'এক হপ্তার সদায়ের চিন্তা গেল'

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত চরের মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন বন্ধুসভার সদস্যরা। বড়মাছুয়া গ্রাম, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর। ২৩ মে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত চরের মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন বন্ধুসভার সদস্যরা। বড়মাছুয়া গ্রাম, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর। ২৩ মে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

বলেশ্বর নদের বুক ছিঁড়ে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে চলছে ট্রলার। গন্তব্য মাঝের চর। সেখানে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। খেতের ফসল ডুবে গেছে। অন্যের ঘরের খাবার ভেসে গেছে।

হঠাৎ বন্ধুসভার তানজীল শুভর চোখে পড়ল চর ভোলমার গ্রামের নদীর তীরে বাবা মেয়ে ঝাকি জাল দিয়ে মাছ ধরছে। ট্রলার তাঁদের কাছে পৌঁছে হাতে তুলে দিল খাদ্যসামগ্রী ও দুটি মাস্ক। খাবার পেয়ে মজিবর রহমান (৬০) ও তাঁর মেয়ে খাদিজা আক্তারের (১২) মুখে আনন্দের হাসি।

আজ শনিবার সকাল এভাবে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে ত্রাণের কাজে যাত্রা করে বন্ধুসভার সদস্যরা। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চর, চর ভোলমারা ও উলুবাড়িয়া গ্রামের ১৫০ জন দুর্যোগকবলিত মানুষের হাতে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল, ডাল, আলু তেল ও সাবান তুলে দেওয়া হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন প্রথম আলোর পিরোজপুর বন্ধুসভা। সকালে ট্রলারে করে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে প্রথমে চর ভোলমারা, উলুবাড়িয়া গ্রাম ও মাঝের চরে যান বন্ধুসভার সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র খালিদ সাইফুল্লাহ আমিন। তিনি ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন এবং ১০০টি মাস্ক ত্রাণের সঙ্গে বিতরণের জন্য বন্ধুসভার সদস্যদের দেন।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। শনিবার দুপুরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। শনিবার দুপুরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

দুপুর ১২টার দিকে ট্রলার যেন মাঝের চরের কাছাকাছি পৌঁছে তখন দেখা যায় নদীর তীরে কয়েকশ মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ট্রলার দেখে অনেকে দৌড়ে কাছে আসেন। চরের বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, ‘নদীর পাড়ে খাড়াইয়া থাহি। ট্রলার দেখলেই বুঝি কেউ খাওন (খাবার) নিয়া আইছে।’

মাঝের চরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৬৫) বলেন, ‘বইন্ন্যায় ঘরের বেবাক (সব) খাবার ভাইস্যা গ্যাছে। এহন ত্রাণ খাইয়া বাঁচি আছি। আপনাগো ত্রাণ পাইয়া মুই খুশি। এক হপ্তার সদায়ের চিন্তা গেল।’

ত্রাণ কার্যক্রমে পিরোজপুর বন্ধুসভার সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি তানজীল আহমদ, সদস্য আল আমিন ও একরামুল হাসান প্রমুখ অংশ নেন।