ও বন্ধু আমার

দিনটা বন্ধুদের, বন্ধুত্বের। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গতকাল তাই আড্ডায় মেতেছিলেন বন্ধুরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
দিনটা বন্ধুদের, বন্ধুত্বের। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গতকাল তাই আড্ডায় মেতেছিলেন বন্ধুরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

বালিশের পাশে রাখা স্মার্টফোন হাতে নিয়ে গতকাল ঘুম ঘুম চোখে ফেসবুকের পাতায় চোখ বোলাতেই বেসরকারি চাকুরে অপূর্বর মনে পড়ল আজ বন্ধু দিবস। ফেসবুকজুড়ে শুধু বন্ধুদের নিয়ে লেখা স্ট্যাটাস আর মজার মজার ছবি। সঙ্গে সঙ্গে খুদে বার্তা পাঠালেন কাছের বন্ধুদের। দুপুরের খাবারটা একসঙ্গেই হোক।

গতকাল ধানমন্ডির একটি খাবার দোকানে কথা হলো কাওসার অপূর্ব আর তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে। বললেন, ‘আগে এই সব দিবস-টিবস নিয়ে হাসাহাসি করতাম। বন্ধুরা তো সব একসঙ্গেই আছি, দিবসের কী দরকার। এখন দেখা করার জন্য এই সব উপলক্ষ খুঁজি।’

স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী, চাকুরে বা ব্যবসায়ী—নানা বয়সী মানুষ অনলাইনে-অফলাইনে গতকাল মেতেছিলেন বন্ধুত্বের জয়গানে। বন্ধুত্ব উদ্‌যাপনে।

‘বন্ধুত্ব অপ্রয়োজনীয় বটে; যেমনটা দর্শন বা শিল্পকলা...’ কথাগুলো ব্রিটিশ লেখক সি এস লিউয়িসের। সদ্য উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকানো মীর শাহাদাত হোসেনও মনে করেন, লাভ-ক্ষতির মাপকাঠিতে বন্ধুত্বকে মাপা যায় না। এত হিসাব করে বন্ধুত্ব হয়ও না। বললেন, তার ক্ষেত্রে প্রাণ খুলে কথা বলার জায়গা হলো বন্ধু। তাদের সঙ্গে সন্ধ্যা নাগাদ আড্ডা দিয়ে বন্ধু দিবস উদ্‌যাপন করবেন বলে জানালেন।

টিএসসির ভেতর ইনডোর গেমস রুমেও জমেছিল আড্ডা। চারজনের একটি দল পরিচয় দিল, ‘আমরা খেলার বন্ধু’। এই দলের মৌসুমী ইয়াসমিন আর কৈরবী সোহেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আরেক সদস্য অন্তিকা চৌধুরী পড়েন দ্বিতীয় বর্ষে। চতুর্থ জন হিমেল বড়ুয়া আবার আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা বললেন, বন্ধু হতে হলে একই বয়সী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। চিন্তাভাবনা আর পছন্দের মিল থাকলে যে কারও মধ্যেই বন্ধুত্ব হতে পারে। মৌসুমী বললেন, নিয়মিত দাবা, লুডু, টেবিল টেনিস বা কার্ড খেলার সঙ্গী তারা। তবে বন্ধু দিবস বলে দিনটা ‘স্পেশাল’। তাই বাসায় না ফিরে খেলতে বসে গেছেন।

ফুলার রোডে কথা হলো তিন বন্ধু সাফিয়া, পিংকি আর তাসনিয়ার সঙ্গে। বন্ধু দিবস সামনে রেখে একই রকম জামা বানিয়ে পরেছেন তাঁরা।

ছোটরাও আছে উদ্‌যাপনের দলে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী যাহরা রাব্বীর ক্লাসে গতকাল ছিল প্রিয় বন্ধুর হাতে ‘ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড’ পরিয়ে দেওয়ার উৎসব।

বন্ধু দিবস চালুর উদ্দেশ্যটা কিন্তু ছিল ব্যবসা। ১৯৩০ সালে উপহারসামগ্রী ও কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হল-মার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হল এর প্রচলন করেন। পরবর্তী সময়ে প্যারাগুয়ের চিকিৎসক র‍্যামন আর্থেমিও ব্রেচের উদ্যোগে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্ব ঐক্য ও ভালোবাসা উদ্‌যাপনের দিন হিসেবে বন্ধু দিবস স্বীকৃতি পায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী জাহিদ হাসানের মতে, ‘বন্ধু দিবস ব্যবসার ধান্দা ছাড়া আর কিছুই না। দিবস লাগে না, বন্ধুত্ব চিরদিনের।’

পঞ্চান্ন পেরোনো গৃহিণী পারভীন ইসলামের জীবনে বন্ধু দিবসের উদ্‌যাপন নেই। তবে স্মৃতিচারণা আছে। খবরের কাগজে, টিভিতে বন্ধু দিবসের নানা আয়োজন দেখে দু-তিন দিন ধরে ঘুরেফিরে স্কুলের বন্ধুদের কথা মনে পড়ছে তাঁর।