জল-পাথরের গল্প
সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে পাথর ছুঁয়ে গড়িয়ে আসা স্বচ্ছ জলরাশি, সারিবদ্ধ পাথর তোলার দৃশ্য ধলাই নদকে যেন দিয়েছে অনন্য রূপ। আর ধলাই নদের বুকজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাদা পাথরের সমাহার নজর কাড়তে বাধ্য যে কারোরই। সেই সাদা পাথরের স্বচ্ছ জলে গোসল করে কাটিয়ে দিতে পারেন দারুণ একটি দিন। মার্চ-অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ বেড়াতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়।
লেখাপড়া শেষ! তাই সিলেট শহর ছেড়ে বাড়িতে জমাতে হবে পাড়ি। বাসা থেকে প্রায়ই মুঠোফোনে বলা হয় সিলেট ছেড়ে চলে এসো বাসায়। কিন্তু মনের তো সিলেট শহর ছাড়তে মানা। তারপরও মন অজান্তে রাজি হয়ে যায় সিলেট শহর ছাড়তে। তাই বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম বাড়ি যাওয়ার আগে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে যাব। যেমন চিন্তা তেমন বাস্তবায়ন।
নির্ঘুম রাত কাটিয়ে শুক্রবার সকাল নয়টায় কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তিনটি মোটরবাইককে সঙ্গী করে আমরা ছয়জন বেরিয়ে পড়লাম সাদা পাথরের পথে। সড়কপথে ভোলাগঞ্জ–যাত্রা আমাদের সবারই প্রথম। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে তুলতে যাচ্ছি আমরা। সড়কের অবস্থা ভালো না থাকায় এর আগে সড়কপথে যাতায়াত হতো না। তবে বর্তমানে সড়কপথ সবচেয়ে ভালো। নতুন সড়ক আর দূরে আবছা পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। দেখে যে কেউ মনে করতে পারে, সে ভারতে ঘুরতে যাচ্ছে।
মাত্র ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে পৌঁছে যাই ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর ঘাটে। সেখানে গিয়ে নৌকার জন্য আমাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। পর্যটক বেশি থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় নৌকা ছিল কিছুটা কম। একটি নৌকায় সর্বোচ্চ ১০ জন যাতায়াত করে থাকেন। আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নাম না–জানা আরও চারজন। সবাই মিলে অবশেষে একটি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করি সাদা পাথরের দিকে। নৌকা ভাড়া ৮০০ টাকা।
নৌকায় ওঠার পর চোখে পড়ে শান্ত পাহাড়ের সঙ্গে মিশে থাকা ছোপ ছোপ শুভ্রমেঘ, ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে আর মেঘালয় রাজ্য। এটি দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি এলাকা। ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্বের রোপওয়ে বা রজ্জুপথ। যদিও ১২ বছর ধরে রোপওয়েটি অব্যবহৃত। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় তখন আমাদের নজর কাড়তে ব্যস্ত আর চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছিল সাদা পাথর।
তখন আমরা পা রাখি সাদা পাথরের অসাধারণ এক রাজ্যে। সামনে সবুজ পাহাড়, পাশেই পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া প্রচুর স্রোতের স্বচ্ছ–শীতল জল। সে সময় সাদা পাথরের কী অপরূপ দৃশ্য, তা বলে বোঝানোর নয়! আমরা পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া শীতল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ি, আহা কী ঠান্ডা! একসঙ্গে এত এত সাদা পাথর জীবনে কখনো দেখিনি, ভাবতে ভাবতে আর সাদা পাথর দেখে দেখে, সেই সঙ্গে পাথরজলে গোসল করে সময় এগিয়ে যায়। এভাবে কখন যে পাহাড়ি রোদ তার কোলে আশ্রয় নিয়েছে, বুঝে উঠতে পারিনি। অন্ধকার জেঁকে বসার আগেই সেই অসম্ভব সুন্দরকে জানাই বিদায়!
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
যেকোনো সময়ই ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোক্ষম সময়। ওই সময় বৃষ্টিপাত থাকার ফলে পানির পরিমাণও বেশি থাকে।
কীভাবে যাবেন?
সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটারের মতো। এই পথে কোনো বাস চলাচল নেই, কোনো লেগুনা চলে না। যাতায়াতের একমাত্র বাহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা। বর্তমানে রাস্তাটাও বেশ ভালো। সময় লাগতে পারে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো।
সাদা পাথর ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
* খরচ কমাতে দলগতভাবে যেতে পারেন।
* অটোরিকশা ভাড়া দামাদামি করে নিন।
* পানিতে অনেক স্রোত থাকে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করুন।
* বৃষ্টি হলে অল্প পানির অনেক স্রোতে থাকে।
* সন্ধ্যার আগে অবশ্যই শহরে চলে আসুন।
সিলেট বন্ধুসভা