তাই হও তুমি যা চাও

‘দিবসের শেষ সূর্য/ শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল/ পশ্চিমসাগরতীরে/ নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়—/ কে তুমি?/ পেল না উত্তর।।’ (প্রথম দিনের সূর্য—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

তুমি  অনেক কিছু পারো। অনেক কিছু পারো না। যা পারো না তার জন্য গ্লানি নেই। তুমি যা পারো তা হয়তো অনেকে পারে না। সত্যিকারের আত্মসমালোচনা হবে তুমি কী পারো। এটা দিয়েই  জীবন শুরু করতে হবে। কেউ হয়তো কোনো কিছুর জন্য জীবন বাজি রাখে। সে হয়তো জানেই না, এটা তার জন্য নয়। যা তুমি পারো না, তার জন্য সময় নষ্ট কোরো না। যা পারো তার জন্য গর্ব করো। তুমি গান গাইতে পারো না। ছবি আঁকতে পারো না। এতে জগতের কিছুই আসে যায় না। তুমি ক্রিকেট খেলতে পারো। মানুষের সেবা করতে পারো। এটা নিয়ে অহংকার করো।

একজন মেধাবী শিক্ষার্থী চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবী হতে পারে। তুমি হয়তো লেখক হলেই বেশি ভালো করবে। জীবনের সিদ্ধান্ত ঠিকমতো নিতে হবে। মানুষের কোনো বিষয়কে ছোট করে দেখো না। শ্রদ্ধা হচ্ছে মানুষের বড় গুণ। শ্রদ্ধা, প্রেম ও ভালোবাসা না থাকলে সে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে।

এককভাবে প্রত্যেকে দুর্বল। কিন্তু সমষ্টিগতভাবে আমরা প্রবল। প্রত্যেকে তার নিজের জগতে রাজা। অন্যের সঙ্গে মিলে সে করে অখণ্ড রাজত্ব। এর ক্ষমতা অনেক বেশি। সততার সাধনা নিজের জন্য। অন্যের কাছে বড় করে বলার জন্য নয়। যারা গলা উঁচু করে বলে অন্যায় করি না,  মিথ্যা বলি না, শেষ পর্যন্ত  তারাই এসব করে।

গৌতম বুদ্ধের জীবনের শেষ সময়ে তাঁর শিষ্যরা বলেছিলেন, ‘গুরুদেব আপনি চলে গেলে আমাদের কী হবে।’ বুদ্ধ বলেছিলেন, ‘নিজের প্রদীপ নিজে হও?’ সত্যিকারভাবে যেদিন আমরা নিজেই নিজের প্রদীপ হতে পারব, সেদিনই হবে জীবনের প্রকৃত সফলতা। কারও সফলতা কেউ এনে দিতে পারে না। প্রত্যেককেই তার অর্জনের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়।

সত্যিকারের মানুষ হবে বিনয়ী। কারণ মানুষ পরম কিছুর জন্য সাধনা করতে পারে। কিন্তু তার চূড়ায় যেতে পারে না। যদি কেউ পারে, তবে সে হয়ে ওঠে অতিমানব। বিনয় মানুষকে সত্যিকারের শৈল্পিক করে তোলো। সত্যিকারের মানুষ হওয়ার পথে চালিত করে। যে ভালো গান করে সে গায়ক। অন্য একজন ভালো গান করে এবং বিনয়ী, সে সংগীতশিল্পী। আমাদের সুগায়কের চেয়ে অনেক বেশি দরকার শিল্পীর। যিনি নিজে এবং অন্যকে সাজাতে পারেন, তিনিই শিল্পী। সত্যিকারের মানুষ হবে আত্মবিশ্বাসী।

বিশ্ব মানবসভায় সে অনাহূত নয়। প্রবহমান অনন্ত আনন্দধারায় সে স্নাত হবে। মানুষের দীর্ঘদিনের উপলব্ধি থেকে জন্ম নেয় একধরনের বোধ। বোধ ধারণ করে ন্যায়-অন্যায়, নীতি-দুর্নীতি। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে কিছু বোধ পাল্টে যায়। কিছু বোধ থাকে চিরায়ত, যা সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। যেমন সততা, ন্যায়পরায়ণতা, প্রেম, ভালোবাসা, মূল্যবোধ, অহিংসা ইত্যাদি। জীবনের এসব একান্ত অনুষঙ্গ ছাড়া জীবন পূর্ণতা পায় না।

সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