তৈরি হচ্ছি, এগিয়ে একদিন যাবই

ঢাকায় ‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ শীর্ষক দিনব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা
ঢাকায় ‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ শীর্ষক দিনব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা


২ আগস্ট শুক্রবার সকাল ৮টা। উৎসব বাসে চড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মুন্সিগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা চলেছি। গন্তব্য সিএ ভবন, প্রথম আলো বন্ধুসভার কার্যালয়। ৫৫ জনের বাসে ৬৮ জন। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, তবু নেই কারও অভিযোগ। সবাই উৎফুল্ল, আনন্দিত। বেশি সময় লাগল না, বাস হয়ে উঠল আমাদের গান, কবিতা আর আবৃত্তির রাজ্য।

ঢাকায় ‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ শীর্ষক দিনব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা
ঢাকায় ‘তৈরি হও এগিয়ে যাও’ শীর্ষক দিনব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা


সিএ ভবনে কতগুলো বিষয়ে প্রশিক্ষণ হবে আজ। ১০টায় গন্তব্যে পৌঁছে ঝাঁকড়া চুল, উদ্ভাসিত দুটি জ্ঞানী চোখ আর কথার ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকা রওশন ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হতেই মনটা ভরে গেল। প্রশিক্ষণের রুমটি ভরে গেল বন্ধুদের উপস্থিতিতে। ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া কর্মশালার আর্টিফিশিয়াল ব্যানারটি বাস্তবিক টাঙানো হয়েছে মঞ্চে। কর্মশালার স্লোগান ‘তৈরি হও, এগিয়ে যাও’।  বিষয়গুলো ছিল ১. নিজেকে জানো ২. আমার ক্যারিয়ার ৩. সংবাদ লেখার নিয়মকানুন ৪. সংগঠন ও নেতৃত্ব।

এর মধ্যেই রওশন ভাইয়া ঘোষণা দিলেন প্রশিক্ষণের কিছুই হবে না আজ!  আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এটি আসলে ভাইয়ার সময়োপযোগী ভিন্ন ছলে শেখানোর কৌশল।

সংগঠন ও নেতৃত্ব দিয়ে শুরু হলো প্রশিক্ষণ। ১১টি দলে ভাগ করে দেওয়া হলো সবাইকে । উড়োজাহাজ আবিষ্কারক রাইট ব্রাদার্স থেকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াসহ ১১ জন বিখ্যাত ব্যক্তির নামে এক একটি দল। সময় দেওয়া হলো ১০ মিনিট। চমৎকার ব্যাপার, ১০ মিনিটেই প্রতিটি দলের বন্ধুরা তৈরি করলেন একজন করে নেতা, বাকিরা হয়ে উঠলেন সংগঠক। নেতারা বাকি বন্ধুদের আদ্যোপান্ত আর দলের নামের ব্যক্তির কর্মকাণ্ড নিজেদের জীবনে কাজে লাগানো কৌশল উপস্থাপন করলেন একে একে। কেউ বৃক্ষ রোপণ করে, কেউ দাঁড়াতে চান সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে, হতে চান কেউ ব্যবসায়ী, গায়ক, নায়ক, কেউ আবার বিসিএস ক্যাডার। কখনো বহু মানুষের মধ্যে কথা না বলা বন্ধুরাও হেঁটে হেঁটে কথা বলতে শিখে ফেললেন।

তারপরই আসলেন সাংবাদিক শুভংকর কর্মকার। শেখালেন ফাইভ ডব্লিউ ওয়ান এইচ, পিরামিড নিয়ম। এসব আসলে সংবাদ লেখার নিয়মকানুন। বুঝিয়ে দিলেন কোনটি সংবাদ, কোনটি নয়। হতে চাই একজন বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যমকর্মী, তাই অত্যধিক মনোযোগ ছিল বিষয়টিতে। ২০ মিনিটের প্রশিক্ষণ মস্তিষ্কে লেগেছে, কাজেও লাগবে আশা করি।

লাঞ্চের বিরতি...

খেয়ে-দেয়ে আবারও বন্ধুরা পরিপাটি। কথার ঝুলি থেকে অনুপ্রেরণা ঝরাচ্ছেন দন্ত্যস রওশন ভাই, নিজেকে জানব কীভাবে? এর মধ্যেই এলেন প্রশিক্ষক এজাজ-উর রহমান সজল। তিনি মানতে নারাজ আমরা মানুষ। ব্যাখ্যা দিলেন একজন আইসিওতে থাকা চিকিৎসকের চেয়ে একজন বাস ড্রাইভারের গুরুত্ব কতটা বেশি। বুদ্ধি শক্তির সার্থক স্বাধীন ব্যবহার কীভাবে আমাদের মানুষ করে তোলে, আত্মঘাতী হতে কীভাবে হয়ে উঠতে হয় আত্মপ্রত্যয়ী। সিদ্ধান্ত নিলাম এই কর্মশালা শেষে রোজ সকালে শাওয়ারের নিচে এখন থেকে নাচব, বাঁচব নিজের মতো করে। কারণ আমি কে  তা একটু হলেও জানতে পেরেছি এখন।

কাঁচা চুল, কাঁচা গোঁফ নিয়ে এলেন এমপি। তিনি মেম্বার অব পার্লামেন্ট না! প্রশিক্ষক মাহবুব পারভেজ। নিজের পরিচয় কতটা উৎফুল্ল তারুণ্যে উপস্থাপন করতে পারেন তা বিমুগ্ধ প্রমাণ করলেন এমপি স্যার । ক্যারিয়ার নিয়ে তাঁর কথাগুলো আমিসহ বন্ধুরা কাজে লাগাবেন বলে আশা করি। মন যা চায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাই-ই করতে হয়।

প্রশিক্ষণ হলো আইটি নিয়েও, ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিশ্চিত করব কীভাবে? গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রশ্ন আর ইন্টারনেটে আয়ের উৎস তৈরি আমাদের করণীয় কী তা শিখিয়ে দিলেন- কিউ এম আসফাক আলী।

মধ্যে স্কাউটের হাততালি, একবারের জন্য অণুকাব্য আর আনিসুল হক স্যারের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য বোনাস পাওয়া গেল।

শেষ অবধি প্রশিক্ষণ এমন হলো রওশন ভাইয়ার ঘোষণাই ঠিক হলো। ব্যানারে থাকা কিছুই হলো না সেদিন। তবে যদি প্রশ্ন করেন হলোটা কী তাহলে? আমার কাছে এক ঝাঁক উত্তর আছে, আমি এখন রাইট ব্রাদার্সদের মতো উড়তে চাই, পলান সরকারের মতো ঘুরে ঘুরে আলো ছড়াতে চাই, স্বপ্নকে সার্থক করার জন্য জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে চাই আর সবার আগে তৈরি হতে চাই। কারণ, আমি জানি তৈরি হলে এগিয়ে যাওয়া যায়। এখন থেকেই আসুন, তৈরি হয়ে এগিয়ে যাই। এ প্রশিক্ষণের পর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছি, তৈরি হচ্ছি এগিয়ে যাবই।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মুন্সিগঞ্জ বন্ধুসভা।