বান্দরবানের গল্প

রুকাইয়া জহির
রুকাইয়া জহির


তখন রাত ৮টা। একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হচ্ছিলাম আমরা। গন্তব্য বান্দরবান। রাত ১০টায় বাস ছেড়ে দিল। স্বপ্নভ্রমণের শুরু। বান্দরবান পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর সাড়ে ৪টা বেজে যায়। ওখানে হোটেলে উঠে, ব্যাগপত্র রেখে, ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা করে নিলাম।

বান্দরবান ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।
বান্দরবান ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।


এবারে অপেক্ষা চান্দের গাড়ির জন্য। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার শুরু মূলত এই চান্দের গাড়ির সঙ্গেই। একেক গাড়িতে মোট ১২ জন করে উঠে পড়লাম। গান আর আড্ডায় শুরু হলো বান্দরবান নীলগিরি যাত্রা। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথ চলতে চলতে আর গান গাইতে গাইতে কখন যে মেঘের রাজ্যে হারিয়ে গেছি খেয়ালই ছিল না। এদিকে সূর্য কেবল আলো ছড়াচ্ছে। থোকা থোকা মেঘের ওপর সূর্যের প্রথম কিরণ চমক দিচ্ছে।

এরই মাঝে বিজিবি গাড়ি থামিয়ে পরিচয়পত্র চেক করল। আমাদের যিনি গাইড ছিলেন তাঁর সঙ্গে কথা বলল । তারপর আবার পথচলা। এখানে আগাগোড়া সবুজ চাদরে মোড়া পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে মেয়েরা জুম চাষ করে। আর ছোট ছোট টং দোকানে পাওয়া যায় আনারস, পেঁপে, বাতাবিলেবু, কলা, পেয়ারাসহ পাহাড়ি সবজি।

প্রায় দুই ঘণ্টা চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম নীলগিরি।  সেখানে নেমে টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম নীলগিরি হিল রিসোর্টে।  ওখান থেকে মনে হচ্ছিল হাত বাড়ালেই মুঠোভরা মেঘ। সাদা মেঘের ভেলা, অক্সিজেনপূর্ণ বিশুদ্ধ বাতাস আর রবি কিরণ নীল আকাশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে । এখানে উঠে চারদিকে পাহাড় আর কোলঘেঁষা মেঘ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। একটু দূরে সাঙ্গু নদীর ওপর মেঘেদের ভেলা যেন সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে। হেলিপ্যাডে পৌঁছে সবাই ছবি তুললাম। পাহাড় বেয়ে উঠে ক্লান্তি দূর করার জন্য ওখানে বিভিন্ন বেঞ্চ বসানো হয়েছে। বসে থেকে কখন যে দুপুর ১২টা বেজে গেছে, আমাদের ট্যুর গাইড তাড়া দিচ্ছিলেন।

এরপর গেলাম খ্যাত চিম্বুক পাহাড়ে। এখানকার সৌন্দর্য আরও আকর্ষণীয়।  মেঘ,পাহাড় আর সমুদ্র একসঙ্গে হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড ও ভিউ পয়েন্ট। এবার নেমে আসার পালা। ফেরার পথে দেখলাম পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নেমে আসা শৈলপ্রপাত। জলে পা ডুবিয়ে মনে হচ্ছিল এর চেয়ে শান্তির আর কিছু নেই। ওখানে পাহাড়ি টংঘরে বিভিন্ন প্রকার আদিবাসী জামাকাপড়, শাল পাওয়া যায়।
এরপর টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে হোটেলে ফিরে এলাম।

দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে চললাম মেঘলা রিসোর্টের উদ্দেশে। রয়েছে দুটো ঝুলন্ত সেতু। পাহাড়ের ওপর আছে একটা ছোট চিড়িয়াখানা। বিভিন্ন প্রজাতির বানর, চিতাবাঘ, শজারুসহ পাহাড়ি বিভিন্ন প্রাণির বসবাস ওখানে।  এখানে লেকে নৌকাভ্রমণ ও পাহাড় থেকে পাহাড়ে কেব্‌লকারে ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। সবমিলিয়ে মহানন্দে কেটে গেল পুরো দিন।