সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে

সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।
সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।


২২ জানুয়ারির সকালটা ছিল ঢাকা মহানগরের ৫৫০ জন বন্ধুর জন্য অন্যরকম কৌতূহলের। সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আশুলিয়ার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কারওয়ান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে উপস্থিত হন একদল বন্ধু। দ্রুত নিবন্ধন করার জন্য খুঁজতে থাকেন হেল্পডেস্ক। উপস্থিত বন্ধুদের চোখমুখে কৌতূহল, জিজ্ঞাসা—কোন বন্ধুসভা আগে উপস্থিত হয়েছে। উদ্দেশ্য ঢাকা মহানগর বন্ধু সম্মেলন-২০২০–এর অনুষ্ঠানের অংশ হওয়া।
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’ শিরোনামের আয়োজনে শুরু থেকে ছিল বন্ধুদের উচ্ছ্বাস। মহানগরের ১৮টি বন্ধুসভার ৫৫০ জন সদস্য সম্মেলনে যোগ দেন। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত ও বন্ধুসভার থিম সং ‘ও বন্ধু সব বন্ধু’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় মূল পর্ব। উপস্থাপক মৌসুমী মৌ মঞ্চে ডাকেন মহানগর বন্ধু সম্মেলন-২০২০–এর আহ্বায়ক জান্নাতুল বাকেরকে। আগত বন্ধুদের স্বাগত জানান তিনি।
এরপর সম্মেলন উদ্‌যাপন পর্ষদের উপদেষ্টা শাকিল মাহবুব ও মুমিত আল রশিদ বক্তব্য দেন। পরে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দন্ত্যস রওশনের উপস্থাপনায় মঞ্চে আসেন মহানগরের বিভিন্ন বন্ধুসভার বিদায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বন্ধুসভা নিয়ে নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেন তাঁরা।

সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।
সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।


এরপর ছিল বন্ধুসভা ও ক্যারিয়ার–বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্ব। বন্ধুরা প্রশ্ন করেন সম্মেলনের উপদেষ্টা, আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে। উত্তর দেন সম্মেলনের উপদেষ্টা ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দন্ত্যস রওশন, জাতীয় পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি শাকিল মাহবুব, সহসভাপতি মুমিত আল রশিদ, সম্মেলনের আহ্বায়ক জান্নাতুল বাকের ও সদস্যসচিব কামরুন্নাহার মৌসুমী।
আয়োজনে বন্ধুদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর মতো একই উদ্দেশ্য নিয়ে বন্ধুসভা কাজ করে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নিয়ে বন্ধুসভা এগিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে পড়ে, সিডরের সময় আট মাস ধরে বন্ধুসভা কীভাবে কাজ করেছে। অ্যাসিড–সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়েছে। সরকার অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনও করেছে। আমরা বলতে পারি, এটি বন্ধুসভার একটি সফলতা। বন্ধুসভা একটি করে নতুন জামা কার্যক্রম, একজন বন্ধু দুটি গাছসহ বেশ কিছু ভালো কার্যক্রম করে। আমরা চেষ্টা করছি প্রথম আলোর পাঠক ও বন্ধুসভার বন্ধুদের নিয়ে নতুন একটা প্রজন্ম তৈরি করার। যারা হবে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। প্রথম আলোর পাঠক ও বন্ধুসভার বন্ধুদের নিয়ে আমরা বাংলাদেশের জয়যাত্রায় অংশ নিতে চাই।’
আনিসুল হক বলেন, ‘সক্রেটিসের কথায় দেশপ্রেম হলো নিজের কাজ ভালোভাবে করা। আমাদেরও উচিত নিজের কাজটা সঠিকভাবে করে দেশটা গড়ে তোলা। বাংলাদেশের চাকাটা এগিয়ে নিতে আমরা সবাই ঠেলছি। সবাই যে পারবে এমন নয়, তবে চেষ্টা করতে হবে। আমরা সবাই জেগে উঠব। নিজেরা জাগব, অন্যদের জাগাব।’
কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম বলেন, ‘বন্ধুসভার কাজে আমি অভিভূত। তরুণেরা যতটা মানবিক কাজে যুক্ত হবে, দেশটা তত সুন্দর হবে। আমাদের তরুণেরা এখন অনেকটা হতাশ। আমি মনে করি, বন্ধুসভার বন্ধুদের মতো বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকলে হতাশা কেটে যাবে।’

সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।
সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।


ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দিন হাসান বলেন, ‘বন্ধুসভার কাজের পরিধি জেনে আমি অভিভূত। তরুণ-তরুণীরা এত ভালো ভালো কাজ করেন দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। আমরা যদি দেশকে কিছু দিতে চাই, তাহলে আমাদের নিজেদের কাজটা ভালোভাবে করতে হবে। আমাদের গ্রুপটা শূন্য থেকে শুরু করে আজ প্রায় ৩২টা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বন্ধুসভার বন্ধুদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, আমরা সব সময় নিজেদের ভিত্তি মজবুত করি।’
পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘অহেতুক আমরা হীনম্মন্যতায় ভুগব না, অন্যের দোষ খোঁজার চেষ্টা করব না। বন্ধুসভা একটা বড় শক্তি। আমরা শুধু অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না। আমরা নিজেদের মধ্যে আরও কাজ বাড়িয়ে দেব। যার যা ইচ্ছে সেটি নিয়ে এগিয়ে যাব। নিয়মিত জ্ঞানী-গুণী মানুষের সংস্পর্শে যাব। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নয়, অন্যান্য বিষয়েও গুরুত্ব দেব। বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, বিপদের জন্য, বিপাকের জন্য এবং হারানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি দন্ত্যস রওশন বলেন, বন্ধুসভা করা মানে দেশের কাজ করা। সারা দেশের লাখো বন্ধু এ কাজের সঙ্গে যুক্ত।
সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বন্ধুসভার কমিটি ঘোষণা করেন আনিসুল হক। উত্তম রয়কে সাভাপতি ও গাজী আনিসকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার কমিটি। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বন্ধুসভার কমিটি ঘোষণা করেন অতিথিরা।

সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।
সেদিন দেখা হয়েছিল ৫৫০ জন বন্ধুর সঙ্গে।


অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বন্ধুদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন নাগরিক টেলিভিশনের সিইও আব্দুন নূর তুষার। বন্ধুদের মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এরপর মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী কনা। বন্ধুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে বন্ধুদের একজন মনে করি। বন্ধুরা একসঙ্গে অনেক ভালোভালো কাজ করেন, বন্ধুত্ব বজায় রেখে একসঙ্গে চলেন। বিষয়টা আমার ভালো লাগে। ভবিষ্যতে বন্ধুদের বিভিন্ন কার্যক্রমে আমিও যুক্ত হতে চাই।’ বক্তব্য শেষে বন্ধুদের অনুরোধে তিনি ‘ওহে শ্যাম’ ও ‘তুই কি আমার হবি রে’ গান দুটি পরিবেশন করেন।
বক্তব্য পর্ব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। গান পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্য ইমন গোস্বামী, কাওসার আহমেদ , নৃত্য পরিবেশন করেন আনন্দিতা খান, রাখিয়া সুলতানা, উম্মে হাবিবা ও সুপ্রিয়। ড্যাফোডিল বন্ধুসভার জেরিন আফরিন নিশির নেতৃত্বে ছিল দলীয় নৃত্য। কবিতা আবৃত্তি করেন সাদিয়া আলম, জান্নাতুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন মোহতারিমা রহমান।
সন্ধ্যায় বন্ধুদের ফ্রেমবন্দী হওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় দিনের আয়োজন। বন্ধুদের এই মিলনমেলায় ছিলেন সাবেক অনেক বন্ধু। বিভিন্ন বন্ধুসভার কমিটি ঘোষণা করা এবং নবীন বন্ধুদের উদ্দেশে স্মৃতিচারণা করার মাধ্যমে তাঁরা যুক্ত ছিলেন এই আয়োজনে।
বন্ধুসভার এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সিটি ক্যাম্পাস ও স্থায়ী ক্যাম্পাস), সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, যাত্রাবাড়ী বন্ধুসভা, মিরপুর বন্ধুসভা, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভার বন্ধুসভা, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা বন্ধুসভা, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল বন্ধুসভা অংশ নেয়।