বই পড়ি মন গড়ি

দ্বৈত নৃত্যে ভৈরবসভার প্রপা ও প্রীতি
দ্বৈত নৃত্যে ভৈরবসভার প্রপা ও প্রীতি

বইয়ের মোড়ক ও দেয়াল পত্রিকা দিয়ে সাজানো মিলনায়তন। মঞ্চের এককোণে শেলফে রাখা সারি সারি বই। ছবি তোলার স্ট্যান্ডেও লেখক ও বইয়ের প্রচ্ছদ। যে তোরণটির ভেতর দিয়ে বন্ধুরা মিলনায়তনে প্রবেশ করেছেন, ওই তোরণটির নাম ‘বই প্রবেশ’। বন্ধুদের গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্রে স্থান পেয়েছে পছন্দের বইয়ের নাম। এককথায় বই আবহে সেজেছিল ভৈরবের ভেনিস বাংলা কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তন। ৬ অক্টোবর। বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ ও ভৈরব বন্ধুসভার আয়োজনে ‘পাঠক পার্বণ’ নামে বইপড়ুয়াদের ব্যতিক্রমধর্মী সম্মিলন। দিনব্যাপী চলে পাঠকদের এই মিলনামেলা।

অনুষ্ঠানে অংশ নেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ, ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কটিয়াদী ও ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। এ ছাড়া স্থানীয় হাজী আসমত কলেজ, সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজ, রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ ও রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীও পাঠক পার্বণে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাই বই হাতে বই পড়ার শপথ নেন। সমবেতভাবে পরিবেশন করেন জাতীয় সংগীত। শপথ পড়ান জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি শিহাব জিসান ও ভৈরব বন্ধুসভার সাহিত্য সম্পাদক রাসেল আহমেদ মোল্লা। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ভৈরব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা, ভৈরবসভার সভাপতি আরাফাত ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম।

বই পড়ি, মন গড়ি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বই হাতে নিয়ে আজীবন বই পড়ার শপথ নেন বন্ধুরা
বই পড়ি, মন গড়ি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বই হাতে নিয়ে আজীবন বই পড়ার শপথ নেন বন্ধুরা

সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন বলেন, ভৈরবসভা কয়েক বছর ধরে নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন করে চলেছে। মুদ্রিত বই পড়ার মতো কঠিন বিষয়টিকে তারা সহজ করে তুলেছে। এই উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাঠক পার্বণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। পাঠক পার্বণ বন্ধুসভার নতুন উদ্যোগ।
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রশীদুল হাসান বলেন, ভৈরবসভা দেড় বছরে যে ৪২টি বই নিয়ে পাঠচক্র করেছে, এর মধ্যে ২৪টি বই খুবই প্রয়োজনীয়। ডা. ফারহানা মোবিন বলেন, নিজেকে জানতে, বুঝতে ও নিজের বিকাশ ঘটাতে বই পড়ার বিকল্প নেই।ভৈরবসভার ১১ বন্ধুর অংশগ্রহণে ‘গ্রন্থের নায়ক-নায়িকারা’ শিরোনামে ব্যতিক্রমধর্মী ফ্যাশন শো সবার নজর কাড়ে। অংশ নেন তুষার, শ্রাবণী, মোহনা, তানিয়া, নাফিস, প্রীতি, অর্ণব দাস, শরীফ, স্নিগ্ধা, প্রপা ও সিয়াম। ভৈরবসভার সামিয়া সিদ্দিকা ও জ্যোতি রোজানা অকপটে স্বীকার করলেন, ঘরে শেলফভর্তি বই থাকলেও খুলে দেখা হয়নি। বন্ধুসভায় এসে ও পাঠচক্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
বই নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

পাঠক পার্বণ অনুষ্ঠানটির সহযোগী নূর ইকো ব্রিকস
পাঠক পার্বণ অনুষ্ঠানটির সহযোগী নূর ইকো ব্রিকস

সেলফির নেতিবাচক দিক নিয়ে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার রিফাতের পরিবেশিত মূকাভিনয় দর্শকনন্দিত হয়। চট্টগ্রাম বন্ধুসভার ফয়সাল জাদু প্রদর্শন করেন। নাটিকা মঞ্চায়ন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্ধুসভার অমি ও তানজিম। আমির হামজার কণ্ঠে ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’ দেশাত্মবোধক গানটি সবাইকে আবেগতাড়িত করে। নরসিংদী বন্ধুসভার অর্পা ভৌমিক, ভৈরবসভার তানশি, তূর্য্য, প্রপা, প্রীতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তানজিম একক নাচ পরিবেশন করেন। দন্তস্য রওশনের বেশ কয়েকটি অণুকাব্য পাঠ করেন নয়ন আহমেদ। বিকেল সাড়ে ৪টায় ভাঙে পাঠকদের মিলনমেলা। বছরব্যাপী ভালো বই পড়া ও উপহার দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন বন্ধুরা। অনুষ্ঠানটির সহযোগী ছিল নূর ইকো ব্রিকস।