বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা

পনেরো আগস্ট
মিশকাত উজ্জ্বল

যে দাঁড়কাকটি প্রতি ভোরে ডেকে ডেকে ক্লান্ত
যে ব্যাকুল সারথি তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো মেঘজলের প্রার্থনারত;
যে প্রিয় আসবে বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রতীক্ষায় রাখে
যে স্বৈরিণী নিপুণ ছলে ভেঙেছে হৃদয়টাকে—
সে–ও বড় বন্ধু বটে।
যে সুহৃদ রক্তের ঋণের কথা দিব্যি ভুলে যায়
যে স্বজন জীবনকে ফেলে দেয় ঘোর অমানিশায়;
যে হাভাতে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার কড়া নাড়ে
যে রমণীর সতীত্বের নিলাম হয় রাতের আঁধারে—
তাকেও বন্ধু বলি।
যে যুবক পনেরো আগস্টের শোকমিছিলে না যায়
যে কবি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে লিখে না বজ্রবাণী কবিতায়
যে বৃদ্ধের মনে গোপনে চলে জঙ্গিবাদের বীজ চাষ;
যে প্রজন্ম জন্মোৎসবের আড়ালে জাতীয় শোককে করে উপহাস—
সে আমার বন্ধু নয় কস্মিনকালেও।


মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব
প্রবীর রায়

বিশ্বের একজন বাঙালি শ্রেষ্ঠ
শেখ মুজিবুর রহমান
পরাধীন বাংলাকে স্বাধীন করে
নিয়েছ সবার ওপরে স্থান।
তুমি আছ বাঙালির অন্তরে
আছ প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে
মিশে আছ বাঙালির সত্তায়
থাকবে গৌরবে-গর্বে-বিশ্বাসে।
তুমি ইতিহাস, তুমি বাংলার ঐতিহ্য
তুমি বাংলার গৌরব, বাঙালির গর্ব
তোমার জন্য পেয়েছি আমরা
এই পৃথিবীতে বাংলা নামক স্বর্গ।
পৃথিবী নামক পুষ্পকাননে
তুমি ছিলে এক প্রস্ফুটিত ফুল
ঘাতকেরা তোমায় হত্যা করে
করেছিল এক চরম ভুল।
মরেও অমর তুমি ধরণির বুকে
তোমার কীর্তি রবে সবার মুখে মুখে
তুমি ছিলে তুমি আছ তুমি থাকবে

পিরোজপুর বন্ধুসভা


আমি হব নেতা
আরিফুল ইসলাম সাকিব

আমি হব এই সমাজে
জনগণের নেতা,
সর্বসময় জনগণের
বুঝব দুঃখ–ব্যথা।

ন্যায়বিচারের প্রতীক হব
এই সমাজের বুকে,
হাসিমুখে থাকবে মানুষ
কাঁদবে না আর দুঃখে।

ধনী-গরিব সবার জন্য
সমান ভালোবাসা,
সুখের সমাজ গড়ব আমি
এটাই মনের আশা।

শিক্ষার্থী, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা


অবিনশ্বর বঙ্গবন্ধু
রাফসান

হে মুজিব,
কে বলেছে তুমি মৃত
কে বলেছে তুমি নাই?
আমি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে
তোমায় খুঁজে পাই।
তুমি দিয়েছ নতুন প্রাণ,
করেছ মোদের মুক্তি;
তোমার উঁচু ধ্বনিতে আজও
খুঁজে পাই শুভ শক্তি!
তুমি বিনে স্বাধীনতা?
এ তো কেবলই শুধু এক শব্দ!
তোমার কণ্ঠের আওয়াজেই তো আজ
শত্রু হয়েছে জব্দ!
তোমায় পেয়ে বাংলার মাটি বাংলার জল
বাংলা পেয়েছে প্রাণ!
তুমি অবিনশ্বর বঙ্গবন্ধু;
শত সুরে বাজে আজ জয় বাংলার গান!
হারিয়ে যাবে না তুমি কখনো
হে বঙ্গীয় বীর;
তুমি লাল-সবুজের পতাকা দিয়েছ
দিয়েছ স্বাধীন নীড়!
তোমার জন্য ভক্তি অতি
বিনম্র শ্রদ্ধা যত,
তুমি বিনে হায়! এই বাংলা আজ
কী করে স্বাধীন হতো?
তুমি অতি মহিয়ান
তুমি মোর গৌরব;
আজ তোমার পায়ে লুটায়ে পড়ুক
শত ফুলের সৌরভ!

