রাক্ষস!

.
.

সামনে পরীক্ষা বলে আজকাল একটু দেরি করে ঘুমাই। মুঠোফোন সাইলেন্ট করে রাখা ছিল, হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল। অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এসেছে। সাধারণত এত রাতে আমাকে কেউ কল দেয় না। একটু ভেবে ফোনটা রিসিভ করলাম। অপর প্রান্তে অস্ফুট কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
‘হ্যালো, কে?’
‘কে আপনি?’ কোনো উত্তর নেই।
‘এই যে শুনছেন?’ তারপরও কোনো উত্তর নেই। ফোন রাখতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই কান্নাজড়ানো কণ্ঠ, ‘রাক্ষস আমাকে চিনতে পারলি না?’
রাক্ষস! নামটা শুনেই ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। এই নামে তো একজনই শুধু আমাকে ডাকে। সে মৌসুমী। তাহলে কি মৌসুমী ফোন করেছে?
দুই বছর আগের কথা। তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। বাড়ি থেকে দূরের একটা স্কুলে। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় অটোরিকশার সঙ্গে আমার সাইকেলের ধাক্কা লাগে। রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এক ভদ্রলোক আমাকে তাঁর বাড়ি নিয়ে যান। মৌসুমীর সঙ্গে সে বাড়িতেই পরিচয়। সুস্থ হয়ে ওঠার পর প্রায় দিনেই স্কুল থেকে ফেরার পথে মৌসুমীদের বাড়ি যেতাম। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম।
আমরা দুজন ছিলাম দুই ধর্মের। যখনই ধর্ম, সমাজ আর পরিবারের কথা ভাবতাম খুব কষ্ট হতো। তবে গ্রামের মানুষ সন্দেহের চোখে দেখত না। অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের। সবকিছু ঠিকই চলছিল। আমি এসএসসি পরীক্ষা শেষে ঢাকায় বেড়াতে আসি। এক রাতে মৌসুমীর ফোন। বলল, ‘কাল আমার বিয়ে’। প্রথমে ভেবেছিলাম, মজা করছে। কিন্তু গগনবিদারী কান্নায় আমার ভুল ভেঙেছিল। কিছু করার ছিল না। সেই আর্তনাদ আজও আমাকে তাড়া করে।
সেই শেষ কথা। আমাদের আর কোনো দিন কথা হয়নি। অনেক সময় ভাবতাম, যোগাযোগ করি। মনে হতো মিছেমিছি নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানেই হয় না।
আজ এত দিন পর মৌসুমীর কল রিসিভ করে কথা বলতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে কান্না সামাল দিতে হলো। খুব বেশিক্ষণ কথাও বলা হয়নি।
শাকিল আহমেদ
সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা