মহামহীয়সী নারী

‘এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে যাঁর ছায়াতলে আপনি একবিন্দু দ্বিধা না করেই সারা জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন সেই মহামহীয়সী নারীটিই হচ্ছেন, তোমার, আমার, আপনার, মা।’ মাকে নিয়ে পাতার পর পাতা লিখলেও মনে হবে, এই যা! আরও তো কিছু লিখাই যেত! এর অর্থ, আমার ছোট্ট লেখা দিয়ে আপনাকে সন্তুষ্ট করা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু তাই বলে কী লিখব না? অবশ্যই লিখব। কারণ, মাকে নিয়ে লিখা সবচেয়ে সহজ।

দুনিয়ার সব মা-ই এক। সব মায়ই তাঁর সন্তানকে একই রকম ভালোবাসেন। এবং এটা যে শুধু মানব প্রজাতিতে সীমাবদ্ধ তা–ও নয়, সব প্রাণিকুলে লক্ষ করলেও এই ধারা অব্যাহত দেখতে পাবেন। অক্সিটসিন হরমোনের দরুন সব মা-ই একই রকমের আবেগ অনুভব করেন তাঁর সন্তানের প্রতি। সন্তান তাঁর নিজের শরীরের একটি অংশ। এবং এমন একটি অংশ যার নিজস্ব সত্তা আছে, চিন্তাভাবনা কিংবা বিবেচনাবোধ আছে। আর এ জন্য মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত অবদি মা সন্তানকে আগলে রাখতে চান। সন্তানের ওপর মায়াজাল সৃষ্টি করে তাঁর প্রতি পদক্ষেপে নিঃস্বার্থভাবে সেবার চাদর ছড়িয়ে দেন জগতের প্রতিটি মা। যে সেবার কোনো বিনিময়মূল্য নেই।

সন্তান চাইলেও কখনোই তাঁর ঋণ শোধ করতে পারবে না। অবশ্য কোনো মা-ই এই ভেবে সেবা করেনও না যে, তাঁর সন্তান একদিন তাঁর ঋণ শোধ করবে। যদি এমনটিই করতেন, তবে এ ক্ষেত্রে কখনোই ‘সেবা’ শব্দটি উল্লেখ করতে পারতাম না। আর এই সরলতাকেই খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে অনেক নির্বোধ সন্তান। জীবনের একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে তারা এই মমতাময়ী মানুষটিকে একা ফেলে চলে যায়, বিভিন্ন জাগতিক আকর্ষণে প্রলুব্ধ হয়ে।

একটিবারের জন্যও নিজের বিবেক খরচ করে না, তার আজ এই পর্যায়ে আসার পেছনে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? সে নিজে? না, তার জন্মদাত্রী মা? আজকাল পত্রিকা খুললেই বড় বড় শিরোনামে চোখ পড়ে, কারও মা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পথে পথে, কেউ বৃদ্ধাশ্রমে বছরের পর বছর পার করছেন, আবার অনেকে মাজারের ধুলোতে শুয়ে শুয়ে গুনগুন করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন, তাঁর সন্তানটা যেন আরেকটু ভালো থাকে। এবং তাই–ই হয় সন্তানের ভালো থাকার পরিমাপ দিন দিন বাড়তে থাকে। আর বেচারী মা রোদে-কষ্টে পুড়ে একদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অনেকের তো কবরটাও সন্তান দিয়ে হয় না। হায়, যে তোমাকে পৃথিবীতে আনল তাঁর বিদায়বেলাতেও তুমি অংশগ্রহণ করলে না! সমাজে যে শুধু এই–ই হয়, তা–ও না। এর বিপরীতও হয়। অনেক মা-ই পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এভাবেই একটা ক্রমাগত চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে বেঁচে আছি আমরা। প্রত্যেক সন্তানেরই উচিত তার জন্মদাত্রীর প্রতি আরও সহায় হওয়া। কেউ যদি মনে করে আমি অনেক করেছি, তবে সে ভুল ভাবনা। আগেই বলেছি, এ ঋণ শোধযোগ্য নয়। এ জন্য যত বেশি করে পারুন মায়ের সেবা করুন, নিজের মা না থাকলে অন্য মায়ের সেবা করুন, সব মা-ই এক।

সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর, ঢাকা