আলোর মিনার
সিরাজুল মোস্তফা

জাগ্রত আত্মাটি যখন
ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায়
জেগে ওঠার শক্তি খোঁজে
একটি শ্বাশত কণ্ঠে,
‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধু বাঙালির চিরকালের
বন্ধু, পিতা, স্বপ্নদ্রষ্টা।

তাঁর কোনো দল নেই, মত নেই,
ধর্ম নেই।
আছে শুধু একটি পরিচয় ‘বাঙালি’।

বাংলাদেশ নামে যদি কবিতা
রচিত হয়,
তবে তার প্রাণ হবে বঙ্গবন্ধু।
যদি গান হয়, তার সুর হবে
বঙ্গবন্ধু।

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধু



অনন্য একটি নাম
নিতাই পদ বণিক

চোখের কালিতে মনের খাতায়
লিখে দিলাম একটি নাম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান।

আকাশের নীলে সাগরের জলে
এঁকে দিলাম একটি নাম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান।

ফুল পাখিদের কলগানে
কাননে মধূপ গুঞ্জরণে
গেয়ে যায় একটি নাম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান।

নদীর স্রোত ঝরনা ধারায়
ছন্দ ছড়ায় অস্ফুট বেদনায়
ধ্বনিত হয় একটি নাম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান।


আমি একজন মুজিব
চন্দন পাল

কিচিরমিচির শব্দে পাখি ডাকত
ঘুম ভাঙত রাতের শেষে
সূর্যের কিরণে জেগে উঠতে
তোমার প্রিয় বাংলাদেশে।
সফলতা কী, বিফলতা কী
নাই বা বুঝলে তুমি
তোমার বিনিময়ে আমরা পেয়েছি
তোমার প্রিয় জন্মভূমি।
নীতি আর আদর্শের স্বার্থে তুমি
নিজেকে করেছ ত্যাগ
তোমাকে মেরে আমরা পেয়েছি
সোনার সিংহ ভাগ।
তোমার দেশ আমাদের দিয়েছে
স্বীকৃতি আর পুরস্কার
তোমার ভাগে জুটল শুধু
মিথ্যা অপবাদের বুলেট ভার।

কী দরকার ছিল স্বাধীনতার
ভালোই তো ছিলে তুমি
তোমার বিনিময়ে আমরা পেলাম
তোমার প্রিয় জন্মভূমি।

মহানগর বন্ধুসভার সদস্য
৪র্থ বর্ষ, ঢাকা কলেজ।



ইচ্ছা হয় শেখ মুজিবের মতো
আলমগীর কাইজার

ইচ্ছা হয় শেখ মুজিবের মতো
দৃঢ় কণ্ঠের প্রেমিক হই,
বাংলার আকাশে-বাতাসে মিশি
সত্য আর ন্যায়ের খোঁজে।

ইচ্ছা হয় শেখ মুজিবের মতো
আঙুল তুলে বলি,
এদেশ কোনো পরাজিত শক্তির নয়
এদেশে শকুনদের ঠাঁই নেই।

ইচ্ছা হয় শেখ মুজিবের মতো
মানুষে বিশ্বাস করি,
মানুষের চোখে চোখ রেখে বলি
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

ইচ্ছা হয় শেখ মুজিবের মতো
ভালোবাসার ডাক দিই,
বজ্রকণ্ঠে বলে উঠি
এসো অস্ত্র ছেড়ে গোলাপের চাষ করি।

ইচ্ছা হয় শেখ মুজিবের মতো
একজন বিবেকবান নেতা হই
জাতির মুক্তির লড়াইয়ে বলি
এসো কোন্দল ছেড়ে মস্তিষ্ক দিয়ে লড়ি।

