ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ


মেডিকেলজীবন মানেই আজ পড়া, কাল পরীক্ষা। দম ফেলার অবকাশ নেই। তারই মধ্যে খানিকটা স্বস্তি খুঁজে নিতে আর প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার ৯ জন নারী সদস্য বের হয়ে যাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ভ্রমণে।

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ


ভ্রমণসঙ্গী ছিল ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার বন্ধু পৌলমী অদিতি অন্তরা, জাকিয়া রেজওয়ানা, হাসানাহ মিমি, সুমাইয়া শিমু, জান্নাতুন নাহিদ ইভা, তমা সমদ্দার, স্বর্ণালী আক্তার জ্যোতি, মার্জিয়া আক্তার ও সাবিকুন নাহার। ১৯ জুন রাতে বাসে করে রওনা হই সবাই। একই বাসে করে কক্সবাজার ভ্রমণের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন আরেক দল ভ্রমণপিপাসু লোক। সারা রাত তাঁদের সঙ্গেই গান, আড্ডায় মেতে কেটে যায় পুরোটা সময়।

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ


পরদিন ২০ জুন সকাল ৭টায় সবাই পৌঁছাই কক্সবাজার। গিয়ে হোটেলে ফ্রেশ হয়ে সামান্য কিছু মুখে দিয়েই দে ছুট সুগন্ধা সমুদ্রসৈকতে। সে কী অপরূপ দৃশ্য। ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সৈকতে। দূরে যেন সমুদ্র আর আকাশের নীল মিলেমিশে একাকার। সমুদ্রে নামতে কারও তর সইছিল না, এ যেন অন্য রকম এক আকর্ষণ। ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাসা–ডোবার খেলা। এর মধ্যে কতজন যে কত নোনা পানি খেল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল। তারপর সবাই ঠিক করলাম যত দূর চোখ যায় হাঁটব। ৯ জন মিলে হাঁটা শুরু করলাম অজানা গন্তব্যে। হাঁটতে হাঁটতে দেখি একসময় পা আর চলে না। ঘড়িতে তখন বেলা ৩টা। এদিকে পেট ক্ষুধার জানান দিচ্ছে, কিন্তু এতক্ষণ তা কেউ পাত্তাই দিইনি। তার ওপরে মনে পড়ল বাংলাদেশের খেলাও আছে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তাই পড়িমরি করে ছুটলাম হোটেলের দিকে।

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ


পরদিনের লক্ষ্য সূর্যোদয় দর্শন, প্যারাসেইলিং, হিমছড়ি পাহাড় আর ইনানী সমুদ্রসৈকত দর্শন। পরিকল্পনা অনুসারে ভোররাতেই তৈরি হলাম সূর্যোদয় দেখব বলে। কিন্তু মেঘ বাদ সাধল। চারপাশ কালো হয়ে গেল। কিন্তু সূর্যোদয় আর দেখা হলো না। সকাল সকাল বের হওয়ার ইচ্ছা ছিল।কিন্তু সকাল হতেই শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। আকাশ মেঘলা ছিল আগের দিনও। তবে এভাবে বৃষ্টি ঝরবে তা বুঝতে পারিনি। পরে বের হলাম দুপুরের দিকে। ততক্ষণে মাথার ওপর সূর্য ঝলমল করছে। প্রথমে প্যারাসেইলিং। আমাদের সবার মধ্যে দুজন অসীম সাহসী নারী মিমি ও সিমু সিদ্ধান্ত নিল প্যারাসেইলিং করবে। প্যারাসেইলিং শেষে তারা জানাল, ‘প্রথম প্রথম ভয় লাগলেও পরে এক অসাধারণ অনুভূতি হয়। ওপরে আকাশ কিন্তু মেঘগুলো ছুঁতে পারছি না, নিচে একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে কিন্তু তারা আমায় ছুঁতে পারছে না।’ তাদের এ অভিজ্ঞতায় অন্য বন্ধুরাও সিদ্ধান্ত নিলাম এবার না হলেও আগামীবার যখন কক্সবাজার আসব, অবশ্যই প্যারাসেইলিং করে তবে ফিরব।

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ


এরপর হিমছড়ি। পাহাড়, ঝরনা আর সমুদ্রের অনন্য মেলবন্ধন। ঢুকতেই হিমছড়ির ঝরনা তারপর সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে হিমছড়ি পাহাড়ে ওঠা। ওপরে উঠে পাহাড়ের সঙ্গে সমুদ্রের মিতালি দেখা। আবার নেমে আসা ইনানী সমুদ্রসৈকত যাওয়ার লক্ষ্যে। উদ্দেশ্য সূর্যাস্ত দেখা। পৌঁছে দেখলাম, একই সমুদ্রের সীমানা কিন্তু একেকটা সমুদ্রসৈকতে কত পার্থক্য। দেখলাম প্রবালপাথর। এগুলো যতটা সুন্দর, ততটাই ভয়ংকর। একটু অসাবধান হলেই হাত–পা কাটার সম্ভাবনা। তাতে বন্ধু নাহারের পা খানিকটা কেটেও গেল। কিন্তু সমুদ্রের সৌন্দর্য যেন সব ভুলিয়ে দিল। প্রবালপাথরে বসে সবাই মিলে মেঘের আড়ালের সূর্যাস্তই দেখলাম। ফিরে আসার ইচ্ছা না থাকলেও ফিরে আসতে হলো।

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভার নারী সদস্যদের কক্সবাজার ভ্রমণ


হোটেলে এসে দেখলাম, ঢাকার পথে রওনা হওয়ার আরও কিছু সময় বাকি আছে। তাই আবার সুগন্ধা সমুদ্রসৈকতে চলে গেলাম। বিদায় জানাতে। সৈকতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম বহুক্ষণ। রাতের সমুদ্রের গর্জন শুনলাম, একসঙ্গে গানও গাইলাম। রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক—বাদ গেল না কিছুই। সমুদ্রের বিশালতা, সমুদ্রের গর্জন—সব মিলিয়ে এমন এক অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশের নয়। ফিরে আসতে আসতে যেন কী রকম একটা মন খারাপ এসে ভর করল।

সভাপতি, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ বন্ধুসভা