এক শুদ্ধ সকালে ফেরার প্রতীক্ষা


ঘুম থেকে উঠে কলেজ যাওয়ার তাড়াহুড়ো আর নেই। নেই বন্ধুদের সঙ্গে কলেজ মাঠের আড্ডাটা। বিকেলে মাঠজুড়ে সবুজ ঘাসের পরিবেশটাও হয়তো বদলে গেছে। বদলে গেছে গত একটি মাসের প্রতিটি সকাল। প্রতিটি দুপুরে বিশ্রাম বা একটুও স্বস্তি নেই কারোর, আছে শুধু আশঙ্কা। একেকজনের একেক রকম ভয় আর কালকের জন্য অনিশ্চয়তা!
মানুষের জীবনে কিছু কিছু সময় একদমই অপ্রত্যাশিত। এমনই অপ্রত্যাশিত করোনার দিনগুলো। দিনগুলো এভাবে নিস্তব্ধ হয়ে যাবে, ভাবিনি কখনো। ভাবিনি কখনো, এভাবে জীবন থেকে রাতগুলো হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে রাতে ঘুম। এলোমেলো হয়ে যাবে একটি মাস। চার দেয়ালে বন্দী জীবন। জীবন আমাদের এইটুকু শিখিয়ে দিল, জীবন মানুষের হাতের মুঠোয় নয়।
গত সাড়ে পাঁচটি বছর পড়াশোনার সুবাদে রাজশাহীতে থাকায় তেমন একটা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো হতো না, এখন সবাই একসঙ্গে পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি। সকালটা মুঠোফোনের গেমে শুরু হলেও শেষ হয় প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল আড্ডায়। হুম, ভালো লাগছে, তবে দিনের প্রতিটি দুপুর বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে মৃত্যু মিছিলে, আঁতকে ওঠে নতুন আক্রান্তে। বিকেলে বাড়ির পেছনের খোলা মাঠে লাল ফানাসের ঘুড়ি, ঘুড়িতে যেন খুঁজে পায় বদ্ধ পৃথিবীর মুক্তির স্বাদ। সন্ধ্যার স্বাদ আগে টিউশনিতে থাকলেও এখন সময় কাটে ভার্চ্যুয়াল জগতে। বই পড়ার অভ্যাসটা বরাবরই অতটা বেশি না হলেও প্রিয় লেখকের গল্প–উপন্যাসে কাটে বাকি সময়টা।
চার দেয়ালে ব্যস্ত রাখছি নিজেকে। করোনা থেকে নিরাপদে থাকছি পরিবার নিয়ে। সেই সময়টা ডাক্তার, প্রশাসন, সাংবাদিক জীবনের শঙ্কা নিয়ে করোনামুক্ত সকালের চেষ্টায়। চেষ্টায় থমকে যাওয়া পৃথিবীকে নতুন আঙ্গিকে তৈরিতে, যা তৈরিতে প্রয়োজন আমাদের ঘরে থাকা। আর সেসব অকুতোভয় সৈনিককে জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।
হঠাৎ থমকে যাওয়া পৃথিবী, তবু বিশ্বাস রাখি এই দিশেহারা দিনগুলোর শেষে আবার একটা আগের মতো নিশ্চিত সকালে ঠিক ফিরব আমরা। আর সেই এক শুদ্ধ সকালে ফেরার প্রতীক্ষা।
রাজশাহী বন্ধুসভা