আমি বটবৃক্ষ বলছি


আমার নাম বটবৃক্ষ।
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল এক বৃক্ষ আমি। আমার অজস্র শাখা-প্রশাখা আর শতসহস্র পাতাজুড়ে কালের বিশাল ইতিহাস।
আমি ভীষণ মমতাময়ী এক বৃক্ষ। বিশুদ্ধ অক্সিজেন, ছায়া দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি তোমাদের। আমার ছায়াতলে বসতি গড়ে বিভিন্ন রকম মেলা। যেমন: বৈশাখী মেলা, বইমেলা, পিঠামেলা, কখনো-বা বস্ত্রমেলা। আমার ছায়াতলে আশ্রয় নেয় গৃহহীন অসহায় মানুষ। ছিন্নমূল থেকে ধনী পর্যন্ত সবাই আমার বন্ধু, সবারই ঠিকানা আমার ছায়াতলে।

প্রতিবছর আসে বৈশাখী মেলায় আমার ডালপালা আর ছায়াতলে গড়ে ওঠে জীবিকার আয়োজন। আমি নীরব চোখে তোমাদের আয়োজন দেখে মুগ্ধ হই। কিন্তু খুব কষ্ট লাগে, যখন দেখি তোমরা-আমার শাখা-প্রশাখা ভেঙে দিচ্ছ। আমার দেহে পেরেক ঠুকে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড লাগাচ্ছ। আমার শরীরে মিথ্যা প্রচারণার পেরেক ঠুকে তোমার কী উপকার হয়, বলো? আমার যে কষ্ট হয়, ভীষণ কষ্ট!

আমার বিশুদ্ধ অক্সিজেন, নির্মল বাতাস আর ছায়া তো তোমাদেরই দিয়েছি। খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি আমার ছায়াতলে সালিস বসে, যৌতুকের নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের। কিছুদিন আগে একটা আট বছরের শিশু দুই টাকা দামের বিস্কুট চুরি করল। তোমরা তাকে কড়া রোদে আমার দেহের সঙ্গে বেঁধে রাখলে। আমার তো হাত নেই। শিশুটিকে বেঁধে রাখার সে রশির বাঁধনটা তো আমি খুলতে পারলাম না। আমি যন্ত্রণায় ছটফট করলাম।

ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শিশুটি দুইটা রুটি চুরি করেছিল।
আমার ছায়াতলে আমি তোমাদের আনন্দ আয়োজন দেখতে চাই। সন্ধ্যা হতে শুরু করলেই শক্তসমর্থ কিছু যুবক মেতে ওঠে মাদকের ভায়াবহ জালে। তাদের অন্ধকার ভবিষ্যৎ আমায় ব্যথিত করে। এই সোনার ছেলেরা দেশের প্রাণশক্তি। মেধা, শ্রম আর মননকে কাজে না লাগিয়ে তারা নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার পৃথিবীতে।
আমার ছায়াতলে, তোমাদের মেলা, সব রকম মেলা হোক মধুময়। আমার শতসহস্র পাতার মতো হোক তোমাদের প্রাণশক্তি।