শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন

শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন
শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন


সংবাদপত্রের পাতায় এবং টিভির পর্দায় চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তারের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের খবরটি পড়ার পর ভৈরবসভার বন্ধুরা প্রতিবাদে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করছিল। ভাবনায় সবাই যখন স্থির, তখনই কেন্দ্রীয়সভার সভাপতি দন্ত্যস রওশনের ফোন। একই তাগিদ তাঁর পক্ষ থেকেও। এ ক্ষেত্রে তিনি সময় দিতে রাজি নন। তাঁর নির্দেশ, এখনই সড়কে নামতে হবে। তাঁর মতে, এই ইস্যুতে তারুণ্যের প্রতিবাদ খুবই জরুরি। শেষে শাহিনুর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার বন্ধুরা সড়কে নেমে আসে এবং হাতে হাত রেখে মানবপ্রাচীর রচনা করে। বৃহস্পতিবার ভৈরবসভার তারুণ্যের এই প্রতিবাদী মানবপ্রাচীরে অংশ নেন স্থানীয় চিকিৎসক, নার্স, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের অন্তত দুই শ মানুষ।

শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন
শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন


কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন হয় ভৈরবের প্রধান পৌর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। একে তো রমজান মাস, তার ওপর প্রচণ্ড দাবদাহ। সবকিছু উপেক্ষা করে বেলা এগারোটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর বারোটা পর্যন্ত চলে কর্মসূচি।
পুরো আয়োজন সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ভৈরব অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) আসমানা বেগমের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে অংশ নেন বেশ কয়েকজন নার্স।
আসমানা বলেন, যখন চিন্তা করি, কয়েকজন নরপিশাচ মিলে প্রথমে শাহিনুরকে ধর্ষণ করে, পরে নিশংসভাবে খুন করে, তখন আর কিছুই ভালো লাগে না। অপেক্ষা কখন সেসব নরপিশাচদের করুণ পরিণতি দেখব।
আনোয়ারা জেনারেল হাসপাতাল থেকে দশজন নার্স কর্মসূচিতে অংশ নেন। নার্স উম্মে কুলসুম বলেন, ঘরে বাইরে নারীরা যে এখনো নিরাপদ নয়, শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো।
মেয়র ফখরুল আলম বলেন, অর্থনৈতিক সূচকে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে বেশ। অবকাঠামো উন্নয়নও দৃশ্যমান। কিন্তু কোনোভাবেই কমছে না সামাজিক অস্থিরতা। এই জায়গাতে ইতিবাচক অগ্রগতি না হলে স্বাভাবিক সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন
শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন


ভৈরব ডক্টর ক্লাবের সভাপতি আজিজুল হকের ভাষ্য ছিল, সমাজের নানা সেক্টর এখন অবক্ষয়ের শিকার। এর মধ্যে সম্প্রতি বড় আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে গণপরিবহনে। বাজিতপুরে চলন্ত বাসে শাহিনুর হত্যা সামাজিক অবক্ষয় ও অস্থিরতার বড় ক্ষত হয়ে থাকবে।
শাহিনুর হত্যা চিকিৎসা সেক্টরের কর্মরতদের বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বলে উল্লেখ করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জালাল আহমেদ। একই মন্তব্য করেন ডক্টর ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এন কে জাহাঙ্গীর।
শাহিনুরের খুনিদের মুখোশ উন্মোচন করতে হলে গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলে মনে করিয়ে দেন স্থানীয় টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ আমিন।

শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন
শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভৈরবসভার মানববন্ধন


রিপোটার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দিনের মতে, শাহিনুরের করুণ পরিণতির জন্য সরকার ও সমাজব্যবস্থা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
তারুণ্যের এই প্রতিবাদী আয়োজনটি করার জন্য প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য আবদুল্লাহ আল মাছুম বন্ধুসভার কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
মানবপ্রাচীরে ২৫ সদস্যের একটি বড় বহর নিয়ে অংশ নেয় হাজি আসমত আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম জানালেন, নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে আজকের উন্নয়ন কোনোভাবেই টেকসই হবে না।
অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক ভৈরব শাখার ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান মুন্না, যৌতুকবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জুম্মা খান নিয়াজী, ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা জাহিদুল হক।
পরবর্তী প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি রাখার আহ্বান জানিয়ে এবং অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ভৈরবসভার সহসভাপতি প্রিয়াংকা কর্মসূচির শেষ করেন।
সাধারণ সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা