রাঙামাটি বন্ধুসভার উদ্যোগ

শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য একটি নৌকা দিয়েছেন রাঙামাটি বন্ধুসভার সদস্যরা
শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য একটি নৌকা দিয়েছেন রাঙামাটি বন্ধুসভার সদস্যরা


দীর্ঘ বছর ধরে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন বিপাকে পড়তে হয় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে। সন্তানদের কীভাবে স্কুলে পাঠাবেন—এ নিয়ে অভিভাবকদের দুচিন্তারও যেন শেষ নেই। সেই দুর্ভোগ লাঘব করে দিলেন রাঙামাটি বন্ধুসভার সদস্যরা। ২৪ নভেম্বর রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের খারিক্ষ্যং গ্রামে খারিক্ষ্যং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য একটি নৌকা দিয়েছেন রাঙামাটি বন্ধুসভার সদস্যরা। নৌকা পেয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা খুবই খুশি।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ঘাটে বন্ধুসভার সদস্যরা নৌকাটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার চাকমা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পূর্ণ সাধন চাকমার হাতে বুঝিয়ে দেন। এ সময় রাঙামাটি বন্ধুসভার সভাপতি শিপন চাকমা, সহসভাপতি পূর্ণা চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপান্বিতা চাকমা, যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক ভুবন জ্যোতি চাকমা, অর্থ সম্পাদক সোনিয়া চাকমা, যুগ্ম সম্পাদক মিঠু চাকমা, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ইন্দু ভূষণ চাকমা, সদস্য কেয়া চাকমা ও মো. নাঈদ। এ ছাড়া প্রথম আলোর রাঙামাটি প্রতিনিধি সাধন বিকাশ চাকমা, আলোকচিত্রী সুপ্রিয় চাকমা, উপদেষ্টা সুনেন্টু চাকমা ও এলভিল চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য একটি নৌকা দিয়েছেন রাঙামাটি বন্ধুসভার সদস্যরা
শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য একটি নৌকা দিয়েছেন রাঙামাটি বন্ধুসভার সদস্যরা


বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে খারিক্ষ্যং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে ৫৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক শিশুকে নৌকাযোগে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। আর শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। বিদ্যালয়ের আশপাশে পাঁচটি গ্রাম রয়েছে। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের অসুবিধার কারণে অভিভাবকেরা অনেক শিক্ষার্থীকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠানে চান না।

জানা যায়, বন্দুকভাঙা ইউনিয়নে কাপ্তাই হ্রদে একটি দ্বীপে খারিক্ষ্যং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের উত্তর খারিক্ষ্যং ও দক্ষিণ খারিক্ষ্যং দুই গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করে।
প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়ন চাকমা, অরণ্য চাকমা ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রিবেং চাকমা বলে, ‘নৌকাটি পেয়ে আমরা খুবই খুশি। এই নৌকা দিয়ে এখন থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারব।’
অভিভাবক বেবী চাকমা বলেন, ‘প্রতিদিন সন্তানদের কীভাবে স্কুলে পাঠাব, তা নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না আমাদের। নৌকার অভাবে মাঝেমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারত না। নৌকাটি পেয়ে আমাদের সন্তানেরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারবে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পূর্ণ সাধন চাকমা বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের দেওয়া নৌকাটি পেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসবে। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, দুই গ্রামের মানুষও পারাপার হতে পারবে। আমরা ঘাটের নিয়মিত পারাপারের জন্য একজন লোককে দায়িত্ব দেব।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়টি বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপে হওয়ায় শিশুদের বিদ্যালয়ে আসতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শুষ্ক মৌসুমে দুই মাস ছাড়া বছরে ১০ মাস পানি থাকে। যোগাযোগব্যবস্থার অসুবিধা হওয়ায় শিক্ষার্থী বাড়ানো যাচ্ছে না। বন্ধুসভার সদস্যদের দেওয়া নৌকাটির কারণে এখন থেকে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হারও বাড়তে পারে।