`বন্ধুসভা' - যেন এক মায়ার বাঁধন


বন্ধু মানেই কিছু চাওয়া-পাওয়ার মিশেল, আর তাকে ঘিরে আনন্দ, বেদনা, সুখ, দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়া আড্ডা, মাস্তি, ফুর্তি, কষ্ট, ভালো লাগা, খারাপ লাগার মধ্যেই ফুটে ওঠে বন্ধুত্বের বন্ধন। তেমনি এক বন্ধনের নাম বন্ধুসভা। 

বন্ধুসভা বা বন্ধু সমাবেশ এই নামগুলোর সঙ্গে একটি মায়া মিশে আছে, যেন এক আত্মার টান। যেমনটা থাকে নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য। বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় পরিবারের নাম বন্ধুসভা। পরিবারে যেমন থাকে অভিভাবক, তেমনই বন্ধুসভারও রয়েছেন কিছু অভিভাবক।
সমাবেশজুড়ে দেখা মেলে বন্ধুত্বপূর্ণ, প্রাণবন্ত ও চমৎকার আড্ডাপ্রিয় একদল অভিভাবকের। যাঁদের ভালোবাসা ও মায়ায় আবদ্ধ ১২৫টি বন্ধুসভার সব বন্ধু।
সত্যি অভিভূত ও প্রাণবন্ত তাঁদের সঙ্গে এ সম্পর্ক। আড্ডা, গান, কবিতা, গল্পে পার হয় জীবনের সেরা দুটি দিন। সমাবেশ মাত্র দুই দিনের কিন্তু এর স্মৃতিগুলো লিখে শেষ করার মতো নয়। আমি প্রথমে ধারণা করেছিলাম, বন্ধু সমাবেশের দুটি দিন বিরক্তিকর ও একা একা সময় পার করতে হবে, কিন্তু ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাজীপুরের মৌচাক স্কাউট মাঠে পা রাখার পরে আমার ধারণাটা ভুল প্রমাণ করে দিলেন সারা দেশ থেকে আসা এত এত বন্ধু। বন্ধুসভার সব বন্ধুর অন্য রকম একটা শক্তি আছে, যা হলো আপন করে নেওয়ার শক্তি। তাঁদের সঙ্গে মিশে মনে হলো তাঁরা যুগ যুগ ধরে চেনা ও পরিচিত। কিন্তু কে বলবে সবার সঙ্গে এখনই প্রথম দেখা, এখনই পরিচয়।
সবার সঙ্গে কানামাছি ও হাঁড়িভাঙা খেলে মনে হলো আবার শৈশবে ফিরে গেছি—এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি।

সমাবেশে বিস্মিত করার মতো আরেকটি জিনিস হলো দেয়ালিকা। ১২৫টি বন্ধুসভার ১২৫টি দেয়ালিকার নকশা ও সম্পাদকদের ধন্যবাদ জানাই এ জন্য যে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এত সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য। এত এত লেখা দেখে মনে হলো বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হচ্ছি।
সমাবেশের প্রথম পর্বে প্রিয় লেখক ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা আনিসুল হক স্যারের হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সমাবেশে তারকাদের উপস্থিতি মন ছুঁয়ে গেছে। সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, তপন চৌধুরী, কনা ও ইমরানের গানগুলো যেন হৃদয় লেগে আছে। ঠিক তেমনি তাঁদের সঙ্গে প্রতিটি বন্ধুসভার একটি করে পরিবেশনা যেমন কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, গান। তারাও শিল্পী থেকে কম কিসে। এর সঙ্গে তো রয়েছে হইহুল্লো করে নাচা ও গান করা। এর মধ্যে আরেকজন মানুষের কথা বলতেই হয়, যার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও আপন করে নেওয়ার শক্তি বন্ধুরা মনে রাখবেনই। তিনি হলেন প্রিয় লেখক ও চিকিৎসক ফারহানা মোবিন।
সমাবেশের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান আকর্ষণ ছিল বিখ্যাত অভিনেত্রী জয়া আহসান। শোনান তাঁর স্বপ্নজয়ের গল্প। এর সঙ্গে চলে বন্ধুদের নানা প্রশ্নোত্তরের পর্ব। সঙ্গে রয়েছে বন্ধুসভার উপদেষ্টা প্রিয় লেখক দন্ত্যস রওশনের বক্তব্য। যিনি সব বন্ধুকে এক মিনিট চোখ বন্ধ করে মাকে ও মাতৃভূমিকে নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছেন। সত্যি তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার মা, আমার দেশ।

আমার নিজেকে নিয়েও গর্ব হয়। কারণ, বন্ধুসভার মতো এত বিশাল সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে পারছি বলে। আমার বিশ্বাস, আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ স্লোগান সামনে রেখে শুদ্ধ বন্ধুত্বের মাধ্যমে সবুজে অভায়ারণ্য, মাদকমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারব।

তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক, কুমিল্লা বন্ধুসভা।