'একটি করে রঙিন জামা' বিতরণ রাবি বন্ধুসভার

‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।
‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।


ক্যাম্পাস ছুটি হয়ে গেছে প্রায় দশ দিন আগে। কিন্তু কিছু অদম্য বন্ধু ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি যাননি। তবে তাঁদের বাড়ি না যাওয়ার পেছনে মহৎ উদ্দেশ্য লুক্কায়িত। তাঁরা বেশ কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মুখে হাসির আভা দেখেই বাড়ি যাবেন। অর্থাৎ ‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ কার্যক্রম শেষে তবেই বাড়ি ফিরবেন। শুরু হয়ে গেল আয়োজন। আয়োজনকে সফল করার প্রয়াসে বন্ধুরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কোনো বন্ধু বস্তির গহিনে গিয়ে প্রতিটা শিশুর জামার মাপ নেওয়া, কয়েক বন্ধুর জামা কিনতে যাওয়া, ডেকোরেশন—সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উদ্দেশ্য একটাই, সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া।

‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।
‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।


অবশেষে দিনটি উপস্থিত, অর্থাৎ ১৮ মে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার পাশে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়, যার এক দিন আগে ঝড়ে ক্যাম্পাসের অনেক গাছপালা ভেঙে পড়ে। এ কারণে বিদ্যুতের দেখা সারা রাত পাওয়া যায়নি। পরদিন অনুষ্ঠান নিয়ে সব বন্ধু চিন্তায় কাতর। তবে কি আমাদের প্রচেষ্টা বৃথা যাবে? না, প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। সকাল থেকে আকাশ তার রং পাল্টেছে, আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। পুরোদমে কাজ করে সব বন্ধু অনুষ্ঠানটি শুরু করেন সকাল ১১টায়। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক তারিফ হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার কাছে অনেক কিছু আবদার করতাম। যখন তিনি আবদারগুলো পূরণ করতেন, খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম। সময়ের পরিক্রমায় সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে। অসহায় শিশুগুলো তো কারও কাছে আবদার করতে পারে না। যখন নতুন পোশাক পেয়ে আনন্দে ওরা হাসি দেয়, তখন নিজেকে ছোটবেলার দিনগুলোতে হারিয়ে ফেলি।’
আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে শুধু পড়াশোনায় দায়িত্ব নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও অনেক কাজ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর ঈদ সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনে। নতুন জামা দেওয়ার মাধ্যমে বন্ধুসভা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের যেন আনন্দ উপহার দিল।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মামুন আ. কাইয়ুম বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের এই উদ্যোগ শুধু এই শিশুদের পোশাক দেওয়ার জন্য নয়, তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ফারহান সাহরিয়া বাঁধন। তিনি বলেন, এমন মহৎ কার্যক্রম বন্ধুসভার সদস্যদের দ্বারাই সম্ভব। ঈদে সবার মুখে হাসি ফুটুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর লায়লা আরজুমান বানু বলেন, ভালোর সাথে আলোর পথে প্রথম আলো বন্ধুসভা সব সময়ই ভালো কাজ করে। এমন মহৎ কাজ সত্যিই অনুপ্রেরণার মতো কাজ করে।
বন্ধুসভার উপদেষ্টা প্রফেসর ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, বন্ধুসভা অসহায় মানুষের পাশে আছে সব সময়। ছোট ছোট শিশুদের হাতে যখন ঈদের রঙিন জামা তুলে দেওয়া হয়, তখন তাদের যে খুশি ও অনুভূতি, কোটি টাকার বিনিময়েও তা পাওয়া সম্ভব নয়।

‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।
‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।


বন্ধুসভার বন্ধু গোপাল রায় বলেন, ‘আমার জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার মধ্যে শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা হলো এটি। আমি ভাবতেও অবাক হই, কেননা আমার মতো ব্যক্তিও সুবিধাবঞ্চিত, এতিম, অসহায় শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে এ মহৎ কাজে জড়িত ছিল। আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ তিনি আরও বলেন, রাবি বন্ধুসভাই সম্ভবত সবার আগে রঙিন জামা বিতরণ করছে। এতে আনন্দের মাত্রা আরও বেশি।
ঈদের রঙিন জামা পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী টুম্পা বলে, ‘আমাগো বাপ-মায় গরিব। প্রত্যেক ঈদে নতুন জামা কিনে দিবার পারে না। ভাইয়ারা নতুন জামা দিছে, এইডা পরে ঈদের মাঠে যাব। সবাইকে দেহাবো আমার নতুন জামা।’
ঈদবস্ত্র পাওয়া কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু বলে, ‘ভাইয়ারা বাড়ির মানুষ মুনে কইরি জামা দিচেন। খুব খুশি হয়ছি।’
ক্যাম্পাস ছুটি থাকার কারণে বন্ধুসভার উপসাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন নিজ এলাকায় ১০টি শিশুর রঙিন জামা বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছেন।
এ ছাড়া বন্ধুসভার বন্ধু জয়ী চাকমা তার নিজ এলাকা রাঙামাটিতে কয়েকজন মিলে ১০টি রঙিন জামা বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁকে সহায়তা করবেন আরও তিন বন্ধু টিউলিপ চাকমা, জেনুইন চাকমা, আবৃত্তি চাকমা। এ ছাড়া প্রায় সব বন্ধুই অন্তত একটি করে রঙিন জামা বিতরণের অঙ্গীকার করেছেন।

‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।
‘একটি করে রঙিন জামা’ বিতরণ রাবি বন্ধুসভার।


রঙিন জামা বিতরণ কর্মসূচিতে বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান, দপ্তর সম্পাদক জুবাইর হোসেন চৌধুরী, সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক তারিফ হাসান মেহেদী, পাঠাগার সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক, বন্ধু বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুইটি খাতুন, মো. ওয়াদুর রহমান, সাইদ আহমেদ, গোপাল রায়, ফলিত গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের বন্ধু সিফাত, অর্ণব দাস, জনি আহমেদ, প্রথম আলোর রাবি শাখার প্রতিনিধি তাপস কুমার সরকার। এ ছাড়া যাঁরা সার্বিকভাবে পাশে ছিলেন, তাঁরা হলেন আজিজুর রহমান, মাহমুদ হাসান, জান্নাতুল তামান্না বাকী, খালিদ হোসেন, ওয়ালিউর রহমান রাজীব, প্রদীপ কুমার সরকার, জামিল রায়হান, সাজান হোসেন, রনি আহমেদ, জাকির হোসেন, মিনারুল ইসলাম, আবদুল আলিম।
বন্ধুরা ৪০টি শিশুকে রঙিন জামা বিতরণ করে এবং সিদ্ধান্ত নেন, ২৫ তারিখের আগেই নিজ দায়িত্বে আরও বিতরণ করা হবে।