রোবকু

তাহলে তুমি বলছ?
হ্যাঁ, বলছি। গুলশানেই রোবট শপ আছে। ওখানে রোবট বিক্রি হয়।
ফাইয়াজ বলল কাকাকে। সে খবর পেয়েছে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে। এরপর সে নেটেও সার্চ করেছিল।
ছোট কাকা শাকির জানতে চান, একটা রোবটের কী রকম দাম?
ফাইয়াজ বলল, পঞ্চাশ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত।
কাকা বললেন, ঠিক আছে চল।
ফাইয়াজ একটা রোবকু পছন্দ করল। রোবকু মানে রোবট কুকুর।
কাকা বললেন, এটা কেনার দরকার কী। এটা না কিনে জ্যান্ত একটা কুকুর কিনলেই পারিস। চল, নীলক্ষেত থেকে একটা বিদেশি কুকুরের বাচ্চা কিনে দিই।
ফাইয়াজ চিৎকার করে বলল, না—না। এসব চলবে না। তা ছাড়া দিদা কুকুর পছন্দ করে না।
ঘুরে ঘুরে তারা রোবট দেখছে। হঠাৎ একটি রোবকু ঘেউ ঘেউ শুরু করল। যেন কাকা আর ফাইয়াজকে দেখে সে বিরক্ত হয়েছে।
বিক্রেতা মেয়েটা এসে বলল, শুভ দুপুর। দেখুন, আপনাদের কোন রোবকুটা পছন্দ হয়?
কাকা বললেন, এই কুত্তাটার কী রকম দাম পড়বে?
বিক্রেতা মেয়েটি বেশ লম্বা। দেখতে খুব সুন্দর। জিনসের প্যান্ট আর টি–শার্ট পরা। কাকার দিকে তাকিয়ে মন ভার করে বলল, স্যরি, আপনাদের কাছে কুকুর বিক্রি করা যাবে না। অন্য কিছু পছন্দ করেন।
কাকা বললেন, কেন?
ফাইয়াজ বলল, কেন, কী হয়েছে?
মেয়েটির নাম পূর্বাশা। সে বলল, কিছু মনে করবেন না স্যার। কুকুরকে কেউ কুত্তা বললে আমরা তার কাছে কুকুর বিক্রি করি না। তা ছাড়া রোবকু আপনাদের সঙ্গে যাবেও না।
মেয়েটি আরও বলল, দেখুন, ও আমাদের এখান থেকে চলে গেছে।
সত্যিই তাই। রোবকুকে আশপাশে কোথাও দেখা গেল না।
ফাইয়াজ কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল।
কোথায় গেল সে?
পাশের রুমে।
তিনজনই এগিয়ে গেল সেদিকে। গিয়ে দেখল কুকুরটা কুঁইকুঁই করছে। ফাইয়াজ জানতে চায়, ও এমন করছে কেন?
পূর্বাশা বলল, হি ইজ ক্রাইং। এমনভাবে কথাটা বলল, যেন সে নিজেই এখন কেঁদে ফেলবে।

ওই সময়ই একটি গাড়ি এসে থামল দোকানের সামনে। গাড়ি থেকে নামানো হলো এক ভদ্রলোককে। এরপর তাকে একটি হুইলচেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হলো। তিনি দোকানে ঢুকলেন।
হঠাৎ কাকু চিৎকার করে উঠলেন—তুই শেরতাজ না? শিকড়ীপাড়া স্কুলে পড়তাম, মনে আছে?
লোকটিও চিৎকার করে উঠল—আরে শাকির। তোর চুল দেখি পেকে গেছে। কত বছর পর দেখা।
তারা পাশের একটি রুমে গিয়ে বসলেন। শাকির জানতে চাইল, শেরতাজ, তুইও কি আমার মতো রোবট কিনতে এসেছিস?
শেরতাজ হাসলেন।
না, না।
পূর্বাশার মন খারাপ হয়েছিল। সে বলল, ইনিই রোবট বানান। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক।
শাকির যেন অবাক হলেন।
বললেন, তা তোর এ অবস্থা?
আর বলিস না। তিনতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিলাম। অনেক দিন হয়ে গেল। তখন নটর ডেম কলেজে মাত্র ভর্তি হয়েছি। তা তোর খবর বল?
ফাইয়াজ বলল, আঙ্কেল, আমরা একটি রোবট কুকুর কিনতে এসেছি।
গুড। একটা কুকুরই আছে।
পূর্বাশা বলল, স্যার, ওটা আমরা এদের কাছে বিক্রি করতে পারব না।
কেন?
পূর্বাশা পুরো ঘটনা খুলে বলল।
শেরতাজ খান বললেন, দোস্ত, তাহলে তো কিছু করার নেই।
ওই সময়ই কুকুরটা খটখট শব্দ করে এগিয়ে এল।
বলল, শুভ দুপুর।
ফাইয়াজের চোখ টলমল করে উঠল। এক্ষুনি সে কেঁদে দেবে যেন।
শেরতাজ খান রোবকুর দিকে তাকিয়ে জানতে চান, তুমি কি ওদের সঙ্গে যাবে?
রোবকু বলল, নো।
সত্যি যাবে না?
না, আমি কোথাও যাব না।
আরেকটা মেয়ে কফি নিয়ে এল।
শেরতাজ খান বললেন, ইলিনা, এটা কী করলে। শুধু কফি দিলে? বিস্কুট দেবে না?
সে দৌড়ে গেল ভেতরে।
নিয়ে আসছি স্যার।
কাকা বেশ লজ্জা পেয়েছেন। কফিটাও লজ্জায় খেতে পারছেন না। কেন যে তিনি কুকুরকে কুত্তা বলতে গেলেন।
কাকা আস্তে আস্তে ফাইয়াজকে বললেন, চল, নীলক্ষেতে যাই। জ্যান্ত একটা কুকুর কিনে দিই।
ফাইয়াজ মন খারাপ করে অন্য রুমে চলে গেল।
পূর্বাশা বলল, নীলক্ষেত থেকে কুকুর কিনলেই ভালো হবে আপনাদের।
কাকা বললেন, হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি।
বেশ বড় দোকান। বসার জায়গাও আছে প্রতিটি রুমে। ফাইয়াজ একটা সোফায় গিয়ে বসল।
হঠাৎ সে দেখতে পেল ওই কুকুরটা ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
সোফায় আরাম করে বসেছিল ফাইয়াজ।
রোবকু এসে বলল, তোমার নাম কী? আমার নাম নাগাসাকি।
আমার নাম ফাইয়াজ।
ফাইয়াজের মনে পড়ল হিরোশিমা–নাগাসাকির কথা। জাপানের ওই দুটি জায়গায় আমেরিকানরা বোমা ফেলেছিল।
হুইলচেয়ার নিয়ে সেখানে এলেন শেরতাজ খান এবং সঙ্গে শাহ সিকান্দার শাকির।
অন্য কোনো রোবট নেবে? শেরতাজ খান জানতে চান।
ফাইয়াজ বলে, না, আঙ্কেল। চলো কাকা, বাসায় যাই।
হুইলচেয়ার নিয়ে শেরতাজ খান দরজার সামনে আসেন বন্ধুকে এগিয়ে দিতে।
ফাইয়াজ পেছনে। হঠাৎ তার কানে ভেসে এল নাগাসাকির পায়ের শব্দ। সে হেঁটে হেঁটে তার দিকেই এগিয়ে আসছে।
নাগাসাকি বলল, ফাইয়াজ, তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি তোমার সঙ্গে যাব। ফাইয়াজ বলল, তোমাকেও আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি তোমাকে খুব আদর করব। ভালোবাসব।
সে আবেগে চিৎকার করে উঠল। কাকা। এদিকে এস।
দৌড়ে এল পূর্বাশা, ইলিনা।
নাগাসাকি শেরতাজ খানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি ফাইয়াজের সঙ্গে যেতে চাই।
পূর্বাশা জোরে ডাকল, স্যার। সে দৌড়ে গেল গেটের কাছে। হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে ফাইয়াজের দিকে এগিয়ে এলেন।
রোবকু কোলে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এল ফাইয়াজ। রোবকুর মাথায় একটা চুমু দিয়ে পূর্বাশা বলল, বাই। ভালো থেকো।
কাকার দিকে ঘুরে রোবকু বলল, কাকু, আমার নাম নাগাসাকি। তোমার নাম কী?
কাকা তার মাথায় হাত রেখে বলল, আমি তোমার কাকা হই। আমার নাম শাহ সিকাদার শাকির।