বিজ্ঞানীদের 'ট্যাক্সি-ফান'

বিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলিকে বলা হতো ‘বুলডগ’...ডারউইনের বুলডগ। কারণ, তিনি ডারউইনের বিবর্তনবাদ সমর্থন করে ডিবেট করতেন বলে তাঁকে কেউ পছন্দ করতেন না...ডারউইনকে তো নয়ই। সেই কারণে তিনি...ডারউইনের বুলডগ। বিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলির একটা মুদ্রাদোষ ছিল, তিনি যেকোনো বিজ্ঞান আলোচনায় কথায় কথায় বলতেন, ‘সব জানার দরকার নেই, একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো করে জানলেই হলো...’

টমাস হাক্সলি একবার বিবর্তনবাদ নিয়ে ডিবেট করতে যাচ্ছেন কোনো একটা হলে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। তিনি ট্যাক্সিতে উঠে বললেন, ‘জোরসে চলো’। ট্যাক্সিচালক তাঁকে চিনলেন এবং বিজ্ঞানীর কথামতো জোরসে ছুটলেন। হাক্সলির হঠাত্ মনে হলো। আরে, আমি কোথায় যাব সেটা তো ট্যাক্সিচালককে বলা হয়নি। তিনি চিত্কার করে বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ চালকও চেঁচিয়ে বললেন, ‘সব জানার দরকার নেই, একটা নির্দিষ্ট বিষয় ভালো করে বুঝেছি জোরসে ছুটতে হবে...!’

ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে বিজ্ঞানীদের গল্প কিন্তু কম নেই এবং গল্পের ধরনও প্রায় একই। সেই যে আরেক বিজ্ঞানী হাইজেনবার্গ, তিনিও তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব (অনিশ্চয়তার সূত্র) নিয়ে আলোচনা করতে যাবেন শহরের এক নামীদামি হলে। তাঁরও দেরি হয়ে গেছে, কোনো ট্যাক্সি পাচ্ছেন না। যা-ও একটা পেয়েছেন, সেই ট্যাক্সিচালক অসুস্থবোধ করছেন। এই মুহূর্তে ট্যাক্সি চালাতে তিনি অনিচ্ছুক। হাইজেনবার্গ তাঁর পরিচয় দিয়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন পৌঁছে দিতে। তখন তিনি বললেন, ‘দেখুন আপনার মতো বিজ্ঞানীকে নিয়ে যেতে পারলে আমার ট্যাক্সি ধন্য হতো কিন্তু আমি সত্যিই অসুস্থ।’

‘সে ক্ষেত্রে তুমি পেছনে বসো আমি চালিয়ে নিয়ে যাই। ভাড়া তুমি ঠিকই পাবে,’ বললেন বিজ্ঞানী।

‘বেশ।’  রাজি হলেন ট্যাক্সিচালক।

বিজ্ঞানী গাড়ি চালিয়ে ছুটলেন হলে। পৌঁছানোর পর সাংবাদিকেরা সব ছুটে এলেন। তাঁরা ভাবলেন পেছনে বসা লোকটিই বোধ হয় হাইজেনবার্গ।

‘জনাব আজ কী বিষয়ে বক্তব্য দেবেন বলবেন কি?’ সাংবাদিকেরা জানতে চাইলেন।

‘সেটা বরং আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করুন’, গম্ভীর হয়ে বলেন ট্যাক্সিচালক।

দান দান তিন দান। এটাও ট্যাক্সিচালক বনাম বিজ্ঞানী। সম্ভবত আইনস্টাইনকে নিয়েই গল্পটা। তিনি ট্যাক্সিতে উঠেছেন। হয়তো তিনিও বক্তৃতা দিতেই যাচ্ছেন কোনো হলে। ট্যাক্সি ছুটছে। একসময় ট্যাক্সিচালক তাঁর দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘স্যার দেখুন তো নোটিশটায় কী লিখেছে।’

নোটিশের লেখাগুলো খুবই ছোট বলে আইনস্টাইন বললেন, ‘দুঃখিত, আমি পড়তে পারি না।’

বিরক্ত ট্যাক্সিচালক কাগজটা ফেরত নিয়ে বিড়বিড় করে বললেন, ‘ওহ দেখতে তো পুরা আইনস্টাইনের মতো মহাজ্ঞানী! এখন দেখি আমার মতোই মূর্খ, পড়তেও জানে না!’

লেখক: কার্টুনিস্ট, কথাসাহিত্যিক