আমি ও মা

মা ও সন্তান। অলংকরন: সোহাগ পারভেজ
মা ও সন্তান। অলংকরন: সোহাগ পারভেজ


আজ মা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছেন।
তখন আমি মা–বাবার সঙ্গে একটি গ্রামে বসবাস করতাম। সব সময় মায়ের কাছে ঘুমাতাম। সে বছর অষ্টম শ্রেণি পাস করে উন্নত শিক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো প্রিয় মা-বাবাকে ছেড়ে শহরে এসেছিলাম। দিন শেষে প্রতিদিন রাতে ফোন দিলেই মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠ শোনা যেত।সারা দিন কোনোভাবে কাটিয়ে দিলেও রাতে যখন দেখতেন আমি মায়ের পাশে নেই, তখন মা প্রচুর কাঁদতেন। মাকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে না পেরে আট দিন পরে আবার মায়ের কাছে ফিরে যাই। সেদিন মা আমার অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে পেয়ে মায়ের খুশির সীমা ছিল না। সেদিনের মতো খুশি মাকে আর কখনোই দেখিনি।

এসএসসি পাস করার পর উন্নত শিক্ষার জন্য মাকে রেখে শহরে আসতেই হলো। মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠ আর শুনতে পাইনি।

আমি এখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। মন চাইলেই মায়ের কাছে সব সময় ছুটে যেতে পারি না, কিন্তু প্রতি দুমাসে একবার করে কিছুদিন মায়ের কাছে থেকে আসি।
ডিসেম্বর মাস। প্রতিবারের মতো এবারও আমি মায়ের কাছে যাই, তবে মাত্র দুদিনের জন্য। দুদিন পরে শহরে ফিরে আসার সময় মা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছেন। মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন ‘বাজান, তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়, তোমাকে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না।’
আমি মায়ের কপালে চুমু দিয়ে পাষাণ ছেলের মতো শহরের পথে রওনা দিই। যাত্রাপথে আমার চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছিল। কান্না আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু যখন মনে হলো মমতাময়ী মায়ের থেকে দূরে থেকে পাঁচটি বছর ধরে মাকে আমি কষ্ট দিয়ে আসছি অথচ মা আমার জন্য সব সময় শুধুই দোয়া করছেন, তখন আর কান্না আটকে রাখতে পারিনি।

সদস্য, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা।