গাছের ডালে

গাছের ডালে।
গাছের ডালে।


অনেক দিন পর টানা ১৭ ঘণ্টা ঘুমিয়ে বিকেল পাঁচটার সময় যখন ঘুম থেকে উঠলাম, তখন বাড়ির সবাই; মানে ঠাকুমা, মা, মেজদি, বড়দা, মেজদা একে একে আমাকে আর আমার ঘুমকে একপশলা গালমন্দ করে গেল। এরই মধ্যে নাকি কী একটা ঘটনাও ঘটে গেছে। পেছনের বাড়ির মদনের বউ নাকি পালিয়েছে। এ নিয়ে আমাদের বাড়িতে ব্যাপক হট্টগোল হলেও আমার ঘুম নাকি ছাড়েনি সে সময়। এটা বলে আমার ছোট বোনটাও আমাকে গালমন্দ করে গেল। সবশেষে পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য, দেড় বছরের ছোট্ট তিথিও মিনমিন করে কী জানি বলে গেল। যাকগে, আমার কী আসে–যায় তাতে।

সন্ধ্যাবেলায় ঘরে ধূপের ধোঁয়ায় টিকতে না পেরে বাইরে বের হলাম, তখনই দেখলাম ভুতুড়ে ব্যাপারটা। বাড়ির উঠানের বাঁ পাশে আমগাছের মগডালে আলো! এমনকি আলোটা একটু পরপর নড়াচড়াও করছে। চোখের ভুল বলে পাত্তা দিলাম না। ঘটনাটা হয়তো ভুলেই যেতাম যদি না পরের দিন একই সময়ে একই ঘটনা না ঘটত। আবার আলো। এবার আমগাছে নয়, পাশের লিচুগাছে। আলোটা তাহসানকে দেখানো উচিত ছিল। সে নাকি আলো পায় না। আর আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় গাছের মগডালে আলো দেখি। মেজদাকে সাথে সাথে ডাক দিয়েও জবাব পেলাম না। ঘরে গিয়ে দেখি মেজদা ঘরে নেই। কী ব্যাপার! মেজদা তো পড়ুয়া ছেলে, এতক্ষণে তো তার পড়ার টেবিলে থাকার কথা। ভয়ে পরে আর ঘর থেকে বের হইনি। রাতে ঘুমানোর সময়ও ভয় করতে লাগল।

সবচেয়ে খারাপ কথা হলো, কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে পরের দিন সন্ধ্যায় আবার ঘর থেকে বেরিয়ে একই কাণ্ড দেখলাম। এবার ভূতটা আবার আমগাছে ফিরে এসেছে। ভূত না হয়ে পেতনিও হতে পারে! আলোটা দেখলাম একবার নড়ে উঠল। পরে আবার। মনে হলো, আলোটা নিচে নামছে। ‘ওরে বাবারে’ বলে পেছনে ঘুরে যেই না দৌড় দিতে যাব, অমনি ভূতটা বলে উঠল, ‘প্রলয়, আমার ইয়ারফোনটা নিয়া আয় তো।’ সেকি! এ যে মেজদার গলা!

ঘুরে তাকিয়ে দেখি, মেজদা দাঁড়িয়ে আছে। বললাম, ‘মেজদা, তুই কি ওই গাছের ডালে উঠেছিলি?’ ‘হ্যাঁ রে, এখন আমার ইয়ারফোনটা নিয়া আয় তাড়াতাড়ি।’ ‘কেন? মানে, গাছের ডালে উঠে কী করিস তুই?’ এরপর মেজদা যা বলল, তা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মেজদা বলল, ‘আরে বেটা, অনলাইনে ক্লাস হয় আমাদের। প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে। গ্রাম তো, নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, তাই মগডালে উঠতে হয় আরকি! তুই তাড়াতাড়ি ইয়ারফোন নিয়ে আয়। আমাকে আবার মগডালে চড়তে হবে।’