আমার মামণি

ছোটবেলা থেকেই আমি আর ভাইয়া মাকে মামণি ডাকি।
আমার মা আমার দেখা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ একজন। যতই বাধাবিপত্তি আসে আমাদের জীবনে, মা তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান।
মামণি খেলাধুলায় আর গানবাজনায় ছিলেন অনেক ভালো। আমাদের ঘরময় তাঁর পুরস্কারে ভর্তি। তাঁকে দেখলে এখনো তাঁর স্কুল–কলেজের স্যাররা ঠিকই চিনে ফেলেন। আমার সাংস্কৃতিক জগতে পদচারণ মামণির হাত ধরেই।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, মামণির কথা আমাদের জীবনে ফলে যায়। যদি মামণি বলেন, ‘ছাতাটা নিয়ে যা বৃষ্টি আসবে।’ বাইরে রোদ দেখে আমি হেলা করে কিসের বৃষ্টি বলে ছাতা ছাড়া চলে গেলে দেখি, মায়ের কথা সত্য প্রমাণ করে দিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। তা ছাড়া আমাদের পরীক্ষার ফলাফলও মামণি আগেই বলে দেন।

আমার মা সবাইকে আমাদের নিয়ে এত প্রশংসা করেন, মাঝেমধ্যে নিজেরই হাসি পায়। কিন্তু পরে ভাবি, আমরা কি কখনো কারও কাছে  মায়ের সম্পর্কে কোনো ভালো কথা বলেছি? কিন্তু মামণি সব সময় ভালো কথা বলেন। বাসায় আমি, ভাইয়া আর মা খুব ভালো বন্ধু। আমাদের এমন কোনো কথা নেই, যেটা আমরা একজন আরেকজনকে জানাইনি, বিশেষ করে মামণিকে। মাঝেমধ্যে এমনও হয়েছে, আমাদের কথাবার্তা আর হাসিঠাট্টা দেখে লোকজন মামণিকে আমাদের মা না, বন্ধুই ভেবেছে।

মামণি আমরা ভাইবোন পড়াশোনার জন্য বাসার বাইরে থাকলে একা একা সময় কাটান। তাই আমি তাঁকে একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিই কয়েক মাস আগে। মা এর মাধ্যমে কত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন ভেবে। মাঝেমধ্যে হাসি শুনি। দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আরে ফেসবুকে একজন একটা অনেক মজার পোস্ট দিয়েছে, তাই হাসছি।’ তাঁর হাসিভরা মুখ দেখে সত্যিই ভাবি, আসলে এই মুখে হাসি মানায়, দুঃখ নয়। এই ছোট একটা কাজে তাঁর এত্ত আনন্দ।

মাঝেমধ্যে বাসার বাইরে থাকলে মামণি বারবার ফোন দেন। শুধু আমি ঠিক আছি কি না, তা জানার জন্য। একদিন ফোনে না পেয়ে এত্ত ভয় পেয়েছিলেন যে বাসায় এসে দেখি, পাড়াসুদ্ধ লোক রাস্তায়। যেই আমাকে দেখেছেন, দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘কী চিন্তায় ফেলেছিলি তুই আজকে জানিস। ফোন ধরিসনি কেন?’ এ শুধু মা–ই পারেন। ভাবতেই অবাক লাগে নিঃস্বার্থভাবে তাঁর সব জমানো টাকা আমাদের জন্য খরচ করেন।
আমি যেকোনো জিনিস নির্ধারণ করতে না পারলে মামণি সাহায্য করেন। তাঁর সাহচর্যেই এত দূর আসা। সত্যিই, মা মানুষের জীবনের মহামূল্যবান মানুষ। আর মায়ের জন্য আমরা সন্তানেরা নাড়িছেঁড়া ধন।
মামণি হাজারো মানুষের ভিড়ে তুমিই একজন, যাঁকে আমি চোখবুজে বিশ্বাস করতে পারি। আমার অস্তিত্ব তা তোমার মধ্যেই। কারণে–অকারণে চার অক্ষরের শব্দটাই বলা হয়ে ওঠে না। তাই আজ বলতে চাই, ভালোবাসি মামণি।

সিলেট বন্ধুসভা