লিংকডইন

শাকিব হাসান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সম্প্রতি বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা পাস করেছেন ৪০ জন শিক্ষার্থী। পাস করার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর চাকরি হয়ে গেল একটি স্বনামধন্য সফটওয়্যার কোম্পানিতে। বন্ধুরা অবাক হলো তাঁর এই সাফল্যে। বন্ধুরা জানতে চাইলেন এর পেছনের গল্প। এত দ্রুত তাঁর এই সাফল্য পাওয়ার গল্পটা কী? শাকিব জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে তাঁর একটি প্রোফাইল আছে। জীবনবৃত্তান্ত ও ছাত্রজীবনের সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া, বিভিন্ন ছোট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা, ফটোগ্রাফি, ভিডিও এডিটিং করা, গ্রাফিকস ডিজাইনসহ নানা কাজের নমুনা লিংকডইন প্রোফাইলে শেয়ার করতেন। সেটিই তাঁকে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে সাহায্য করেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইলে আজই লিংকডইনের ব্যবহার শুরু করুন।

লিংকডইন
লিংকডইন

আসুন, জেনে নিই লিংকডইন প্রোফাইল কী এবং কীভাবে কাজে লাগানো সম্ভব এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রার্থীর লিংকডইন প্রোফাইল দেখতে চায়। গুগলে আপনার নাম লিখে সার্চ দিলেই চলে আসবে আপনার প্রোফাইল। এতে করে আপনার কাজ, সম্ভাবনা আর আগ্রহ সম্পর্কে মানুষের জানাটা আরও সহজ হয়ে যাবে।
LinkedIn সবার কাছেই সুপরিচিত একটি নাম। পেশাদারদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি হচ্ছে এই লিংকডইন। পেশাজীবীদের কাছে কাজের এক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হলো লিংকডইন। বর্তমানে করপোরেট জগতে নিয়োগকর্তারা চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ে লিংকডইনের সহায়তা নেন। কারণ একজন কর্মীর সব কটি পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে জানতে লিংকডইনের বিকল্প নেই। চাকরি বদলানো বা নতুন চাকরি পেতেও সহায়ক এই ওয়েবসাইট। শুধু পেশাজীবীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের এই সাইটটি। ২০০৩ সালে রেড হোফম্যান চালু করেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ কোটির বেশি মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করে চলেছেন ক্যারিয়ারে পথচলা সুন্দর করতে। পেশাজীবীদের জন্য তৈরি এই সাইটে ইচ্ছে করলেই নিজের সব তথ্য রাখা যায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা, নিজের কাজের খবর, বর্তমানে যেখানে কর্মরত—এসব তথ্য সহজেই শেয়ার করা যায়। একনজরে কারও সব কটি পেশাগত বিষয় জানতে লিংকডইনের জুড়ি নেই।
বাংলাদেশেও বেশ দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে লিংকডইনের জনপ্রিয়তা।

লিংকডইন ব্যবহার করার উপায়
১. নাম
সাধারণত দেখা য়ায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তাঁদের নাম বিভিন্নভাবে লিখে থাকেন। যেমন রকস্টার আজম, কিং খালিদ ইত্যাদি। কিন্তু লিংকডইনে আপনি সেটাই লিখুন, যেটা আপনার সার্টিফিকেট নাম। যেমন রকস্টার আজম না লিখে, লিখুন মো. আজিজুল আজম। বিষয়টি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমেই আপনার যোগাযোগ দক্ষতা, পেশাদারি ইত্যাদি সম্পর্কে একটি ধারণা গড়ে উঠবে।

২. শিক্ষা
আপনি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হন বা গ্র্যাজুয়েটই হন, আপনার প্রোফাইলের শিক্ষাগত যোগ্যতার অংশে সেটি ফুটিয়ে তুলুন সুন্দরভাবে। আপনার আগ্রহ, দক্ষতা, উল্লেখযোগ্য বিষয় যেগুলো নিয়ে পড়ালেখা করেছেন, সেগুলো তুলে ধরুন। বৃত্তি কিংবা কোনো পুরস্কার পেয়ে থাকলে সেটাও উল্লেখ করুন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকভাবে লেখা আবশ্যক। যেমন কেউ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তাহলে প্রোফাইলে ‘Dhaka University’ না লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল নাম ‘University of Dhaka’ লিখতে হবে। এটা আপনার সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা পাবে।

৩. সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রোফাইলে সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নাম সার্চ করলেই সবার আগে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উঠে আসবে। শুধু আপনার নাম কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেই হবে না, সুন্দর একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিতে হবে, যা দেখে মানুষ আপনার প্রোফাইলে ক্লিক করতে উৎসাহিত হবে।

