'তৈরি হও এগিয়ে যাও' রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা

‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।
‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।


প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, ফিচার লেখার নিয়মকানুন জানা নেই আমার। কর্মশালায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাটুকু সহজ ভাষায় লিখছি—
সেমিনার, ওয়ার্কশপ (কর্মশালা)—এসব অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ আমার বরাবরই কম। তবুও এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছি দুটি কারণে—প্রথমত, বন্ধুসভার বন্ধুদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারিনি। দ্বিতীয়ত, যাঁর লেখা অণুকাব্য এককালে ঘরের দেয়ালে লিখে রাখতাম, তাকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি—দন্ত্যস রওশন ভাইয়ের কথা বলছি।

‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।
‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।


রওশন ভাই মজার মানুষ জানতাম, কিন্তু তিনি যে রীতিমতো কথায় কথায় হিউমারের শৈল্পিক খোঁচা দেন, এটা উপভোগ করতে পারাটা এই কর্মশালা থেকে আমার বড় অভিজ্ঞতা। আর লেখালেখির বিষয়ে রওশন ভাইয়ের মূল্যবান কিছু কথা আমার মনে ধরেছে, যেমন নিয়মিত লেখার চর্চাকে ধরে রাখা, লেখক হতে গেলে আগে ভালো পাঠক হওয়া জরুরি। তবে একটি কথা মনে সরাসরি গেঁথে গেছে, ‘নিজের লেখাকে নিজেই পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে পারাটাই লেখকের সবচেয়ে বড় দক্ষতা।’ এ কথাটি আমার লেখার অভ্যাসকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ করে বসেছে—আমি কি আদৌ নিজের লেখাকে পাঠকের চোখে দেখতে পারছি?
এ কর্মশালায় যাওয়ার আগে বিতর্ক শব্দটা শুনলেই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় মেশিনের মতো কথা বলে যাওয়া ছেলেমেয়েগুলোর কথা মনে হয়ে ভীষণ হিংসা হতো। আমি মোটেও বাক্পটু নই, কথা খুবই কম বলি, গুছিয়ে বলতে পারি না। তাই কোনো দিন সাহস করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যেতে পারিনি। বিতার্কিক হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। আসলেই কি স্বপ্নই থেকে গেছে? নাহ, আমার ভুলটা ভাঙিয়ে দিয়েছেন ফালগুনী মজুমদার। বিতর্ক যে শুধু প্রতিযোগিতার বিতর্ক নয়, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা যে বিতর্ক করেই টিকে আছি, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন তিনি। সেদিক থেকে ধরতে গেলে আমিও বহু বিতর্ক করেছি জীবনে। ভালো একটি অনুভূতি হয়েছে এটা জেনে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।
‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।


বাংলা প্রমিত উচ্চারণে কথা বলার ক্ষেত্রে আমার বেশ কিছু সমস্যা ছিল। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য অনুশীলন প্রয়োজন সেটা জানতাম, কিন্তু সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে গিয়ে হাসি-ঠাট্টার শিকার হয়েছি বেশ কয়েকবার। ইচ্ছাশক্তিতে মরিচা ধরে গিয়েছিল, সামিউল আজিজ ভাই সেই ইচ্ছাশক্তিকে নতুন করে শাণ দিয়ে ঝকঝকে বানিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে তিনি মুখের জড়তা দূর করার জন্য কিছু ব্যায়ামও শিখিয়ে দিলেন। দারুণ কাজে দেবে এগুলো।
উত্তম রয় লিডারশিপ নিয়ে যেসব সাবলীল অথচ গুরুত্ববহ কথা বলেছেন, তাতে মধ্যাহ্নভোজে সরবরাহকৃত রোস্ট-পোলাও খেয়েও রওশন ভাইয়ের ভাষায় ‘পোলাও-ঘুম’ দেওয়া সম্ভব ছিল না। প্রতিটি কথা নিজের ভেতরের লিডার হওয়ার স্বপ্নকে কৌশল শিখিয়েছে।

‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।
‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।


লিডার হওয়ার সিরিয়াস চিন্তায় মগ্ন থাকতে থাকতেই ময়না পাখি স্যার, মানে মাহবুব পারভেজ এলেন আরেক সিরিয়াস বিষয় এবং আমার মতে কর্মশালার সবচেয়ে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে—আমার ক্যারিয়ার। যে ক্যারিয়ারের চিন্তা মনে এলেই অজানা অনিশ্চয়তায় বুকটা কেঁপে ওঠে। তবে মাহবুব স্যার যেভাবে হাস্যরসাত্মকভাবে শুরু করলেন, তাতে চাপ কিছুটা কমে গেল। চাপ আরও কমল, যখন তিনি বললেন, ‘আমি লিখে দিতে পারি, এখানে যাঁরা আছেন, সবাই একদিন টাকা উপার্জন করবেন। কিন্তু টাকা উপার্জনই সব নয়।’ সত্যিই ক্যারিয়ার গঠনে তিনি যেভাবে নিজের ইচ্ছাটাকেই প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দিলেন, তাতে ক্যারিয়ার নিয়ে যে ভীতিটা ছিল, সেটা আর থাকল না।
আরিফ নিজামী ভাইয়ের ‘ম্যাক্সিকান ওয়েভ’টা উপভোগ করেছি দারুণভাবে। সেই সঙ্গে তাঁর স্বরচিত অণুকাব্যও। আর ইন্টারনেট নিরাপত্তাবিষয়ক পরামর্শগুলো নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। বিশেষ করে থার্ড পার্টি অ্যাপসগুলো আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যকে কীভাবে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, তা জানতে পারাটা খুব জরুরি প্রাপ্তি এই কর্মশালা থেকে।

‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।
‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ রাজশাহী অনুষ্ঠান নিয়ে যত কথা।


রওশন ভাইয়ের নিজের লেখা অণুকাব্য পাঠের অংশটিকে আমি কর্মশালার সেরা মুহূর্ত হিসেবেই স্মরণ রাখতে চাই।
এতসব সিরিয়াস টপিকের মাঝখানে রওশন ভাইয়ের হিউমারের ছোটখাটো বর্ষণ মোটেও একঘেয়ে লাগতে দেয়নি কর্মশালাটিকে। বিভিন্ন বন্ধুসভা থেকে আগত বন্ধুদের গান, কবিতা শুনে আনন্দিত হয়েছি। কর্মশালা সম্পর্কিত পূর্বের একঘেয়ে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার পরে বন্ধুসভার এই কর্মশালাটিকে জীবনের সেরা প্রাপ্তির তালিকায় রাখতে চাই। বন্ধুসভার একটি ক্ষুদ্র অংশ হতে পেরে সব সময়ই খুব ভালো লাগে আমার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার কমিটিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই এ রকম সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে পরিশ্রমী হওয়ার জন্য। বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ এবং আলোচকদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না, শুধু রওশন ভাইয়ের এবারের দেওয়া কথা অনড় থাকুক এই আশাই করব—অন্তত বছরে একবার যেন রাজশাহীতে এ রকম একটি আয়োজন করা হয়।
একটি কথা ভুলেই গিয়েছিলাম বলতে, দুপুরের খাবারটা ভালো ছিল।

বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা