিও নানাভাবে সেটি তার অস্তিত্বের জানান দেয়। কেবল সেগুলোই দেখা যায় যাদের রয়েছে ভর। অর্থাত্, বস্তুরূপ। এই যে ভর তৈরি হলো, সে জন্যই মহাবিশ্বের কিছু কিছু ‘জিনিস’ দৃশ্যমান হয়ে উঠল। তৈরি হলো মানে কী? কোনো এক সময় কি ভর বা বস্তু বলতে কিছু ছিল না? না, সত্যিই ছিল না। কী ছিল তাহলে? ছিল শক্তি, শুধুই শক্তির বিকিরণ। আমরা জানি, মহাবিশ্বের উত্পত্তি হয়েছিল বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। এ তত্ত্ব আমাদের জানিয়েছে, আদি অবস্থায় পুরো মহাবিশ্বই অসীম ঘনত্বের এবং অসীম তাপমাত্রার বিন্দুসম ‘একটা কিছুতে’ কেন্দ্রীভূত ছিল। বলাই বাহুল্য, অসীম তাপমাত্রা থাকলে সেখানে কোনো বস্তু থাকার প্রশ্নই থাকে না। অতএব নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সবকিছুই ছিল শক্তিরূপে। মহাবিশ্বের বয়স যখন এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার কোটি ভাগের এক ভাগ, তখন বস্তুকণা (ম্যাটার কোয়ার্ক) এবং প্রতিবস্তুকণার (অ্যান্টিম্যাটার কোয়ার্ক) জোড়া উত্পন্ন হতে থাকে (কোয়ার্ক হলো একধরনের মৌলিক কণা, যারা যৌথভাবে প্রোটন-নিউট্রনের মতো ভারী কণা তৈরি করে)।

আমরা এখন জানি, শক্তি থেকে ইলেকট্রন-পজিট্রনের জোড়া তৈরি হতে পারে, আবার তারা পরস্পরকে ধবংসও করে দিতে পারে। এই যে প্রতিকণার কথা বললাম, সেটির সঙ্গে কণার পার্থক্য হলো এদের ইলেকট্রিক চার্জে। যেমন ইলেকট্রন আর পজিট্রন হলো পরস্পরের প্রতিকণা। এদের ভর একই, কিন্তু চার্জ বিপরীত। ফলে তাদের মধ্যে কখনো ‘দেখা’ হলে, অর্থাত্ সংঘর্ষ-টংঘর্ষ হলে, পরস্পরকে ধবংস করে দেয় এবং পরিণামে আবার শক্তির জন্ম হয়। অর্থাত্ শক্তি থেকেই ভরসম্পন্ন কণা-প্রতিকণার জন্ম, আবার তাদের ধ্বংসের মাধ্যমে ফের শক্তিরূপে ফিরে যাওয়া। যেহেতু মহাবিশ্বের সেই আদিকালে, যখন শক্তির বিকিরণ ছাড়া আর কিছুই ছিল না, তখন এই ধরনের কণা-প্রতিকণার আবির্ভাব হচ্ছিল, আবার তারা পরস্পরকে ধবংসও করে দিচ্ছিল, তাহলে ভর বা বস্তু এল কোত্থেকে? তা ছাড়া, তৈরি হচ্ছিল কণা-প্রতিকণা দুটোই, আর আমরা এখন যে জগতে বাস করি বা যে জগিটকে ‘দেখি’ তা আসলে কণা দিয়ে তৈরি জগত্, প্রতিকণার নয়। প্রতিকণার জগত্ যদি থাকতই তাহলে আপনার একটা প্রতিরূপ থাকত, এবং আপনাদের যদি কখনো দেখা হতো, যদি ভুল করে দুজনে হ্যান্ডশেক করতেন তাহলে দুজনই ধবংস হয়ে যেতেন। তাতে উত্পন্ন হতো বিপুল পরিমাণে শক্তি! তা তো আর হচ্ছে না! তাহলে ওই প্রতিকণারা গেল কোথায়? ঘটনাটি কী? বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছে না? হ্যাঁ, রহস্যময়ই বটে। কী রকম? এই যে কণা-প্রতিকণার সৃষ্টি আর বিনাশ হচ্ছিল, অর্থাত্, যেখান থেকে সৃষ্টি হলো সেখানেই আবার ফিরে গেল তারা। একে যদি আমরা একটা প্রতিসম (Symmetric) ঘটনা বলি, তাহলে নিশ্চয়ই এমন কিছু অপ্রতিসম (Asymmetric) ঘটনা ঘটেছিল যার ফলে কিছু কণা-কোয়ার্ক রয়ে যাচ্ছিল। হ্যাঁ, প্রায় প্রতি তিন কোটি জোড়া কোয়ার্ক-অ্যান্টিকোয়ার্ক সৃষ্টি ও বিনাশের পর একটি করে কণা-কোয়ার্ক ‘কী করে যেন’ সত্যিই থেকে যাচ্ছিল। সে জন্যই একে অপ্রতিসম ঘটনা বলছি। তো, এই যে তিন কোটির মধ্যে একটি করে কণা-কোয়ার্ক রয়ে যাচ্ছিল, সেটা অনেকটা রাসায়নিক বিক্রিয়ার অধঃক্ষেপের মতো ব্যাপার। দুটো রাসায়নিক মৌলের বিক্রিয়ায় যেমন একটি প্রত্যাশিত যৌগ তৈরি হয় আবার অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু অধঃক্ষেপও পড়ে। তেমনই কিছু ঘটেছিল সেই আদিকালে। কিন্তু এই ‘অধঃক্ষেপ’ জাতীয় কণা-কোয়ার্কগুলোই আদি মহাবিশ্বের একমাত্র ‘জিনিস’, যা এখনো টিকে রয়েছে, তৈরি করেছে এই মহাবিশ্বের যাবতীয় বস্তু। কীভাবে? এই যে বাড়তি কোয়ার্কগুলো রয়ে যাচ্ছিল সেগুলো ঘন সংবদ্ধ হয়ে প্রথমবারের মতো তৈরি করে প্রোটন আর নিউট্রনের মতো ভারী কণাগুলো। মহাবিশ্বের বয়স যখন মাত্র দুই মিনিট তখন এই প্রোটন আর নিউট্রন মিলে প্রথমবারের মতো তৈরি করে ডিউটেরিয়াম—যেটি হাইড্রোজেনের একটি আইসোটোপ। এক সেকেন্ড বয়স থেকে প্রায় তিন মিনিট বয়স পর্যন্ত ধাপে ধাপে ডিউটেরিয়াম, প্রোটন ও নিউট্রন মিলে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরির প্রক্রিয়াটি চলে। সে জন্যই মহাবিশ্বে হিলিয়ামের পরিমাণ এত বেশি। তারাগুলোতে এখনো হিলিয়াম তৈরি হয়। কিন্তু ওই তিন মিনিটের মধ্যে যে পরিমাণ হিলিয়াম তৈরি হয়েছিল তা মহাবিশ্বের সবগুলো তারার তৈরি মোট হিলিয়ামের চেয়েও বেশি।

যা হোক, নিউক্লিয়াস তৈরির বহু বছর পর, সম্ভবত কয়েক হাজার বছর পর ইলেকট্রন এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে চার্জনিরপেক্ষ পরমাণু গঠন করে। আর কে না জানে, এই পরমাণুই সব বস্তুর মৌলিক উপাদান। দীর্ঘ এক প্রক্রিয়ায়, রহস্যময় এক উপায়ে ভর সৃষ্টির এ যাত্রা শুরু হয়েছিল। যার ফলে আমাদের এই দৃশ্যমান মহাবিশ্ব।

বিজ্ঞানীরা এই ভরের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেছেন বহুকাল ধরে। কোন পরিস্থিতিতে একটি বস্তু কী আচরণ করে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা তো হয়েছেই। আমি তার কথা বলছি না, বলছি বস্তুর একটা বৈশিষ্ট্য হিসেবে ভরের চরিত্র বোঝার চেষ্টার কথা। যেমন আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে এই ধারণার উদ্ভব হয়েছিল যে ভরকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, কেবল রূপান্তর করা যায়। অর্থাত্ বিচ্ছিন্ন একটি ব্যবস্থায় (Isolated System) মোট ভর সব সময় একই থাকে। ভরের নিত্যতা সূত্র হিসেবে পরিচিত এটি। আবার উনিশ শতকে উদ্ভব হলো শক্তির নিত্যতা সূত্রের। এই সূত্রমতে, শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, কেবল এক অবস্থা থেকে অন্য একটি অবস্থায় রূপান্তর করা যায়, মোট শক্তির পরিমাণ সব সময় একই থাকে। এভাবে ভর ও শক্তিকে আলাদাভাবে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে, আলাদা বলে ভাবাও হয়েছে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে এল ভর-শক্তির সমতা (Mass-Energy equivalence) সূত্র। আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত সূত্র E = mc2 প্রতিপাদন করলেন ১৯০৫ সালে (এখানে ঊ হচ্ছে শক্তি, m হচ্ছে বস্তুর ভর, আর c হলো আলোর বেগ)। এই ধারণার মূলকথা হলো—ভর আসলে আর কিছুই নয়, এটা হচ্ছে একটা বস্তুর ভেতরে শক্তির পরিমাপক। নিত্যতা সূত্রের বক্তব্যও পাল্টে গেল। বলা হলো, শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায়, তবে সৃষ্টি করতে হলে সমপরিমাণ ভর ধ্বংস করতে হবে। আর কোনো কারণে যদি শক্তি লয়প্রাপ্ত হয় তাহলে ভরের সৃষ্টি হবে। ভর সৃষ্টির এক অপূর্ব ব্যাখ্যা পাওয়া গেল এই সূত্রে। তার মানে, শক্তি থেকেই ভরের সৃষ্টি। আর সে কারণেই ভরসম্পন্ন বস্তুর ভেতরে সঞ্চিত থাকে বিপুল পরিমাণ শক্তি। কিন্তু তারপরও শেষ হলো না ভরের উত্স খোঁজার অভিযাত্রা। একটা কণার ভর আছে, বুঝলাম, কিন্তু ভরটা সে পায় কোথায়? কীভাবে পায়, কখন পায়? কত কত প্রশ্ন!

১৯৬৪ সালে পিটার হিগস নামক এক ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ভরের উত্স সন্ধানে এক নতুন ধারণা প্রবর্তন করলেন। তিনি অবশ্য একা নন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন Robert Brout এবং François Englert-এর মতো বিজ্ঞানীরাও। হিগস বোসন নামে একটা কণার কথা বললেন তাঁরা। বললেন, ভর সৃষ্টির জন্য দায়ী এই কণাটিই। ঈশ্বর কণা বা গড পার্টিকেল নামে যে কণাটির কথা আজকাল অহরহ শোনা যায়। এ কণাটি খুঁজে পাওয়ার খবরে বিশ্বজুড়ে হইচই গত কয়েক বছর ধরে, সেটি আসলে এই হিগস বোসন। তা এটি ঈশ্বর কণা নাম পেল কীভাবে? সে এক মজার ব্যাপার। লিওন লেডারম্যান নামক এক বিখ্যাত পদার্থবিদ তাঁর জনপ্রিয় বিজ্ঞান বইয়ের নাম ঠিক করেছিলেন The Goddamn Particle: If the Universe Is the Answer, What Is the Question?, কিন্তু প্রকাশক এই নামে বই প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। গড পার্টিকেল নাম দিলেই যে বইটি বেশি বিক্রি হবে সেটি লেখককে বোঝাতে সক্ষম হলেন। ফলে বইটি বেরোল The God Particle: If the Universe Is the Answer, What Is the Question? নামে। পাঠকেরাও লুফে নিলেন নামটি। হিগস বোসনের নাম হয়ে গেল ঈশ্বর কণা! এই কণাটি যে খুঁজে পাওয়া ভারি কষ্টের ব্যাপার আর এই কণার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বের যাবতীয় রহস্য, সেটি বোঝাতে হয়তো নামটি জুতসই-ই হয়েছে। যাহোক, কেমন এই কণা? সহজভাবে বলতে গেলে, মহাবিস্ফোরণের পর মহাবিশ্ব যখন দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছিল তখন এটি ঠান্ডাও হচ্ছিল। তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট মানের নিচে নেমে যাওয়ার পর একটা অদৃশ্য অথচ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত ফিল্ডের আবির্ভাব হয়, যার নাম হিগস ফিল্ড। আর এই ফিল্ডের সঙ্গে যুক্ত কণাটির নাম হিগস বোসন। যেসব কণা এই হিগস বোসনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় (Interaction) লিপ্ত হয় তারা ভরপ্রাপ্ত হয় যেমন প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন ইত্যাদি। আর যেসব কণা মিথস্ক্রিয়া করে না তাদের ভর থাকে না, যেমন ফোটন। তার মানে ভরপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য এই কণার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া হতেই হবে। যত বেশি মিথস্ক্রিয়া তত বেশি ভর—এই রকম ব্যাপার আরকি! ১৯৬৪ সালে এই ধারণাটি প্রবর্তিত হলেও কণাটিকে ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত পরীক্ষাগারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই বছর বিজ্ঞানীরা সেটি খুঁজে পাওয়ার ঘোষণা দেন। সে জন্য পিটার হিগস নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ২০১৩ সালে। ঈশ্বর কণার খোঁজ না হয় পাওয়া গেল, কিন্তু তাতেই কি সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল? যদি প্রশ্ন করি, কী দরকার ছিল এত কায়দাকানুন করে এই ভর সৃষ্টির? উত্তরটি হয়তো তখন অধিবিদ্যার দিকে চলে যাবে। ভর সৃষ্টি না হলে যেহেতু কোনো কিছুই দৃশ্যমান হয়ে উঠত না, তাই এ কথা হয়তো বলা যায়—নিজেকে দৃশ্যমান করে তোলার জন্যই প্রকৃতি এই ভর সৃষ্টি করেছে। আর সে জন্যই তো প্রকৃতি এত অপরূপ রূপসী সাজে ধরা দেয় আমাদের কাছে!

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা