মায়ের অনুপস্থিতি ও মনে অস্থিরতা

বুকে অনেক ব্যথা হচ্ছে, বুক ধরফর করছে। প্রেশার মেশিন নিয়ে বারবার প্রেশার মাপছি, পালস দেখছি। প্রেশার ঠিকই আছে। পালসও স্বাভাবিক গতিতে চলছে। তাহলে বুকে কেন এত ব্যথা হচ্ছে? গ্যাস্ট্রিক সমস্যা মনে হয় বেড়েছে; খেলাম গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। আবার কিছুক্ষণ পর ব্যথা; এ রকম ব্যথা তো বুকে হয়নি কখনো, তবে আজ কেন হচ্ছে বারবার! অনেক্ষণ পর বুঝলাম আম্মু তো আজ বাসায় নেই, গিয়েছে বোনের বাসায়। তবে কি আম্মুর অনুপস্থিতি আমার বুকে ব্যথার কারণ? চিন্তাভাবনা না করেই ফোন করলাম।

কিরে বাবা, এত রাতে ফোন দিলি যে, আম্মুর জিজ্ঞাসা? না, মানে এমনি দিলাম। তুমি তো কখনো এত রাত জেগে থাক না? ঘুম ভেঙে গেল তো, ভাবলাম ফোন দিয়ে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছ নাকি আপুর সঙ্গে গল্প করছ! ও আচ্ছা, তুমি ঘুমাও বাবা, আমি ঘুমাব একটু পর; নাতি–নাতনিরা খুবই জ্বালাচ্ছে, নিজেরাও ঘুমায় না আমাকেও ঘুমাতে দেয় না। ফোন রেখে দিলাম।
চোখ দুটো ঘুমে টলটল করছে। বালিশে হেলান দিলাম।

মুয়াজ্জিনের আওয়াজে ঘুম ভাঙল। কিছু বাচ্চা পাখি কিচিরমিচির করছে জানালায়; কখন ভোর হলো? বুকে না অনেক ব্যথা হচ্ছিল, শরীরে না অনেক যন্ত্রণা হচ্ছিল; কোথায় হারিয়ে গেল সেসব কষ্ট ও ব্যথা? কীভাবে এক ঘুমে ভোর হয়ে গেল; কিছুই বুঝতে পারলাম না, আশ্চর্য!

আনমনে বসে মোবাইলের কললিস্ট দেখছি, সবার ওপরে থাকা নাম্বারটাতে লেখা ‘আম্মু’। ও, আম্মুর সঙ্গে তো সবশেষে কথা বলেছি; তাহলে মায়ের সঙ্গে কথা বলাই বুক ব্যথা কমিয়ে আমাকে প্রশান্তির ঘুম উপহার দিয়েছে। প্রশান্তির ঘুম কীভাবে আসে সে রহস্য উদ্ঘাটন করলাম আজ, থাকবে না এখন থেকে আমার রুমে রমরমা ওষুধের সাজ! ওষুধে কাজ হয় না কাজ হয় মায়ের মধুর কথায়, তা বুঝতে পেরেছি রাতের বেলায়।

বলছিলাম, কয়েক দিন আগের কথা। আম্মু গিয়েছিলেন আমার বোনের বাসায়। যাওয়ার সময় বলেছেন, একা একা থাকার অভ্যাস করতে হবে তোমাকে। আম্মুকে বলেছিলাম, বাসায় একলা থাকার মত যথেষ্ট সাহস আছে আমার। আম্মু বললেন, ভালো। কিন্তু আম্মু যখন চলে গেলেন, তখন আমার কোনো কিছুতেই ভয় হচ্ছিল না। শুধু এক অজানা আওয়াজ পাচ্ছিলাম। বাবু, ল্যাপটপে কী করছ, ভাত খাচ্ছ না কেন, অফিসে আজ কোনো সমস্যা হয়নি তো, আমাকে একটু অনলাইনে দেখা তো বাবা সারা বিশ্বে আজ কী কী ঘটল ইত্যাদি? মা সব সময় রাতে এসবই বলে থাকেন আমাকে। সেদিন মা না থাকলেও মায়ের এসব কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল পুরো বাসায়।

আমি বারবার আমার রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমে গিয়ে দেখছি আম্মু নেই রুমে, আম্মু তো নেই বাসায়, তাহলে মায়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে কোত্থেকে? তবে কি এটা আম্মুর আত্মার আওয়াজ? আম্মু বাসায় না থাকলেও আম্মু তাঁর আত্মা বাসায় রেখে গিয়েছেন, যা আমাকে সব সময় দেখভাল করছে, করছে মনিটরিং! এসব চিন্তা করতে করতেই সেদিন বুকে ব্যথা উঠেছিল। মায়ের সামান্য সময়ের অনুপস্থিতি সেদিন অসুস্থ করে তুলেছিল আমাকে। আবার মায়ের সঙ্গে সামান্য সময় কথা প্রশান্তির ঘুমও এনে দিয়েছিল।

মায়ের অনুপস্থিতিতে মনে অস্থিরতা। এর নাম ভালোবাসা। মায়ের সঙ্গে কথা বলে বুকের ব্যথা ভালো হয়ে প্রশান্তির ঘুম চলে আসা এটার নাম মহাভালোবাসা।

কল্যাণপুর, ঢাকা-১২০৭