মা এবং তাঁর রাগ

আমি আমার মাকে কখনো রাগতে দেখিনি। তার মানে তাঁর কাছে রাগ করার মতো কোনো কাজ করি না এমনটি নয়। বরং প্রতিনিয়ত মাকে যেমন করে জ্বালাতন করি, তেমন জ্বালাতন অন্য কারও পক্ষে সহ্য করা খুব কঠিন। আর আমার মাকে জ্বালাতন করার এই স্বভাবটা নাকি অনেক ছোটবেলা থেকেই।
আমার মাকে জ্বালাতনের একটা ঘটনা বলি। আমার বড় আপার কাছে শোনা সে গল্পটা। আমার বয়স তখন চার কি পাঁচ। আমার এক আত্মীয়র বিয়েকে কেন্দ্র করে আমাদের বাড়িতে রমরমা অবস্থা। আমার মা এবং আমাদের বাড়ির সবাই সেই বিয়েতে যাবে। বিয়েতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে মা নতুন শাড়ি কিনেছেন,শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে বিভিন্ন জিনিস কিনেছেন।

বিয়ের দিন মা অনেক সময় নিয়ে সেজেছেন। সবাই যখন বিয়ের গাড়িতে উঠবে, ঠিক সেই সময় আমি একটা গন্ডগোল পাকালাম। সাধারণত আমার বয়সী ছেলেরা এসব প্রোগ্রামের ব্যাপারে অতি আগ্রহী থাকে। আমি তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। কিন্তু সেই দিন আচমকা আমি জেদ ধরে বসলাম আমি তাদের সঙ্গে যাব না। আর আমি না গেলে আমার মায়ের যাওয়াও হবে না ভেবে পরিবারের সবাই আমাকে নানাভাবে বোঝাতে চাইলেন, কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝলাম না।
আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে এমন চিৎকার শুরু করলাম যে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। আমার এক মামা জেদ থামানোর জন্য আমার হাতে বিস্কুটের প্যাকেট দিল আর আমি সেটা ছুড়ে ফেললাম। প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলতে না ফেলতেই একটা কুকুর এসে সেটা খেয়ে ফেলল। আর তা দেখে শুরু হলো আমার নতুন জেদ। ওই কুকুরের পেট থেকে আমাকে বিস্কুট বের করে দিতে হবে। নতুন বিস্কুটের প্যাকেট দিয়েও আমার জেদ থামানো গেল না।

শেষ পর্যন্ত একমাত্র মা ব্যতীত সবাই বিয়েতে গিয়েছিল। বিয়েকে কেন্দ্র করে মায়ের সব জল্পনা–কল্পনা শেষ হয়ে গেলেও মা নাকি আমার ওপর একটুও রাগ করেননি। তবে আমার এমন রাগহীন মাকে কয়েক বছর আগে আমি ঠিকই রাগাতে পেরেছি। কয়েক বছর আগে আমি এমন একটা অপরাধ করেছি যা শুনে মা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। এমনকি তাঁর হাতের কাছে রাখা একটি লাঠি আমার দিকে ছুড়ে মারেন।
তবে মজার ব্যাপার হলো, লাঠিটি ছুড়ে মারার আগে বারবার আমাকে সরে যেতে বলেন। মার কথা শুনে আমার হাসি পায়। আমি মাকে বলি, সরে যেতেই যদি বলছ তাহলে লাঠিটা মারছ কেন? আমার কথায় এবার মা–ও হেসে ওঠেন। মুহূর্তেই আমার অপরাধ আর মায়ের রাগ, দুটোই শেষ হয়ে যায়।