৪. প্রোফাইল ছবি
লিংকডইন প্রোফাইলে অবশ্যই প্রফেশনাল ছবি দিতে হবে। কারণ ছবি দেখেই আপনার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবে। ছবি দেখেই অনেকে আপনার প্রোফাইল ঘুরে আসতে পারে। ফেসবুক, টুইটারে যেকোনো সাধারণ ছবি দিতে পারেন। কিন্তু লিংকডইনে সব সময়ই প্রফেশনাল ছবি দিতে হবে এবং কভার ফটোতে এমন ছবি রাখার চেষ্টা করতে হবে, যা দেখে মানুষ আপনার কাজ সম্পর্কে একটি ধারণা পাবে। যেমন কোথাও বক্তব্য দেওয়ার ছবি থাকলে সেটি দর্শকের মনে আপনার আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বগুণ এবং যোগ্যতা সম্পর্কে ইতিবাচক ছাপ ফেলবে।

৫. অভিজ্ঞতা
এবার আসি আসল কথায়! কাজের অভিজ্ঞতা। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা লিংকডইন প্রোফাইলকে অনেক সমৃদ্ধ করে। অভিজ্ঞতার জায়গাটি একদম খালি না রেখে আপনি কী কী কাজ করেছেন, সেগুলো উল্লেখ করুন। অনেকেই কোচিং সেন্টারে পড়ান, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ছোটখাটো ইন্টার্নশিপ করেন। এ ছাড়া অনলাইনে লেখালেখি, ভিডিও বানানো, ছবি তোলা, গ্রাফিক ডিজাইন করা ইত্যাদি নানা রকম কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে—আপনি এমন কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে অভিজ্ঞতার জায়গায় সেগুলো তুলে ধরুন। এমনও হতে পারে, কোনো একটি অভিজ্ঞতার কারণে আপনার জন্য দারুণ কোনো চাকরির সুযোগ অপেক্ষা করছে।

৬. যোগাযোগ তথ্য
যোগাযোগের জন্য একটিমাত্র ই-মেইল ব্যবহার করুন। অনেকেরই কয়েকটি ফোন নম্বর বা ই–মেইল অ্যাকাউন্ট থাকে। কিন্তু একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে, যেখানে আপনাকে সব সময় পাওয়া যাবে। সেই ই–মেইলটি প্রতিনিয়ত চেক করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কোনো মেইল এলে দ্রুত রিপ্লাই দিতে হবে। দ্রুত রিপ্লাই পেলে প্রাপকের মনে আপনার পেশাদারি ও দক্ষতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
বাসার যে ঠিকানা ব্যবহার করবেন, তা একেবারে যাচাই করে সুন্দর করে করুন। বাসা পরিবর্তন হওয়ার সময় তা আপডেট করুন।

৭. গ্রুপে জয়েন
প্রসার বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন করার বিকল্প নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হচ্ছে, বেশির ভাগ গ্রুপই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয় না। লিংকডইনে প্রতি সেকেন্ডে গ্রুপ তৈরি হয়। গ্রুপে কানেকশন তৈরি অনেক বড় একটি দক্ষতা। তাই সঠিক গ্রুপ নির্ধারণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও এটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাচাই-বাছাই করে আপনার পেশা, দক্ষতা ও আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রুপগুলোয় যোগ দিন। গ্রুপে সদস্য যত বেশি হয়, তত ভালো। কানেকশন রিকোয়েস্ট করার সময় ভদ্রতামূলক মেসেজ প্রদান করুন। ভালো গ্রুপে একটি পোস্টই আপনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে।

৮. কি-ওয়ার্ড
আপনার দক্ষতাগুলোর বিবরণ দেওয়ার সময় বিভিন্ন ‘কি-ওয়ার্ড’ ব্যবহার করুন। আপনার নিয়োগকর্তা কী কী দক্ষতা প্রত্যাশা করবেন আপনার কাছে, সেগুলো কি-ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন। তাহলে নিয়োগকর্তা আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট—যেখানেই থাকুন না কেন, লিংকডইন প্রোফাইল লিংকটি দিতে ভুলবেন না। এর মাধ্যমে নতুন নতুন মাধ্যম থেকে নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।
সবশেষে নজর দিন আপনার প্রোফাইলটি পড়তে এবং দেখতে ভালো লাগছে কি? বানান, ব্যাকরণ ইত্যাদি যাচাই করে দেখুন, দীর্ঘ ও কঠিন বাক্য এড়িয়ে চলুন। তা নাহলে অনেকে বিরক্ত হয়ে পুরোটা না পড়েই আপনার প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

অর্থ সম্পাদক, প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ

লেখাটি তারুণ্যের অষ্টম সংখ্যা থেকে নেওয়া