বসন্ত এসে গেছে

পয়লা ফাল্গুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছিল রঙিন সাজে। ছবিটি চারুকলা অনুষদ থেকে তোলা। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে
পয়লা ফাল্গুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছিল রঙিন সাজে। ছবিটি চারুকলা অনুষদ থেকে তোলা। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

ফেব্রুয়ারিকে উৎসবের মাস বললে অত্যুক্তি হয় না। অমর একুশে বইমেলা, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস...। এ মাসে যেন উৎসবের জোয়ার লাগে তরুণদের প্রাণে। আর পয়লা ফাল্গুন যেন তরুণ প্রাণে নতুন উদ্যমের দোলা দিতে হাজির হয় বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে।
প্রিয় পাঠক, বসন্ত এসে গেছে। তাকে বরণ করে নিতে আগ্রহের একটুও কমতি ছিল না ব্যস্ত নগরবাসীর। তাই পয়লা ফাল্গুনে তরুণ প্রাণ মিলেছিল প্রাণের উৎসবে।
পয়লা ফাল্গুন (১৩ ফেব্রুয়ারি) বসন্তের প্রথম দিন ভোরবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় বসন্ত উদ্যাপন কমিটি আয়োজন করেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার। শিল্পীদের গানের সুরে সুরে সকাল শুরু করতে অনেকেই এসেছিলেন বকুলতলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের দেখা পাওয়া গেল। চারুকলা অনুষদের কারুশিল্প বিভাগের শিক্ষার্থী নওশিন জানালেন, নিজেদের ক্যাম্পাসে এমন আয়োজন ভীষণ উপভোগ করেন তিনি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদেরও আমন্ত্রণ জানান এখানে আসার জন্য।
এবার পয়লা ফাল্গুন ছুটির দিন হওয়ায় সবার মধ্যে ফুরফুরে মেজাজ দেখা গেল। কলেজজীবনের পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেল তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে। তিনি বলেন, অনেক দিন দেখা হয় না, তাই বসন্তের প্রথম দিনটিকেই বেছে নিয়েছেন সবাই দেখা করার জন্য। বাড়ি ফেরার তাড়া নেই, তাই সারা দিন বাইরে থাকার পরিকল্পনা করেছিলেন সবাই মিলে।
আমিও তখন সামনের দিকে পা বাড়ালাম। এত রং আর শোভা যে ঋতুকে বরণ করে নেওয়ার জন্য একত্র হয়, সে ঋতুই তো ঋতুরাজ বসন্ত! হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম, কোন রংটি নেই আমার চোখের সীমানায়? নাহ্! এমন একটিও নেই। দিনে দিনে মানুষের রুচি পাল্টাচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু কত দ্রুত রূপ বদলায়, তা দেখার জন্য বসন্তের প্রথম দিনের সকালের জুড়ি মেলা ভার। এখন আর বাসন্তী রংই শুধু নয়, বাসন্তীর সঙ্গে আছে নীল, বেগুনি, সবুজ, হলুদসহ কত রং। বলছিলাম তারুণ্যের বাহারি পোশাকের কথা।
ঢাকা সিটি কলেজের তন্বী, বিপাশা, মারিয়া, রিমা আর চৈতি এসেছেন একই রকম শাড়ি পরে। পরদিন ভালোবাসা দিবস, যুগলদের আনাগোনাও তাই বেশ লক্ষণীয়। উপহার আদান-প্রদান, ঘোরাঘুরি, একই রঙের পোশাক, ছবি তোলা—সব মিলিয়ে চলছে তাঁদের নিজস্ব আয়োজন। ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলার ফাঁকে চলছে খাওয়াদাওয়া।
কিছু শৌখিন আলোকচিত্রীর দেখা পাওয়া গেল, বন্ধুবান্ধবের ছবি তোলার পাশাপাশি অনেকে প্রকৃতির ছবিও তুলছেন। চারুকলা থেকে বের হয়ে ভাবলাম বইমেলার দিকে যাই। হাঁটার পথে চোখে পড়ল, অনেকেই শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি কিনছেন। অনেকেই গালে-হাতে আঁকিয়ে নিচ্ছেন নকশা। এবার দেখা মিলল একজন শৌখিন বাগান পরিচর্যাকারী স্কুলশিক্ষিকা হোসনে আরার সঙ্গে, হাতে দুটি চন্দ্রমল্লিকার চারা। তিনি মনে করেন, বসন্তে ফুলের গাছ না লাগালে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায় না। বইমেলার প্রচণ্ড ভিড়ে মেলার ভেতরে যাওয়াই যেন দুঃসাধ্য। এখানেও বসন্তের আমেজ। স্টলের বিক্রেতাদের অনেকেই জানালেন, অন্যান্য দিনের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শম্পা, রবিন, মাসুদ, পুতুল, জুঁই, রাসেল ও তানিয়া খাচ্ছিলেন ফুচকা। জুঁই জানালেন, তাঁদের খাওয়াদাওয়ার অভিযান মাত্র শুরু হলো। তাঁদের বসন্তবরণ চলবে সারা দিন।