তবুও নিতু

নিতু একপ্রকার রাগ করেই বলল, ‘এসব কী পরেছ?’
আমি বললাম, ‘কোন সব?’
‘এই যে রংচটা একটা প্যান্ট।’
‘গতকাল পকেটে কলমের কালি পড়ে একটা প্যান্ট নষ্ট হয়ে গেছে, আর বাকি যে দুইটা আছে, একটাও মাজায় হয় না। মটু হয়ে গেছি।’
‘দুটো প্যান্ট কিনে নিলেই তো পারো।’
‘কিনতে গিয়েছিলাম। ঈদ বলে দাম চাইছে আকাশছোঁয়া। ঈদের পর কিনব। তখন একটু দাম কম থাকবে।’
নিতু কথাটা শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। নিতুর সবকিছুর চেয়ে এই তাকানোটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। কেমন যেন মায়াভরা চাহনি। সব মেয়ের চোখেই নাকি মায়া থাকে, তবে নিতুর হয়তো কিছুটা বেশি।
নিতু আগামী মাসে আমেরিকা চলে যাবে। বাবা–মা সবাই ওখানে, ও কেন এই দেশে থাকবে? তাই শেষবারের মতো দেখা করতে এসেছে।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙে নিতু বলে উঠল, ‘এতগুলা বছর প্রেম করেও তোমাকে আজও চিনতে পারলাম না। কী চাও না চাও কিছুই বুঝি না। আগামী মাসে আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি, তুমি যদি নিজের খেয়াল না রাখতে পারো, তাহলে আমি কিন্তু আর দেশে ফিরব না।’
কথাগুলা এক নিশ্বাসে বলেই নিতু আমার দিকে পেছন ফিরে হাঁটতে লাগল। জানি নিতু কাঁদছিল, তবুও মেয়েটা কান্না দেখাতে চায়নি। আমি আর পিছু নিলাম না। মেয়েদের কান্নায় নাকি জাদু থাকে, এই জাদু আমাকে আবার পেয়ে বসলে নিতুর স্বপ্ন আর পূরণই হবে না।
নিতু চলে গেছে আজ প্রায় চার বছর। এখন অবশ্য আমি নিজের খেয়াল নিজেই রাখছি। তবে নিতু আর ফিরে আসেনি। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা হয় আবার বেখেয়াল হয়ে যাই। নিতু আবার ফিরে আসুক। আবার আমার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দিয়ে মিথ্যা মিথ্যায় হুমকি দিক ‘এইবার যদি নিজের খেয়াল ঠিকমতো না রাখো, তাহলে কিন্তু আমি আর দেশে ফিরব না।’

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা