শীতবস্ত্র বিতরণ করছে সিলেটের বন্ধুরা

শীতবস্ত্র বিতরণ করছে সিলেটের বন্ধুরা।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছে সিলেটের বন্ধুরা।


সিলেট নগরের রায়নগর এলাকার একটি কলোনিতে ভাড়া থাকেন লক্ষ্মী রানী গোপ (৫০)। তাঁর ছেলে বিয়ে করে মাকে ছেড়ে আলাদা থাকছেন। তাই জীবন–জীবিকার তাগিদে মিরাবাজার এলাকার একটি মেসে বুয়ার কাজ করেন। এই হাড়কাঁপানো শীতে প্রতিদিন কোনো শীতের কাপড় ছাড়া কাজে বের হন তিনি। শীত আসার পর থেকেই প্রতিদিন লক্ষ্মী রানীকে এভাবেই কাজ যেতে দেখেন সিলেট বন্ধুসভার প্রচার সম্পাদক হিমাদ্রি শর্মা। হিমাদ্রি বুঝতে পারলেন তাঁর চেয়ে বেশি শীতবস্ত্র পাওয়ার দাবিদার আর কেউ হতে পারেন না। তাই বন্ধুসভার চলমান শীতবস্ত্র বিতরণে লক্ষ্মী রানীকে একটি কম্বল উপহার দেন হিমাদ্রি।
কম্বলটি পেয়ে লক্ষ্মী রানী খুশিতে অশ্রুসিক্ত হন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন পর্যায়ে আছি, কারও কাছে সাহায্যও চাইতে পারি না। লোকলজ্জার ভয়ে কম্বল আনার জন্য লাইনেও দাঁড়াতে পারি না। এই ছেলেটা হঠাৎ আমাকে একটা কম্বল এনে দেয়। এই কম্বলটা পেয়ে আমি যে কত খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না।’
এসব নিম্নবিত্ত মানুষের শীতের কষ্ট নিবারণের জন্যই এবার ভিন্নভাবে কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নেয় সিলেট বন্ধুসভা। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, বন্ধুসভার সদস্যদের আশপাশের এলাকার যত খেটে খাওয়া লোকজন আছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম্বল দিয়ে আসবেন। সেই লক্ষ্যে গত ৪ জানুয়ারি থেকে প্রকৃত শীতার্তদের খুঁজে বের করে কম্বল বিতরণ শুরু করেন সিলেট বন্ধুসভার সদস্যরা। ওই দিন প্রকৃত শীতার্তদের খুঁজে বের করে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য সিলেট বন্ধুসভাকে ৪০০ কম্বল প্রদান করে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর সিলেট বন্ধুসভা শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি পালন করে। ওই দিন সিলেটের মাখরখোলা, কালাগুল, টিল্লাপাড়া গ্রাম ও হিলুয়াছড়া চা–বাগান ও রাবারবাগানের ১২০ জন শীতার্ত শ্রমিকের মধ্যে শীতের উপহার প্রদান করো হয় ।
সিলেট নগরের উত্তর বাগবাড়ি এলাকার নূর বিবি (৬৯) গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাঁর বাসায় কম্বল নিয়ে যান সিলেট বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সৌরজিৎ রায় ও দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক মেহরাব আহমেদ চৌধুরী।
নূর বিবি বলেন, ‘আমরা শীতের মাঝে কষ্ট করি। কিন্তু কেউ ইলান বাড়িত আইয়া কম্বল দেয় না। কম্বল বাটার টোকেনও কেউ আমারারে দেয় না। আর রাস্তাত যারা কম্বল দেয় তারার কাছ থাকিও টানাটানি করি কম্বল আনতে পারি না। আমার মতো মানুষরে তাঁরা ঘরো আইন্না কম্বল দিছুইন। আল্লায় তাঁরারের হায়াত, রিজিক বাড়াই দিতা এই দোয়া করি।’

শীতবস্ত্র বিতরণ করছে সিলেটের বন্ধুরা।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছে সিলেটের বন্ধুরা।


শহরতলির কুচার পার এলাকার আমেনা খাতুন (৩০)। তিনি মাটি কাটার কাজ করেন। প্রতিদিন সকালে বের হন কাজে। দিন শেষে বাড়ি ফেরেন। আমেনাকেও একটি কম্বল দিয়েছেন সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরা। আমেনা বলেন, ‘আমি মাটি কাটার কাজ করি সংসার চালাই। পুলাপানের শীতের কাপড় কিন্না দিছি। কিন্তু নিজের লাইগ্গা একটা চাদ্দর কিনার টাকা নাই। প্রতিদিন কাজ করি কিন্তু ঠিকঠাক মতো টাকাও পাই না। এই রকম কম্বলও দিয়া আর কেউ সাহায্য করসে না।’
এ ব্যাপারে সিলেট বন্ধুসভার সভাপতি তামান্না ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছি এবার শুধু হতদরিদ্র মানুষদের নয়, নিম্নবিত্ত মানুষদেরও শীতবস্ত্র দেব। কারণ, যাঁরা নিম্নবিত্ত তাঁরা গতানুগতিক শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে আসতে চান না। অনেকে আবার এসব অনুষ্ঠানের খবরও পান না। আবার অনেকেই মনে করেন তাঁরা শীতবস্ত্র পাওয়ার যোগ্য না। তাই তাঁদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বিভিন্ন কারণে বঞ্চিত হন। সেসব শীতার্ত মানুষের কষ্ট নিবারণ করতেই আমরা বন্ধুসভার সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে বের করে প্রকৃত শীতার্ত মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি।’