সাংগঠনিক সম্পাদক, রংপুর বন্ধুসভা


বঙ্গবন্ধু
মারুফ আহম্মেদ

আমি ঘুরে দেখতে চাই ঐ বাংলা
যেথা ঘুমিয়ে আছে জাতির পিতা,
যার অমর কীর্তিতে ভেঙেছিল
আমার বাংলা মায়ের পরাধীনতা।
যার বজ্রকণ্ঠ সুর খুলে দিয়েছে বাংলা
মায়ের পায়ে বাঁধানো শিকল,
হঠাৎ ভয়ে মুখ লুকালে বিছিয়ে দেয়
মা গায়ের ছেঁড়া শাড়ির আঁচল।
যার একটা ইশারায় জোট বেঁধেছিল
পুরো বঙ্গের অসহায় সাধারণ,
যার চাওয়ায় মুক্তির সংগ্রাম ঢাল
যুক্তি কৌশলে জিতেছে মহারণ।
যার ত্যাগেই মুক্ত স্বাধীন বাংলা
রয়েছে এ ইতিহাসের রচনায় অমর,
অভাগা দরিদ্রের কষ্ট ধুয়ে মুছে পরশ
আনে সুখ নামের ছোট ভ্রমর।
সহে নেব না আর সব যন্ত্রণা ঘাতকের
আঘাত সুর ভেসে আসলে,
এই ইতিহাস দেব না আমি মুছে যেতে
কভু রাখব প্রাণে আগলে।
নয় সাধারণ কেউ উত্তাল মহাসাগরে
ঢেউ অপ্রতিরোধ্য দুর্বার,
নোয়ায়নি মাথা শত বিপদে নেই মৃত্যুর
ভয় নয় সে পাত্র হারবার।



বাঙালির হয়েছে জয়
মুস্তাফিজুর রহমান

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের বুদ্ধিদীপ্ত ভাষণে,
স্বাধীনতার সাধ জেগেছে বাঙালি প্রাণে,
সমগ্র বাঙালির একই ভাবনা।
কোনো অশুভকে পরোয়া করি না।

হিংস্র ঘাতকের থাবায় ২৫ মার্চ কালরাতে,
নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে বাঙালির ভূমিতে।
রক্তের বন্যায় এ দেশটাকে নিশ্চিহ্ন করতে,
ঘাতকেরা আঘাত হেনেছে দিবা-নিশিতে।

তারপরও বাঙালির স্বাধীনতার সাধ,
বাড়িয়েছে মনোবল ভেঙেছে ঘাতকের বাঁধ।
দেশপ্রেমের আদর্শ আর মানবিকতা,
বাঙালি হৃদয়ে দিয়েছে মুক্তির বার্তা।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রতি ক্ষণে,
নানা শ্রেণি পেশার বাঙালির অংশগ্রহণে।
৩০ লক্ষ শহিদ আর ২ লক্ষ ইজ্জতের বিনিময়,
অবশেষে বীর বাঙালির হয়েছে জয়।


স্বাধীনতার প্রথম বিকেল
মম জামিত
একটা কবিতার প্রহরে স্বপ্ন এসে গেল অবিরাম ধারায়
নিঝুম রজনীতে উত্তাল হয়ে জনসমুদ্রে ডাক দিলেন
সবাই নন্দিত বাঁধনের শিহরণে ছন্দে ছন্দে
উদ্বেলিত কণ্ঠস্বরে নতুন বাঁশি বাজিয়ে দিগ্বিদিক ছুটে চলল। কবি বললেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে...'
নদীর জলে ঢেউ এসে গেল, হিজলবনে পাখিরা গান গাইল, ‘অতঃপর পড়ন্ত বিকেলের কবি মহাসাগরকে
উপেক্ষা করে বলে উঠলেন-‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

কবি এবার কবিতার কথা বললেন।
কবি এবার কবির কথা বললেন।
চশমাটা রেখে দিয়ে তিনি তর্জনী
তুলে হলুদ বিকেলকে দাঁড় করিয়ে বললেন-
‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।’
তিনি দেশপ্রেমের কথা বলতেন, তিনি হলুদ বিকেলে স্বাধীনতার কথা বললেন।