গাছটা কাটিনি

‘এই জায়গায় বাড়ি করলেই ভালো হবে মা, ইঞ্জিনিয়ার সাহেবও জায়গাটা পছন্দ করেছেন’, দাদিকে আঙুল দিয়ে বাড়ির দক্ষিণ দিকটা দেখিয়ে কথাটা বলল বাবা। দাদি অবাক হয়ে বলল, ‘এই বেলগাছটা তোর বাবা লাগিয়েছিল, ওখানে বাড়ি করলে গাছটা যে কাটতে হবে রে।’ বাবা কথাটা শুনেও না শোনার ভাণ করে উঠে গেল। বাবা পরের মাসেই গাছ কেটে বাড়ির কাজ শুরু করল। দাদি মাঝেমধ্যে গাছটা ঠিক যেখানে ছিল, ওই জায়গাতে গিয়ে বসে থাকত। দেখতে দেখতে বাড়ির কাজও শেষ হয়ে এল। দাদি মনে মনে ওই গাছের কিছু বীজ রেখে দিয়েছিল। তারপরের বর্ষায় দাদি একেবারে বাড়ির একদিকে গিয়ে বীজগুলো ছিটিয়ে দিল। আমরা দুই ভাইবোন প্রতিদিন সকালে গিয়ে দেখি মাটি ভেদ করে কোনো গাছের মাথা দেখা যাচ্ছে কি না। প্রতিদিন যেতাম আর নিরাশ হয়ে ফিরে আসতাম।
বেশ কিছুদিন এমন হওয়ার পর সত্যিই একদিন দেখি দুটো পাতা মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছে। সেদিন দাদিকে আমরা দুইজন হাত ধরে ওখানে টেনে এনে বলেছিলাম, ‘দাদি এই জায়গায় আমরা কোনো দিন আর বাড়ি করব না, গাছটাও কাটব না, সত্যি।’ দাদি আমাদের দিকে তাকিয়ে ফোকলা দাঁতে একটা হাসি দিয়েছিল। আজ প্রায় ১০ বছর পর যখন মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি যাই, তখন ওই গাছের নিচে গিয়ে বলি, ‘দাদি গাছটা কিন্তু আমরা আজও কাটিনি।’

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা।