দূর হোক চোখের নিচের কালি

দূর হোক চোখের নিচের কালি।
দূর হোক চোখের নিচের কালি।


সুন্দর এক জোড়া চোখ সবারই কাম্য। চোখকে সুন্দর করে উপস্থাপন করে তোলার জন্যই এত প্রসাধনী আর প্রচেষ্টা। চোখকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য প্রয়োজন চোখসহ চোখের পাপড়ি ও চোখের উপরিভাগ এবং নিচের মাংসপেশির যত্ন।
বিভিন্ন কারণে চোখের নিচে কালি জমতে পারে বা চোখের পাপড়িতে ময়লা জমে অসুখ হয়। সামান্য কিছু স্বাস্থ্যসচেতনতা ও পরিচর্যা আপনার চোখকে করবে আরও বেশি আকর্ষণীয়।
চোখের নিচে কালি জমে যাওয়ার কারণ

১. অতিরিক্ত রাত জেগে পড়া, টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করা এবং দিনে সঠিকভাবে বিশ্রাম না নেওয়া।
অতিরিক্ত কাজের পরে, বিশেষত চোখ ও চোখের পাতা বন্ধ করে রাখলে চোখের বিশ্রাম হয়।
অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্যও চোখের নিচে কালি জমতে পারে। যদি সঠিক সময়ে খাওয়া না হয়, দীর্ঘদিন যাবৎ এমন অনিয়ম হলে এ সমস্যা হয়।
২. অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির সমস্যাতেও এমন হয়। দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড (দেহের জন্য জরুরি উপাদান) বের হয়ে গেলে রক্তে অম্ল ক্ষারের সাম্যাবস্থাতে বিঘ্ন ঘটে।
তখন প্রচুর পরিমাণে লবণপানি বা পানি খেতে হয়। এ সমস্যায় চোখের নিচে বসে যায়। অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার পরেও এ সমস্যা হতে পারে (খেয়াল রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা রান্না ব্যতীত লবণ খাবেন না। কাঁচা লবণ দ্রুত রক্তচাপ বাড়ায়)।
৩. টাকা বাঁচানোর জন্য যেনতেন কোম্পানির তেল, প্রসাধনীর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য চোখের নিচে কালি জমতে পারে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক অবসাদ, পারিবারিকভাবে চোখের নিচের গঠন, দীর্ঘ বছর যাবৎ উচ্চ রক্তচাপ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার কারণেও এমন হতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি (ট্যাবলেট) বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের জন্য চোখের নিচে কালি জমে না।
৪. সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার না করলে দিনের পর দিন ময়লা জমে চোখের নিচে কালি, চোখের পাতাতে ইনফেকশনও হতে পারে।
চোখের মেকআপ সঠিকভাবে নিয়মিত পরিষ্কার না করলেও চোখের পাপড়িতে রোগজীবাণু আক্রমণ করে, হতে পারে ইনফেকশন বা অ্যালার্জি–জাতীয় যাবতীয় সমস্যা।
৫. মেয়াদোত্তীর্ণ কম দামি, অখ্যাত কোম্পানির প্রসাধনীও তৈরি করতে পারে চোখের নিচে কালি। মারাত্মক ডায়রিয়া, বড় কোনো অপারেশন, গর্ভাবস্থা, সন্তান জন্মদানের পরে, অতিরিক্ত বমি বা ডায়রিয়া।
৬. ফেসিয়াল করার সময় চোখের নরম মাংসপেশিতে অসাবধানতাবশত ঘষাঘষির জন্যও দাগ হতে পারে।
প্রথর রোদের তাপে দীর্ঘক্ষণ থাকলে চোখের ওপরে কালি জমে। দীর্ঘদিন কড়া রোদে থাকলে দাগ স্থায়ী হয়ে যায়।
রক্তশূন্যতা, হঠাৎ করে প্রচুর ব্যায়াম, আবহাওয়ার পরিবর্তনও এ অবস্থার জন্য দায়ী।
চোখের নিচে কালি প্রতিরোধে করণীয়
১. নিয়মিত মুখ, মাথাসহ পুরো শরীর পরিষ্কার রাখতে হবে। সৌন্দর্যের আশাতে প্রসাধনী ব্যবহারের পূর্বে যাচাই–বাছাই না করে ব্যবহার করবেন না।
সানস্ক্রিন ক্রিম চোখের নিচে ও পাতার ওপরে লাগাবেন না। পরিহার করুন মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী, খাবার, অতিরিক্ত রৌদ্রের তাপ, দীর্ঘদিন যাবৎ রাত জেগে পড়া বা ল্যাপটপে কাজ করা, হঠাৎ করে কঠোরভাবে ব্যায়াম বা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
ধীরে ধীরে খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন। হঠাৎ অতিরিক্ত ব্যায়াম ও খাবার নিয়ন্ত্রণে বিরূপ প্রভাব পড়ে ত্বক, চুল, নখ, চোখের নিচের মাংসপেশি ও হাড়ের ওপর।
২. একই প্রসাধনী দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহারের পরিবর্তে ভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত রাত জাগা, দুশ্চিন্তা, দীর্ঘ বছর যাবৎ জন্মনিয়মন্ত্রণ বড়ি পরিহার করুন।
পান করুন প্রচুর পরিমাণে পানি। এতে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের পরিমাণও কমবে। আর পানি দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। নিয়মিত ও প্রচুর পানি পান করলে এবং তৈলাক্ত খাবার তুলনামূলক কম খেলে চোখের নিচে কালি পড়বে কম।
৩. অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার পরে ওরস্যালাইন বা লবণপানি খান।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও ব্লাড প্রেশার মাপাবেন। দীর্ঘ বছর যাবৎ একই রকম ডায়াবেটিস বা প্রেশারের ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চোখের নিচে কালি জমতে পারে।
৪. দৈনিক রাতে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুম ভীষণ জরুরি। বাইরে থেকে এসে সঠিকভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মেকআপ থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
অতিরিক্ত প্রসাধনীর পরিবর্তে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম থাকে।
রোদে বের হলে ছাতা বা সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। খুব ক্লান্তিতে কাজের ফাঁকে ১৫-২০ মিনিট চোখের পাতা বন্ধ করে রাখুন। একটা তুলা হালকা ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এতে ময়লা পরিষ্কার হয় আর সেই সঙ্গে চোখের মাংসপেশির বিশ্রাম হবে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ান। মৌসুমি ফল, শাকসবজি দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য ভীষণ জরুরি। বিশেষত শাক, ছোট মাছ চোখের পাতা ও মাংসপেশির পুষ্টির জন্য অপরিহার্য। আর দূর করতে হবে বিষণ্নতা। বিষণ্নতার কারণেও চোখের নিচে কালি জমে।