দারুচিনি দ্বীপে ড্যাফোডিল বন্ধুসভা

দারুচিনি দ্বীপে ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধুরা।
দারুচিনি দ্বীপে ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধুরা।


ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধুরা একদিন সাপ্তাহিক মিটিংয়ে বার্ষিক বনভোজনের কথা তুললে পাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠেন এবার আমরা দারুচিনি দ্বীপে যাব। সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা তাতে সমস্বরে সমর্থন জানান। গত ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে একে একে ২৯ জন বন্ধু ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এবি বিল্ডিংয়ের সামনে এসে হাজির হন। সবার চোখেমুখে তখন একটা চাপা উত্তেজনা। সেখান থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে করে সবাই মিলে রওনা হই। সায়েদাবাদ গিয়ে আরেকবার বাস পরিবর্তন করে সবাই মিলে নতুন বাসে উঠি। প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাসটি টেকনাফের উদ্দেশে ছুটে চলতে শুরু করে। রাস্তার দুধারে বিস্তীর্ণ মাঠে লবণ তৈরির জন্য সমুদ্রের পানি আটকে রাখার আইলগুলো চোখে পড়ে। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। সূর্যের সোনালি আলোতে মাঠে থাকা সমুদ্রের পানি চিকচিক করছিল। কিছুক্ষণ পর বাসটি টেকনাফে জাহাজঘাটে নামিয়ে দেয় আমাদের।

জাহাজ ছাড়বে সকাল সাড়ে ৯টায়। তার আগে সব বন্ধু মিলে সেরে নিই সকালের নাশতা। এরপর ‘আটলান্টিক ক্রুজ’ জাহাজে চেপে সবাই মিলে রওনা দিই। মাঝসমুদ্রে গিয়ে হঠাৎ জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তবে দ্রুতই তা সমাধান করে আমাদের জাহাজ ঘণ্টাখানেক বাদেই পাড়ি জমায় বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জেটিঘাটে। সবার চোখে তখন খুশির ঝিলিক। সবাই মিলে সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিই। তারপর রিসোর্টে গিয়ে ব্যাগ রেখে কাপড় পাল্টে নেমে পড়ি সমুদ্রের নীল জলে। নোনা জল এসে আছড়ে পড়তে থাকে সমুদ্র–তীরবর্তী প্রবালের গায়ে। সে এক অপরূপ দৃশ্য।

রাতে সমুদ্রের তীরে বসে বিভিন্ন গান গান বন্ধুরা, হেঁটে বেড়ান সমুদ্রতীরের বালিয়াড়িতে। পরদিন সকালে হোটেলে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়ি ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশে। ট্রলারে চেপে পাড়ি দিই সুবিশাল, বিস্তৃত জলরাশির বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রের ঢেউয়ে খানিকটা দুলতে থাকে আমাদের ট্রলার। মাঝেমধ্যে সামান্য পানি ছিটকে এসে পড়ে আমাদের গায়ে। এতে আনন্দ পাই, সঙ্গে খানিকটা ভয়। ছেঁড়াদ্বীপে পৌঁছানোর পর চারদিকে সমুদ্রের নীল জল আর দ্বীপজুড়ে কেয়া গাছের দীর্ঘ সারি দেখে অভিভূত হন বন্ধুরা।

আরেক দফা চলে সমুদ্রে গা ভেজানোর পর্ব। পরে দুপুরের খাবার শেষ করে ‘কেয়ারি সিন্দাবাদ’ জাহাজে চেপে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। টেকনাফ আসার পর আমাদের জন্য নির্ধারিত বাসে উঠি। ঢাকায় এসে যখন আমাদের বাস থামে, ততক্ষণে সূর্য উঠে গেছে। নরম রোদ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। সবার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। অথচ চোখেমুখে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। সবার চোখেমুখে আনন্দের রেণু ওড়াউড়ি করছে সমুদ্রজয়ের আনন্দ! ড্যাফোডিল বন্ধুসভার সভাপতি মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে ট্যুরের সব কার্যাবলি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সোহান হোসেন, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আহসান আরিফ চৌধুরী, অনুষ্ঠানবিষয়ক সম্পাদক এহসান মাহিম, অর্থ সম্পাদক আশিকুর রহমান অনিক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আশিকুর রহমান।