ফুলদা

জীবনের শুরু থেকে যে মানুষটি আমার আঙুল ছুঁয়ে আলোর পথে হাঁটতে শিখিয়েছেন, তিনি হলেন আমার দাদা। দাদার নাম অসীম রায়। তিনি আমার আদর্শ, আমার অনুপ্রেরণার উৎস এবং শিক্ষাগুরু।

আমার হৃদয়ের সবটুকু জায়গা জুড়ে আছেন আমার দাদা। যিনি সত্যিকার অর্থেই একজন অসাধারণ গুণসম্পন্ন ভালো মানুষ। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি মানুষের প্রতি দাদার ভালোবাসা। প্রতিটি মানুষকে নিয়ে তাঁর দারুণ সব ভাবনা। তাঁর স্বপ্নগুলো প্রতিনিয়ত আমায় অনুপ্রেরণা জোগায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং মানুষকে ভালোবাসতে। খুব স্বপ্নবাজ একজন মানুষ আমার দাদা। যিনি প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখতে এবং অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন। মানুষকে প্রচুর বই পড়তে উৎসাহিত করেন। এ প্রচেষ্টা ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের। যার ফলে তিনি শহরের পড়াশোনা শেষ করে চলে আসেন আমাদের গ্রামে। এখানে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নাম দেন ‘শিক্ষার্থী সমাবেশ’। যেখানে সব বয়সের মানুষ বই পড়তে পারবেন।

দাদা খুবই সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ। যাঁকে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি সংস্কৃতিচর্চায় বেশি সময় ব্যয় করতে। ভালোবাসার জায়গা থেকেই তিনি নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন ‘সুরমাঝি’ নামে একটি অসাধারণ গানের স্কুল। খুবই সুন্দর গানের গলা দাদার। দাদার কণ্ঠে গান শোনা আর অমৃত পান করার মধ্যে কোনো তফাত আমি এখনো খুঁজে পাই না।

দাদার হাত ধরেই আমার সংগীতজীবন শুরু। দাদা আমার গানের গুরু। যাঁর শুভকামনায় আমার সুর পূর্ণতা পায়। সব সময় দাদা একটি কথাই বলেন, ‘ভালো মানুষ হও, মানুষকে ভালোবাসতে শিখো, স্বপ্ন দেখো, মানুষকে স্বপ্ন দেখাও।’ আমি খুব সৌভাগ্যবান এই কারণে যে, দাদার মতো একজন মানুষের বুকে আমি দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পেরেছি। এখনো যেদিকে যাই দাদার ভালোবাসা-আশীর্বাদ সব সময় পাই। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন থেকেই দেখতাম এবং দাদার মুখে শুনতাম যে তিনি বন্ধুসভা নামে একটি সংগঠন করেন। সব সময় বলতেন, বন্ধুসভা হচ্ছে ভালো মানুষ গড়ার কারখানা। তখন থেকেই খুব ইচ্ছে ছিল আমিও একদিন বন্ধুসভায় যুক্ত হব। দাদার হাত ধরে কলেজে পড়তে শহরে আসি, তখনই দাদা আমার ইচ্ছেকে পূর্ণতা দান করেন। সেই দাদার হাত ধরেই শহরের প্রথম দিন থেকে আজ অবধি আমি বন্ধুসভার সঙ্গে আছি।

যে মানুষটির ছোঁয়া আমার জীবনের প্রতিটি নিশ্বাসকে করেছে বিশুদ্ধ আর পথচলাকে করেছে সুন্দর, তিনিই আমার সব থেকে প্রিয় এবং ভালোবাসার দাদা। অনেক ভালোবাসি তোমায়, ফুলদা। জীবনপথে এভাবেই পাশে থেকো।

ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা