ক্যালসিয়ামের উৎস

ক্যালসিয়ামের উৎস। লেখক ডা. ফারহানা মোবিন।
ক্যালসিয়ামের উৎস। লেখক ডা. ফারহানা মোবিন।


ক্যালসিয়াম হাড়ের অন্যতম প্রধান উপাদান। আমাদের দেহে রয়েছে মোট ২০৬টি হার। ছোট, বড়, মাঝারি—সব ধরনের হাড়ের বিকাশ। পুষ্টি ও বর্ধনের জন্য ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অপরিসীম। একটি শিশু মায়ের পেটে থাকার সময় ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। বাড়ন্ত বয়সে দরকার হয় সবচেয়ে বেশি। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ ৪০ পার হওয়ার পর থেকেই হার দুর্বল হতে শুরু করে। পুরুষের তুলনায় নারীদেহের হাড় দুর্বল হয় তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই ৪০ পার হওয়ার পর থেকেই নারীদের বিশেষ সচেতন হতে হয়।
যেসব নারী-পুরুষ দৈহিক পরিশ্রম করেন খুব বেশি, তাঁদেরও ক্যালসিয়াম গ্রহণের বিষয়ে হতে হবে সতর্ক। হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়াকে বলে ‘অস্টিওপোরোসিস’। অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আমাদের চারপাশে অসংখ্য শাকসবজি ও ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম। কিছু মাছ-মাংসেও রয়েছে এর গুণ। কিন্তু সঠিক জ্ঞানের অভাবে আমরা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছি না। পরিণামে শিকার হচ্ছি নানা রকম অসুখের।
ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ শাক: লালশাক, কচুশাক, পালংশাক ও মেথিশাক। এ ছাড়া সবুজ শাকেও রয়েছে অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম।
ক্যালসিয়ামে ভরপুর সবজি: কাঁচা কলা, বিট, কচুর লতি, কচু, কচুর মুখি, কলার মোচা, শজনে ডাঁটা, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন, সূর্যের তাপে শুকানো টমেটো, শালগম, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টি আলু, লেটুসপাতা, ধনেপাতা, ওল, মিষ্টিকুমড়া, শিম, চালকুমড়া, মুলা, বরবটি ও করলা।
ক্যালসিয়ামে পূর্ণ ফল: পিয়ারস, পেয়ারা, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কমলালেবু, তরমুজ, জলপাই, আপেল, খেজুর, চালতা, কলা, আনারস, আঙুর, আতা, পেঁপে, ডুমুর, কাঁঠাল, নাশপাতি, মাল্টা, বরই, বাতাবিলেবু, আখরোট, আলু বোখারা, লিচু, আম, জাম ও স্ট্রবেরি।
ক্যালসিয়ামে পূর্ণ খাবার: শিশুদের জন্য মায়ের দুধ, গরু-ছাগলের দুধ, ডিম, মাখন, পনির, দই, ছানার মিষ্টি, জলপাইয়ের তেল, কড লিভার অয়েল, কলিজা, গরু, খাসি ও মুরগির মাংস।
ক্যালসিয়ামে পূর্ণ মাছ: ছোট মাছের কাঁটায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। আর মাছের মধ্যে মলা, ঢ্যালা, কাচকি, কই, মাগুর, শিং ও কোরাল। ওষুধ ছাড়া সংরক্ষণকৃত শুঁটকি মাছ, সামুদ্রিক মাছের মধ্যে টুনা, স্যামন, ক্যাভিয়ার, সারভিন, মাককেরেল ইত্যাদি। বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছেও সামুদ্রিক মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি।
সব রকম খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবারে।
সূর্যের আলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি। হাড় ভালো রাখতে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ভিটামিন ডি যথেষ্ট উপকারী। বয়স ৪০ পার হওয়ার পর থেকেই ৬ মাস পরপর বা বছরে অন্তত একবার ভিটামিন ডি এবং রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করান। এতে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা দেখে সেই মোতাবেক চিকিৎসা নেওয়া যায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত পুষ্টির আশায় নিজে থেকে ক্যালসিয়াম বড়ি খাবেন না। রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।