আমরাই বন্ধু


বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন
আসলে আমাদের সকাল নির্ধারিত হয় ক্লাসের শিডিউলে। রাজশাহীর বুকে ৭৫৩ একর বিস্তৃত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার পাশাপাশি নিজেদের নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে ক্যাম্পাসে যখন নানান সংগঠন দেখি, এর মধ্যে অনন্য লেগেছিল ‘ভালোর সাথে আলোর পথে’ স্লোগানটি। যার ধারক ও বাহক প্রথম আলো। তারপর দেড় বছর আজ বন্ধুদের সঙ্গে একাত্মতা। প্রতিটা দিনই নতুন নতুন ভালোর সঙ্গে থাকব—এমন চিন্তা পুরো দিনটিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে!

অন্যতম ১৯ জুলাই, ২০১৯।
তৈরি হও, এগিয়ে যাও কর্মশালা! পুরো উত্তরবঙ্গের সব বন্ধুসভার মিলনমেলা! এসেছিলেন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি! এসেছিলেন আমাদের নিত্যনতুন নানান সমস্যার অনন্য সমাধানে! কর্মশালার মাধ্যমে আমাদের বর্তমান অবস্থান, ইচ্ছা, স্বপ্নের সঙ্গে এক করতে!

সময়! সে আর বলা! এতটাই উত্তেজনা ছিল যে সকাল সাড়ে ছয়টায় ঘুম ভেঙে গেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধুরা প্রায় ১২ জন আমরা একসঙ্গে যাব প্যারিস রোড, প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে। একধরনের পিকনিক বলা যায়, এতটা গান, আনন্দ, উৎফুল্লতা। স্থান শিল্পকলা একাডেমি রাজশাহী। একাডেমিতে যাওয়ার পর উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশের নানা বন্ধুসভার সমাহার! আর নিজেদের মধ্যকার বন্ধন, একসঙ্গে মিশে যাওয়া—সবকিছু যেন দেখে মনে হয়েছে সেই কত দিনের পরিচয়! সবার মুখে এক কথা!

আরে আমরা বন্ধু না!
নাশতার পর কর্মশালা শুরু হলো যথাসময়ে। চোখের সামনে দন্ত্যস রওশন, আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, মাহবুব পারভেজ, গুগল বাংলাদেশের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আরিফ নিজামী, রাজশাহী বন্ধুসভা সভাপতি ফারুক হোসেন, উত্তম রয়সহ নানা গুণী মানুষের উপস্থিতি। তা ছাড়া নিজ নিজ সেক্টরে শ্রেষ্ঠ প্রত্যেক মানুষেরই পদার্পণ হয়েছিল রাজশাহী শিল্পকলায়।

ক্যারিয়ার, বিতর্ক, লেখক যদি হতে চাও, শুদ্ধ উচ্চারণ ও উপস্থাপনা, ইন্টারনেট ও তরুণসমাজ, উদ্যোক্তা কীভাবে হওয়া যায়—এরূপ নানান বিষয়ে আমাদের দিকনির্দেশনা দিলেন।

শুধু তা-ই না, আমি নিজে এক বছর যাবৎ একটা অ্যাপস নিয়ে কাজ করছি, প্রশ্নের পর মাহবুব পারভেজ স্যার আমাকে ডেকে পুরো থিমটা বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে পুরো রাস্তায় অগ্রসর হওয়া যাবে, তাও দেখিয়ে দিলেন। শুধু তা-ই না, প্রশংসা করলেন বাংলাদেশে তা একসময় বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে। ভবিষ্যতে প্রজেক্ট চলাকালীন সবকিছুতে পাশে থাকবেন বলে দৃঢ় আশ্বাস দিলেন। তবে করে দেখাতে হবে, এটা ওনার শর্ত। আমার নিজের অনুভূতি তখন বলার মতো না। শেষ কথা, আরে আমরা বন্ধু না বন্ধুসভার।

রওশন ভাইয়া এত মজার মানুষ! পুরো প্রোগ্রামটা মাতিয়ে রাখছিলেন। লেখক হতে হলে নিজের ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ়তার পরিচয় যে আবশ্যক, তা অত্যন্ত ভালোভাবে বলে দিলেন। দুপুরের খাবারের আয়োজন! সে তো এলাহী আয়োজন! একসঙ্গে সব বন্ধু খেতে খেতে ও আড্ডা দিতে দিতে মনে হয়েছে পিকনিকে এসেছি! সবার মনমানসিকতা এতটা পরিচ্ছন্ন ও উদার, তা নিজেকে ও আকাশের মতো বড় হওয়ার শিক্ষা দেয়। শুধু আলোচনা! না! কত কিছু।

বিকেলে প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর আলোচকেরা ও বন্ধুসভার অন্য বন্ধুরা বলল, আরে চলো, তোমাদের ক্যাম্পাসে আড্ডা হবে! সেই সময়টুকুতেও আমাদের একাত্মতা নিমেষেই ভুলিয়ে দিয়েছিল আমাদের পরিচয় আজ সকাল থেকে। সন্ধ্যায় প্যারিস রোড, বুদ্ধিজীবী চত্বর, বধ্যভূমি, জোহা চত্বর, বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, শহীদ মিনার, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, চারুকলা—এতগুলো জায়গায় একসঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন সবাই নিজেদের মজার ঘটনাগুলো বলছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না! সবাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বন্ধুসভার আন্তরিকতার মুগ্ধতা এতটাই করছিল যে নিজের থেকেই গর্বের যে এই সংগঠনের আমি এক অংশ। শেষে টুকিটাকিতে এসে নাশতা ও চা পর্বের পর বিদায়বেলায় তাদের গভীর রাত হয়ে যাবে ভেবে অনেকে যখন চলে যাচ্ছিল, তখন নিজেদের এতটা খারাপ লাগছিল! কয়েকজন অশ্রুসিক্ত, আরে কিছু না এটা, ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ!

আমার জন্য সময়টা বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে এক গর্ব ও ভালোবাসার। এমন কর্মশালা আমাদের মধ্যে যে কতটা সেতুবন্ধ গড়ে দিয়েছে হৃদয়ের মণিকোঠায়, তা নিজেও বুঝতে পারিনি! ভালো থাকুক মানুষগুলো, যাঁরা সমাজে ভালোর কারিগর। আর দিন শেষে! হ্যাঁ আমরাই বন্ধু, আমরা বন্ধুসভা! কৃতজ্ঞ বন্ধুসভার প্রতি।

পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা।