বাবার খোঁজে


গ্রামেই বাস করে টোটো ও তার বোন। টোটোর যখন জন্ম হয় তখন তার বাবা তার নাম রাখে টোটো। টোটোর নাম টোটো হলেও তার ছোট বোনের কোনো নাম নেই। কেননা টোটোর ছোট বোন যখন তার মায়ের গর্ভে, তখন তার বাবা ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। এদিকে টোটোর বোনের জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা যায়।
খেয়ে না–খেয়ে টোটো তার বোনকে অনেক কষ্টে বড় করে। একটু একটু বড় হতে হতে টোটো বুঝতে পারে, তার বোন মুখে কথা বলতে পারছে না। তার বোন বোবা। তাই তার ছোট বোনের আর কোনো নাম রাখা হয়নি। তা ছাড়া টোটোর বোনও কোনো দিন কোনো প্রয়োজন মনে করেনি যে কেন তার নাম রাখা হলো না।
টোটো ও তার ছোট বোন যে বাড়িতে কাজ করে, তারা অনেক কাজ করে নিলেও খাবার তেমন দেয় না। কথায় কথায় বকা তো দেয়ই, এর পাশাপাশি মারেও। তাদের দুজনকে বারান্দায় থাকতে দেয়।
টোটোদের এত কষ্ট দেখে পাসের বাড়ির দাদু বলে, তোমরা ঢাকায় কেন যাও না টোটো? ঢাকায় গিয়ে তোমরা তোমাদের বাবাকে খোঁজো। তোমাদের বাবাকে খুঁজে পেলে তোমাদের আর কোনো দুঃখ থাকবে না।
টোটো ও তার বোন ঠিক করল, তারা ঢাকায় যাবে তাদের বাবার খোঁজে। তা–ই করল তারা।
ঢাকায় এসে তাদের মাথা ঘুরতে লাগল। এত বড় শহর, এত বড় বাড়ি, এত বড় রাস্তা, এত লোকজন তারা এর আগে কখনো দেখেনি। ভয়ে ভয়ে একে অপরের হাত ধরে তারা হাঁটতে থাকে। তাদের দুজনের চোখেই ক্লান্তির চাহনি। পেটে প্রচণ্ড খিদে। টোটোর বোন কথা বলতে পারে না, তাই বারবার তার পেট দেখায় টোটোকে। কোনো খাবার না পেয়ে তারা কলের পানি পান করে নেয়। কিন্তু এতে তাদের খিদে মেটে না। দোকানের সামনে খাবারের জন্য হাত পাতে। টাকা না থাকায় দোকানদার দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় তাদের।
টোটো ও তার বোন পচা আবর্জনার ডাস্টবিনে খাবার খুঁজে খায়। কাক আর কুকুর যেন তাদের কত প্রিয় বন্ধু হয়ে গেছে। কেননা এদের সঙ্গেই এখন সময় বেশি কাটে তাদের।
আর রাত কাটে রাস্তার কোনো ছাউনিতে, মানুষের বাড়ির বারান্দায় বা কোনো দিন খোলা আকাশের নিচে।
ডাস্টবিনের পচা খাবার খায় আর তাদের বাবাকে খোঁজে তারা। অনেক মানুষকে জিজ্ঞাসা করেও তাদের বাবার খোঁজ পায় না তারা। পাবে কী করে! তারা যে তার বাবার নাম, দেখতে কেমন, কোথায় থাকে—কিছুই জানে না।
প্রতিদিন খুঁজেও তারা তাদের বাবাকে আর পায় না। এভাবে অনেক দিন কেটে যায় খেয়ে না–খেয়ে। টোটো ও তার বোন দুর্বল হয়ে পড়ে। তবু তারা তাদের বাবার খোঁজে বের হয়।
একদিন টোটো ও তার বোন হঠাৎ ট্রাকের সামনে পড়ে যায়। গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে যায় টোটো ও তার বোনের জীবনে। টোটো ও তার বোন প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। টোটোর বোন একসময় বুঝতে পারে, কে যেন রিকশায় করে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে তড়িঘড়ি করে। তাদের বাবা নয়তো? কেন যেন তার মনে হলো ইনিই তার বাবা। লোকটাকে সে বাবা বলে ডাকতে চাইল, কিন্তু সে বোবা হওয়ায় ডাকতে পারল না!
নীলফামারী বন্ধুসভা