আমার গর্ব

ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি কাজে আমাকে সাপোর্ট করে আসছেন আম্মা। আমার একজন ভালো বন্ধু তিনি, অকপটে অনেক কথা তাঁর সঙ্গে বলি। প্রতিটি আবদারে কখনো তাঁকে বিরক্ত হতে দেখিনি। প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির পর খুব একটা ভালো ছাত্র ছিলাম না, তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর আম্মার পরিচর্যায় আমি হয়ে উঠলাম ক্লাসের ভালো ছাত্রদের একজন। ২০০৩ সালের একটা ঘটনা বেশ মনে পড়ে, তা হলো তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি, সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাসে ম্যাডাম আমাদের প্রশ্নের উত্তর লিখতে দিলেন, সবার উত্তরপত্র দেখার পর, ম্যাডাম আমার লেখার খুব প্রশংসা করেন। তখন ক্লাস ক্যাপ্টেন এসে জিজ্ঞেস করে, ‘এই নাহিদ, তুমি কোন গাইড থেকে লিখেছ? আমার গাইডে তো এভাবে লেখা নেই।’ তখন আমি বেশ গর্ব করেই বলেছিলাম, ‘কোন গাইড থেকে নয়, এটি আমার আম্মা নোট করে দিয়েছেন।’

এভাবে আম্মার পরিচর্যায় আমি পড়াশোনায় ভালো করতে শুরু করি। তিনি বইয়ের লাইন পড়তেন আমি শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলতাম। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে যখন বৃত্তি পেয়েছিলাম সবার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন আম্মা, সবার সঙ্গে আমার বৃত্তি পাওয়ার খবর গর্ব করে বলতেন।

ছোটবেলায় ডানপিটে ছিলাম। বাবা যখন শাসন করতেন, তখন সবার আগে ঢাল হয়ে আমায় আড়াল করে তিনি দাঁড়াতেন। আম্মা সব কাজে আমার সাহায্যকারী, জগতের সেরা অনুপ্রেরণার কথাগুলো তাঁর কাছেই পাই। তিনি উদ্যমী, পরিশ্রমী, বিচক্ষণ। আমি যদি তাঁর মতো বিন্দু পরিমাণ হতে পারতাম তাহলে হয়তো তিনি আমাকে নিয়ে চিন্তা একটু কম করতেন। আমি চাই আম্মার মতো হতে। বইয়ের পাতায় যোদ্ধাদের গল্প শুনেছি, টিভি-মুভিতে দেখেছি, কিন্তু বাস্তব জীবনে আমার কাছে আসল যোদ্ধা হলো আম্মা। বউ হয়ে আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকে তাঁকে নানা বাস্তবতা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি কখনো দমে যাননি, চেষ্টা করে গিয়েছেন। তাঁর আপ্রাণ চেষ্টার ফলেই আমাদের ছোট্ট ঘরটা আজ বড় একটি ঘরে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ আম্মাকে খুশি করতে পেরেছিলাম ২০১২ সালে, তখন আমি সেমিস্টার পরীক্ষার ভালো রেজাল্ট করি। এখন আমার আম্মা আগের মতো তেমন হাসেন না, সংসারের নানা ধরনের জটিলতায় তাঁর হাসিটা মলিন হয়ে যাচ্ছে। আমার একটি স্বপ্ন হলো আম্মার মুখে আবারও সেই হাসিটা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া। আর সেই জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আম্মাকে মুখ ফুটে কখনো বলতে পারিনি ভালোবাসি, এবার আম্মাকে বলব ‘আম্মা আপনাকে খুব ভালোবাসি, আপনার মুখে আবারও হাসি দেখতে চাই, আমি যোগ্য হব, আপনার সব স্বপ্ন পূরণ করব। ভালোবাসি আম্মা।’
সহসভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা