একজন হৃদয়বান চিকিৎসক

চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম
চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম


বাংলাদেশের মহান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম। যিনি বারডেম হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা।
হৃদয়বান এই চিকিৎসক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। ভারতের মুর্শিদাবাদে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালে। কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন ১৯৩৮ সালে। এমআরসিপি ডিগ্রি নেন ১৯৪৯ সালে। লেখাপড়া, শৃঙ্খলা, মানবসেবা আর দেশপ্রেমে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ছিলেন মেডিসিন ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসক। তিনি সব সময় বলতেন, ডায়াবেটিস আছে, এমন দরিদ্র ব্যক্তিরাও যেন না খেয়ে, চাকরি ও চিকিৎসার অভাবে মারা না যায়। ধনী-দরিদ্র, বিশেষত যাঁরা অসহায়, তাঁরা কেউ যেন ডায়াবেটিসের চিকিৎসার অভাবে মারা না যান।
এ উদ্দেশ্যে ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন। পরে ১৯৫৭ সালে সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠা করেন আউটডোরে রোগী দেখার ব্যবস্থা। শাহবাগে ১৯৮০ সালে তিনি স্থানান্তর করেন তাঁর ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামের সেন্টারটি। এই সেন্টারটিই বর্তমানের বারডেম হাসপাতাল। ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ডায়াবেটিক সেন্টারটি ১৯৮২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ডায়াবেটিস হাসপাতালে পরিণত হয় এবং আরও বড় ও ব্যাপক পরিসরে ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও প্রতিরোধ শুরুর জন্য কাজ করতে থাকে, যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ছিল ডায়াবেটিসের জন্য প্রথম এমন একটি প্রতিষ্ঠান।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় গড়ে তোলা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সেই ছোট্ট সেন্টারটিই আজ পৃথিবীর বিখ্যাত এই হাসপাতালে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীসহ অন্য রোগীদেরও চিকিৎসা হয়। বর্তমানে এটি প্রায় ৭০০ বেডের হাসপাতাল। এই হাসপাতালে একই সঙ্গে চিকিৎসা, অপারেশন ও গবেষণা হয়। 
অধ্যাপক ডা. ইব্রাহিম স্বপ্ন দেখতেন, তাঁর হাসপাতাল হবে দরিদ্রদের সেবা করার জন্য সেরা প্রতিষ্ঠান।
মাত্র ২৩ জন রোগী নিয়ে শুরু হওয়া তাঁর ওই সেগুনবাগিচার হাসপাতালের বর্তমান পরিণতি আজ শাহবাগের বারডেম হাসপাতাল। এখানে একই সঙ্গে হাজার হাজার রোগীর চিকিৎসা হয়। গবেষণা ও জরিপ করে দেখা গেছে, এটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল যে একই সঙ্গে এবং এক ছাদের নিচে এত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হয়, যা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও হয়নি।
ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের স্বপ্ন পূরণের প্রয়াসে, দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য ২০০২ সাল থেকে চালু হয়েছে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ। বর্তমানে নার্সিং কলেজও সফলভাবে চলছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক গবেষক বারডেমে আসেন গবেষণা করার জন্য।
একজন অধ্যাপক ডা. ইব্রাহিমের বারডেম হাসপাতাল মেলেই চলেছে তাঁর স্বপ্নের ডালপালা। স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক ডা. ইব্রাহিম মারা যান ঢাকায়, ১৯৮৯ সালে। তাঁর বারডেম হাসপাতালের স্ত্রী প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, শিশু বিভাগ এবং হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ বর্তমানে স্থানান্তরিত রয়েছে সেগুনবাগিচায়। শাহবাগে স্থান সংকুলানের অভাবে বিভাগগুলো সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং বর্তমানে সেখানে চলছে সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা। অধ্যাপক ইব্রাহীম অমর হয়ে রয়েছেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে।
ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীমের বাবা ছিলেন ভীষণ পরোপকারী। তিনি বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। বাবার সংগৃহীত অধিকাংশ বই তিনি কিশোর বয়সেই পড়েছেন। মানুষের উপকার করার অদম্য ইচ্ছা তাঁর বাবার কাছে থেকেই পাওয়া। তাঁর প্রাণের বারডেম হাসপাতালে আজ দেশের বাইরে থেকেও চিকিৎসকেরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিচ্ছেন। অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই হাসপাতালে। তিনি সময়ের শতভাগ মূল্য দিতেন।
ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের বারডেম হাসপাতাল এখন শাহবাগ আর সেগুনবাগিচায় সফলভাবে প্রতিনিয়ত অগণিত মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি ছিলেন চিকিৎসাজগতের এক আলোকবর্তিকা।