মা, অনেক ভালোবাসি তোমায়

স্মৃতি দাস, আমার মা। যে মানুষটিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। অথচ তাঁকেই কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি ভালোবাসার কথা। আমার মা শুধু আমার ভালোবাসা-মমতার জায়গা নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার৷ আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সব সময় ছায়ার মতো পেয়েছি যাঁকে। আমার মা আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণা। অনেকের কথাই আয়োজন করে বলা হয়। কিন্তু মায়ের কথা কখনো বলা হয় না আয়োজন করে।

পড়াশোনার জন্য প্রায় ছয় বছর ধরে পরিবার ছেড়ে সিলেটে একা থাকছি। এই ছয় বছরের প্রতিটি দিন নিয়ম করে যাঁকে আমার পাশে পেয়েছি, তিনি আমার মা। শত কিলোমিটার দূরে থেকেও যেন সারাক্ষণ আমার সঙ্গেই আছেন। এমন দিন খুব কমই এসেছে যে আমাকে মায়ের মুঠোফোনে কল করতে হয়েছে। যতই কাজে কিংবা অসুবিধায় থাকুক না কেন, ঠিক সময়মতো আমায় মুঠোফোনে কল আসবেই মা লেখা কিংবা বাবা লেখা মোবাইল নম্বর থেকে।

যখন নিজের মোবাইলে ব্যালান্স থাকে না, তখন বাবার মোবাইল থেকে কল করেন। আর নাহয় নিজের মোবাইল থেকেই কল করেন। মেসে থাকার কারণে অনেক সময় ঠিকমতো খেতে পারি না। আমার খাওয়া নিয়েও তাঁর চিন্তার শেষ নেই। কিংবা কোনো কারণে বাইরে থেকে আমার মেসে ফিরতে দেরি হলেও তাঁর চিন্তার শেষ নেই। বারবার কল করে জানতে চাইবেন। মায়ের কল দেওয়ার সময়টা মোটামুটি নির্দিষ্ট করা। এই সময়ের মধ্যে কল না এলে অনেক সময় নিজেই অস্থিরতায় ভুগি। চিরচেনা কলের অপেক্ষায় থাকি। কয়েক মাস পরপর যখন বাড়িতে যাই, তখন আমায় ঘিরে তাঁর আদরযত্ন কে দেখে! যত প্রিয় খাবার আছে, পারেন তো সবই খাইয়ে দিবেন। বাবার সামান্য আয়, তা-ই দিয়ে তিনি সংসারের ভরণপোষণ করেন। এ নিয়ে মা কিংবা বাবার কোনো আফসোসও নেই। সব সময় আমাদের ভাইবোনদের প্রায় সব সাধ-আহ্লাদ পূরণ করার চেষ্টা করেন। নিজেরা কষ্ট ভোগ করেন, তবুও আমাদের সুখে-শান্তিতে রাখার চেষ্টা করেন। আমার মা খুব স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। সুন্দর আগামীর স্বপ্ন। তাঁর সন্তানেরা ভালো কিছু করবে সেই স্বপ্ন।

গত দুই বছর আগের দুর্গাপূজায় টিউশনি করে উপার্জিত টাকায় বাবার জন্য শার্ট এবং মায়ের জন্য শাড়ি কিনেছিলাম। সেদিন আমার কাছ থেকে নতুন শাড়ি পেয়ে মা যে কতটা খুশি হয়েছিলেন তা আমি ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলাম। সবাইকে নতুন শাড়ি দেখাচ্ছিলেন। খুশিতে চোখজোড়া টলমল করছিল। মায়ের এই সুখের মুহূর্ত দেখে আমি নিজেও যেন স্বর্গীয় সুখের চেয়ে অধিক সুখ অনুভব করছিলাম। আমার মায়ের হাসিখুশি মুখটাই প্রায় সব সময় দেখি। তাই কোনো কারণে মাকে কষ্টে থাকতে দেখলে নিজে কতটা কষ্ট অনুভব করি তা হয়তো লিখে প্রকাশ করতে পারব না। একইভাবে আমার কষ্টে মা কষ্ট পান, আমার সুখে মা হাসেন। আমি কাছে থাকলে মনে হয় মা যেন স্বর্গ পেয়ে গেছেন। মায়ের মতো পৃথিবীর অন্য কেউই আমাকে ভালোবাসতে পারেন না, আমায় বুঝতে পারেন না। মাকে যেমন আমি অনেক ভালোবাসি, তেমনি মায়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলোও আমি অনেক ভালোবাসি।

আমার মা আমাকে কখনো উচ্চকণ্ঠে শাসন করেন না। ভুল কিছু করে ফেললে সেটা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেন। শুধু যে আমার সঙ্গে এমনটা করেন তা না। সবার সঙ্গেই তিনি এমন আচরণ করেন। কেউ তাঁর মতের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সরে আসেন। তর্ক করবেন না কিংবা কারও সঙ্গে কখনো ঝগড়ায় লিপ্ত হবেন না। খামোকা মনোমালিন্য মা একেবারে পছন্দ করেন না। সবার প্রতিই তাঁর সহানুভূতিশীল আচরণ দেখান সব সময়।
আমার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা হচ্ছেন আমার মা। আমার মা আমাকে সাহসী হতে শেখান, আমাকে স্বপ্ন দেখতে শেখান।