করোনা নিয়ে নিম্নবৃত্ত মানুষ


শ্রমিক বাবা, সদ্য ঢাকা থেকে ফিরেছেন। দেশের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ ফাঁকি দিয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন, তাই তাঁর অবস্থান এখন নিজ বাড়িতে।
বাবা বাসায় এসেছেন। পাঁচ বছরের অবুঝ মেয়েটি গলা জড়িয়ে ধরে বলে, বাবা, তুমি কী এনেছ আমার জন্য? মারে, ঢাকা শহরের অবস্থা বড্ড খারাপ। কাউরে বাহিরে হতে দেয় না, কামকাজ কিছুই করতে দেয় না। খাওন নাই। ওই হানে আমার মা নাই। ওইখানে থাকতে পারি না। তাই দ্রুত তোমার কাছে চলে আসছি। কাল হাটের দিন, তোমার জন্য বাতাসা, আর গুড়ের গরম জিলাপি আনব কেমন, তুমি মন খারাপ কইর না, মা।
পরদিন মেয়ের জন্য হাট থেকে সব নিয়ে ফিরলেন। হাটে যাওয়ায় গনি মিয়ার ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার খবর সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের কিছু মানুষ তার বাড়িতে গিয়ে তাকে নানাভাবে শাসিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনের পরামর্শ দেন।
গনি মিয়ার বউয়ের পরামর্শে সেই রাতেই তারা বাসায় তালা ঝুলিয়ে তিনজনেই পাড়ি জমায় শ্বশুরবাড়িতে, সেখানে দিব্যি চলাফেরায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখে গনি মিয়া।
তারপর, ৫ দিন অতিবাহিত হতেই মেয়েটার জ্বর অতিমাত্রায়। কোনো ধরনের ওষুধ কোনোমতেই কাজ করছে না। শুকনো কাশি সঙ্গে আরও করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তারা স্থানীয় হাসপাতালে যায়।
তারপর জানা যায়, পাঁচ বছরের মেয়েসহ গনি মিয়ার পরিবারের তিনজন ও তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও শালা করোনায় আক্রান্ত।
আজ পাঁচ বছরের মেয়েটি করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে হেরে গিয়েছে। বাকিদের অবস্থা তেমন ভালো না, তবে গণি মিয়া একটু স্বাভাবিক।
সেদিন যে মেয়ে বলেছিল, বাবা আমার জন্য কী এনেছ, সেদিন যে গনি মিয়া অবুঝ মেয়ের জন্য অজান্তে করোনাভাইরাস নিয়ে এসেছিল, আজ তা অক্ষরে অক্ষরে টের পাচ্ছেন।