আমাক বাঁচাও


অফিস থেকে বসের ফোন পেয়েও নির্বিকার ভঙ্গিতে শোভন বললো, হ্যালো স্যার!
জামান সাহেব বিচলিত। তিন দিন ধরে কোনো নোটিশ ছাড়াই বাড়িতে বসে আছে শোভন। তবু জামান সাহেব বেশ শান্তভাবে বললেন, তিন দিন ধরে অফিসে আসছেন না। কোনো সমস্যা হলে জানাবেন তো! শোভন মনে মনে খুব হাসলো। তারপর কণ্ঠটা আরও দুখী দুখী করে বলল, সরি স্যার। আসলে খুব ঝামেলায় আছি। তিন দিন ধরে জ্বর। গলাব্যথা। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছি। কিন্তু কোনো টেস্ট করাতে পারছি না।
টেলিফোনের ওপাশ থেকে জামান সাহেব যেন আঁতকে উঠলেন। বললেন, বলেন কি শোভন সাহেব?
করোনা না তো আবার? আপনি তো বেশ চিন্তায় ফেলে দিলেন আমাকে? দোয়া করি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর আপনার ওয়াইফকে আমাদের অফিসের জরুরি নাম্বারগুলো দিয়ে রাখবেন। যেকোনো সমস্যায় যেন ফোন দেয়। লকডাউনের কারণে আগামী সপ্তাহ থেকে আমাদের অফিসও বন্ধ থাকবে।
জি স্যার। আমার জন্য দোয়া করবেন।
অবশ্যই!
ফোনটা রেখে শোভন একটা অট্টহাসি দেয়। পাশে বসে থাকা ওর স্ত্রী ইরিনা ততক্ষণে ভীষণ বিরক্ত। সে শুধু ফিসফিস করে বলে, এসব নিয়ে কখনোই মিথ্যে বলতে নেই শোভন! কাল থেকে অফিসে যেয়ো !
ইরিনার কথা শুনে শোভন হাসে। বলে, টিভিতে ওই বিজ্ঞাপনটা দেখছ না? একটু চালাক না হইলে দুনিয়াতে টিকে থাকা খুব কঠিন বলেই আবার হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে সে।
বিকেলে শোভনের অফিস থেকে একটা বড় বক্স আর খাম পাঠান জামান সাহেব। দুপুরে ভরপেট খেয়ে শোভন বেশ আরামে ঘুমুচ্ছিল। ইরিনা এসে ঝটপট বাক্সটা খোলে। বাক্সটার ভেতরে ফল থেকে শুরু করে দুধ, ফ্রোজেন পরাটা, চিকেন, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। আর খামের ভেতরে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল! ইরিনা খামটা নিয়ে সোফার ওপরে চুপচাপ বসে থাকে কিছুক্ষণ! ঠিক তখন জামান সাহেব ফোন দেন। বলেন, ভাবি, আমরা আমাদের সব কর্মীর পাশে আছি। শোভনের এ রকম বিপদের সময় কোনো কিছুতেই লজ্জা করবেন না। আর যেগুলো পাঠিয়েছি, ওগুলো অফিসের পক্ষ থেকে সামান্য উপহার। ভালো থাকেন।
ফোন রেখে ইরিনা যেন লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল! ইশ্! শোভন একটু ফাঁকিবাজি করার জন্য অফিসের বসের সাথে এত বড় মিথ্যের আশ্রয় নিল? ইরিনা একবার বেডরুমে চক্কর মারে। শোভন তখনো ঘুমুচ্ছিল। ইরিনার ভালো লাগে না। টিভিটা ছাড়ে সে। একটা মুভি চলছিল। বিষয়টিভোলার জন্য সে মুভিতে মন দেয়।
মুভি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল ইরিনা খেয়ালই করেনি। ঘুম ভাঙতেই ঝটপট করে উঠে পড়ে সে। আশ্চর্য, এখন প্রায় রাত। টিপটিপ করে বেডরুমের দিকে পা বাড়ায় ইরিনা। তখনো গভীর ঘুমে শোভন। কি মনে করে সে কপালে হাত রাখে শোভনের। বুকটা ধুকধুক করে ওঠে তার। এ অনেক জ্বর! ঠিক তখন প্রবল জ্বরের গোঙানিটা শুনতে পায় ইরিনা।
কিছু একটা ভাবার আগেই শোভন ফিসফিস করে বলে, ‘ইরিনা, আমার গলায় প্রচণ্ড ব্যথা। জ্বর। একদম শ্বাস নিতে পারছি না। আমাকে বাঁচাও।’