বরগুনা ও পটুয়াখালীতে সাংগঠনিক সফর

পটুয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা।
পটুয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা।


কয়েক মাস আগে প্রথমবার পটুয়াখালী গিয়েছিলাম। ব্যস্ততার কারণে শহর ও শহরের মানুষের সঙ্গে মেশার সময় পাইনি একদমই। রওশন ভাই যখন পটুয়াখালী ও বরগুনা যেতে বললেন, তখন একবাক্যেই রাজি হয়েছিলাম। কারণ, লঞ্চ ভ্রমণ আমার অসম্ভব প্রিয়।

গত ৩১ অক্টোবর রাত আটটার সময় সদরঘাটে গিয়ে শুনতে পেলাম, পটুয়াখালীর সব লঞ্চ সাড়ে ছয়টার মধ্যেই ছেড়ে চলে গেছে। তাই চিন্তিত না হয়ে বরিশালগামী লঞ্চ ‘অ্যাডভেঞ্চার-৯’-এ উঠে পড়লাম। বরিশাল থেকে পটুয়াখালী প্রায় দুই ঘণ্টা বাসের পথ।

লঞ্চের যাত্রা শুরু হলো রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ। লঞ্চ যখন বরিশাল টার্মিনালে গিয়ে ভিড়ল, ঘুম না ভাঙলেও ঘাটের মানুষগুলোকে দেখে মনে হলো আমাদের অভ্যর্থনা জানাতেই যেন তারা অপেক্ষারত। যদিও আমি প্রায় পুরো রাত জেগে কাটিয়েছি। কেননা মধ্য রাতে মাঝনদীতে শীতল বাতাস, পানির কলকল শব্দ আর নিকষ কালো আঁধার মিলেমিশে রাতের যে অদ্ভুত এক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

ঘাটে নামার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে পৌঁছালাম রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড। তার পাশেই এক ছোট্ট দোকানে রুটি বানানো দেখে, সেরে নিলাম সকালের নাশতা। তারপর রওনা হলাম পটুয়াখালীর পথে। পৌঁছেও গেলাম সকাল ১০টা নাগাদ। পটুয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুদের এবং প্রথম আলোর প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল আগেই। সেখানে পৌঁছে পটুয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি জাহিদ হাসানের কথা অনুযায়ী রিকশায় করে চলে যাই ভূমি অফিসের সামনে। সেখানে চোখে পড়ে এক প্রাচীন স্থাপনা। স্থাপনাটি প্রায় ধ্বংসের পথে। কিন্তু ভাঙা ভবনের গ্রিক-রোমান সময়কার গোলাকার পিলার (ডোরিক বলা হয় এ ধরনের পিলারকে) ও কারুকার্য দেখে সহজেই অনুমান করা যায় এর আগের সৌন্দর্য। তবে আমার কাছে পুরোনো, ভাঙা ভবনগুলো নতুন ভবনের চেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়।

কিছুক্ষণ পর জাহিদের সঙ্গে বন্ধুসভার অফিসে গেলাম। খুব গোছানো রুমটা। রুমে বন্ধুসভার দেয়ালিকা, ভালো কাজের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ক্রেস্ট রাখা আলমারিতে। ছোটখাটো লাইব্রেরির মতো বই দিয়ে ভর্তি আলমারি। বন্ধুদের সঙ্গে আমার বসার কথা বেলা তিনটায়। আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর শহরের আশপাশটা ঘুরে দেখতে বের হলাম।

জাহিদ আমাকে প্রথমে পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনালে নিয়ে গেলেন। নদীর নাম লোহালিয়া। ততটা বড় না হলেও আঁকাবাঁকা নদী আর দুই পাশের লোকালয় মিলে বেশ সুন্দর লেগেছে। তারপর একে একে নতুন বাজার, নিউমার্কেট, পুরাতন আদালতপাড়া, পরিত্যক্ত পটুয়াখালী পাবলিক লাইব্রেরি, সরকারি কলেজ এবং সবশেষে গেলাম শিঙাড়া পয়েন্ট। এই শিঙাড়া পয়েন্টের নাম এক শিঙাড়া দোকানকে কেন্দ্র করেই। পটুয়াখালী যাঁরা যান, একটু হলেও পরখ করে আসেন এই শিঙাড়ার স্বাদ। আমার কাছেও দারুণ লেগেছে ছোট ছোট শিঙাড়া।

বেলা তিনটায় বসার কথা থাকলেও অনেকে আগে চলে আসেন বন্ধুসভার কক্ষে। ইতিমধ্যে প্রথম আলোর প্রতিনিধি শংকরলাল দাসের সঙ্গে আলাপ হলো। নতুন–পুরোনো মিলে প্রায় ২০ জন বন্ধু উপস্থিত হয়েছিলেন আলোচনায়। তাঁদের মধ্যে আছেন জাহিদা আক্তার, জাহিদ হাসান, সুস্মিতা মণ্ডল, প্রতিমা দাস, রুখসানা আলম, আমিনা আক্তার, আদিবা মেহনাজ, মৌমিতা দাস, রাবেয়া সাবরিন, মেহেদী হাসান, সৌমিক পাল, নিরব হাসান, রিফাত হাসনাইন, দিপ্র দাস, বনি আমিনসহ আরও বন্ধুরা।

পরিচয় পর্ব সেরে আমরা শুরু করি মূল আলোচনা। বন্ধুসভা কী এবং একজন মানুষ কেন বন্ধুসভা করবেন ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হয়। বন্ধুরা মনোযোগ দিয়েই শুনলেন সব। তারপর নানা অজানা বিষয় জানতে চেয়ে প্রশ্ন উপস্থাপন করেন বন্ধুরা। উত্তরও দেওয়া হলো তৎক্ষণাৎ।

সংগঠনকে আরও উজ্জীবিত রাখতে নানা কর্মপরিকল্পনা ও টনিক হিসেবে সাংগঠনিক সফরগুলোর প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন অনেক বন্ধু। ফোনকলে বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি রওশন ভাইয়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। কক্ষেই সবাই একত্র হয়ে ছবি তোলার মাধ্যমে বৈঠকের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।