এ যেন নতুন শুরুর জ্বালানি

স্বপ্নের বুনন শুরু হয়েছিল রোজার বন্ধ থেকে। রাজশাহীতে হতে যাচ্ছে ‘তৈরি হও, এগিয়ে যাও’ শিরোনামে একটি কর্মশালা। তখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু রাবি বন্ধুসভা আর রাজশাহী বন্ধুসভার। ১৯ জুলাইয়ের কর্মশালায় বক্তারা রাজশাহীতে এলেন ১৮ জুলাই। অমায়িক কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখে তখন মনেই হয়নি যে আগামীকাল তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠবেন ১৬টি বন্ধুসভার ৪৫০ জন বন্ধু।

১৯ জুলাই সকাল পৌনে ১০টায় এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দন্তস্য রওশন ভাইয়ের সঞ্চালনায় শুরু হলো কর্মশালা। রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির নিচতলা বন্ধুদের সমাগমে টইটম্বুর। দোতলায়ও আসন গ্রহণ শুরু করলেন বন্ধুরা।

প্রথমেই রওশন ভাইয়ের ছোট্ট বক্তব্য সবাইকে কোনো এক বিন্দুতে গেঁথে দিল। সেই বিন্দু দিয়ে সরলরেখা আঁকলেন একে একে ফাল্গুনী মজুমদার, কাজী সামিউল আজিজ, উত্তম রয়, মাহবুব পারভেজ, আরিফ নিজামি এবং দন্তস্য রওশন। বিষয়গুলো ছিল যথাক্রমে—সবার জন্য বিতর্ক, শুদ্ধ উচ্চারণ ও উপস্থাপনা, লিডারশিপ, আমার ক্যারিয়ার, নিরাপদ ইন্টারনেট, লেখক যদি হতে চাও।

ফাল্গুনী মজুমদারের বিতর্ক করার মোটিফগুলো শুনে মনে হচ্ছিল আজই বিতার্কিক হয়ে যাই, সামিউল আজিজ ভাই যেভাবে সবাইকে অ, আ উচ্চারণ করালেন, মনে হলো সেই শৈশবের স্বরবর্ণ পড়ার কথা।

উত্তম রয়ের কথা শুনে অনেকেই নিজের ভেতরের লিডারশিপের নিভু নিভু আগুনে যে নতুন সলতে জ্বলেছে তা তাঁদের প্রতিক্রিয়া দেখলেই বোঝা যায়। মাহবুব পারভেজ ভাই ক্যারিয়ার নিয়ে যখন বললেন, তখন তো আমার পাশেই একজন বলে বসলেন, ‘যাহ্‌! এত দিন মনে করতাম বিভিন্ন রকম ক্যারিয়ারের চিন্তা করা বুঝি খারাপ, এখন তো দেখি এটা ভুল না।’ এই সময় তাঁর আত্মবিশ্বাস যে জায়গামতো পৌঁছে গেছে সেটা আর বলতে হবে না মনে হয়।

আরিফ নিজামি ভাইয়ের কাছে বন্ধুরা যেভাবে প্রশ্ন শুরু করলেন যে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের ই-মেইল আইডি দিতে বাধ্য হলেন। সবাই যেন সেখানেই তাঁদের কৌতূহল দমন করেন।

লেখক কীভাবে হতে হবে সে জন্য তো অনেকে মোটামুটিভাবে যুদ্ধ করে কর্মশালায় এসেছেন রওশন ভাইয়ের কাছ থেকে সবক নেওয়ার জন্য। নিরাশ করেননি ভাই কাউকে। সাত-আট ঘণ্টার কর্মশালায় কাউকে বিরক্ত হতে দেখা যায়নি। হবেনই–বা কীভাবে, সঞ্চালক সাহেব মাঝেমধ্যেই দর্শকদের হাসিয়েছেন বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব হেঁয়ালির মাধ্যমে দিয়ে, কখনো স্টেজে ডেকে নিয়ে মজা করেছেন, কখনো অণুকাব্য দিয়ে। পুরো অনুষ্ঠানকে উজ্জীবিত করে রেখেছেন এই ম্যাজিশিয়ান। কর্মশালার পরে অনেকেই ফেসবুকে জানিয়েছেন তাঁদের ভালো লাগার কথা। কত স্বপ্নের যে পুনর্জাগরণ ঘটেছে, কত সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যে অগ্ন্যুৎপাত শুরু করেছে, কত নিভু আলো যে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে, কত ছেঁড়া গিটার নতুন সুর বেঁধেছে, তা বোঝা গেছে কর্মশালার পরে বন্ধুদের জ্বলজ্বলে চোখের দিকে তাকিয়ে। এ যেন তাঁদের কাছে এক নতুন শুরুর জ্বালানি। এই কর্মশালা আয়োজনের জন্য জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ, রাবি বন্ধুসভা, রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধুদের অভিনন্দন। অভিনন্দন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ঈশ্বরদী, পাবনা, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বাঘা, সান্তাহার, নওগাঁ, লালপুর, জামালপুর বন্ধুসভাকে। তাদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে করে তুলেছে আরও চিত্তাকর্ষক।

সাধারণ সম্পাদক, রাবি বন্ধুসভা