'মা, আমি কি একটু ছাদে যেতে পারি'?

হুমায়রা তাসনিম
হুমায়রা তাসনিম


জীবন বাস্তবতায় কঠিন সময় গেছে। কষ্ট হলেও লড়েছি এবং বিজয় এসেছে। কিন্তু করোনা বাস্তবতা—এই যেন কল্পনারও অতীত। অনভ্যস্ত এই বাস্তবতার সঙ্গে এখন লড়তে হচ্ছে। কঠিনভাবেই লড়ছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে লড়ছি। শুরু থেকেই মা, ছোট বোন, দাদু আর আমি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরবন্দী হয়ে আছি। এই ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম কেবল বাবা। আমাদের প্রয়োজনে বাবাকে দিনের কিছু সময়ের জন্য ঘরের বাইরে যেতেই হচ্ছে।

এই ঘরবন্দী অনীহার জীবনে এখন যুক্ত হয়েছে ভয়। ভয়টি মা ও দাদুকে নিয়ে। মা শ্বাসকষ্টের রোগী। এ ছাড়া আরও অনেকে অসুস্থ। আর দাদু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাঁদের বলে রেখেছি, কোনো কারণে আমার শরীরে যদি করোনার লক্ষণ দৃশ্যমান হয়, কোনোভাবেই এই দুজন যেন কাছে না আসে। যদিও তাঁরা আসবেনই। এই দুজনকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রিয় ছাদটিতে যাওয়া হয় না অনেক দিন। আমাদের ছাদ থেকে প্রবহমান মেঘনার স্বচ্ছ জল আর তিনটি সেতুর সৌন্দর্য পূর্ণভাবে উপভোগ করা যায়। ভরা চাঁদ উপভোগ করতে আমাদের ছাদের জুড়ি নেই। প্রিয় এই ছাদ এখন আমার কাছে বড়ই অচেনা।

কদিন ধরে আমার খুব বাইরে যেতে ইচ্ছা করছে। খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে মন চাইছে। দাদুবাড়ি যেতে শরীর ও মন দুটিই টানে। বন্ধুসভার কক্ষটির কী অবস্থা, নিজ চোখে দেখতে ইচ্ছা করে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে বসে আড্ডাটা মিস করছি। সৃষ্টিকর্তা আমাদের কাছে স্বাভাবিক পৃথিবীটা কখন ফিরিয়ে দেবেন, এমন অপেক্ষা আর যেন শেষ হয় না। আবার শঙ্কা কাজ করে, আদৌ আগের পৃথিবীটা ফিরে পাব কি না? অসহ্য হলেও আমি ঢাকা শহরের জ্যামে বসে সময় পার করতে চাই।

কয়েক দিন ধরে কেন জানি খুব করে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ ছবির কিছু সংলাপ মনে পড়ছে। বিশেষ করে রাত্রি চরিত্রের মেয়েটির কথা। মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাময় সময়ে রাত্রি যেমন করে মায়ের কাছে আবদার রেখে বলেছিল, ‘মা, আমি কি একটু ছাদে যেতে পারি’? তেমনি করে আমারও বলতে ইচ্ছা করছে ‘মা, আমি কি একটু ছাদে যেতে পারি’? আমার আবদার শুনে নির্ভয়ে মা বলবেন, কেন নয়, যাও। খোলা আকাশ দেখো। মেঘনার স্বচ্ছ জল ও সেতু তিনটির সৌন্দর্য উপভোগ করো। আমার বিশ্বাস, আমরা আমাদের আগের পৃথিবীটা ফিরে পাব শিগগির। কোনো মা তাঁর সন্তানদের ঘরের বাইরে যেতে বাড়তি দুশ্চিন্তায় পড়বেন না, এখন কেবল এমন সময়টার অপেক্ষা।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা