বৃদ্ধাশ্রম...

‘আপন নিবাস’ বৃদ্ধাশ্রম, মৈনারটেক, উত্তরখান, উত্তরা
‘আপন নিবাস’ বৃদ্ধাশ্রম, মৈনারটেক, উত্তরখান, উত্তরা


বৃদ্ধাশ্রম ভীষণ করুণ একটি শব্দ। শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অবহেলা, অনাদর আর দায়িত্বহীনতার চিত্র।
একটা সময় আমরা শুনতাম যে পশ্চিমা দেশগুলোতে বৃদ্ধাশ্রম বা ওল্ড কেয়ার হোম বেশি থাকে। সেখানে সবাই ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। বৃদ্ধ মানুষকে দেখাশোনা করার অভাবের জন্য তারা অধিকাংশ বৃদ্ধকে ওল্ড হোমে পাঠিয়ে দেয়।
আমাদের দেশেও ওল্ড হোম আছে। বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন কেন হবে? প্রয়োজন হওয়াটা অমানবিক, অযৌক্তিক।
শিশু বয়সে পিতা–মাতা পরম মমতায় আমাদের আগলে রাখেন। তাঁদের সবটুকু ভালোবাসা নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ান।
তাঁদের ত্যাগ বিসর্জনের জন্যই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই। তাঁদের উপার্জন, ত্যাগ–তিতিক্ষার জন্যই আমরা সফল হই।
আর এই পিতা–মাতাকে আমরা অনেকেই বৃদ্ধ বয়সে অবহেলা করি। নিজেদের কাজের চাপ, অনেক পরিবারের দায়িত্বহীন মনমানসিকতা, বৃদ্ধ পিতা–পাতাকে যত্ন নেওয়ার মানুষের অভাব—এই সমস্যাগুলোর জন্য অনেকেই বৃদ্ধ পিতা–মাতাকে ওল্ড কেয়ার হোমে রেখে দিয়ে আসেন।
পিতা–মাতা যেমন আমাদের মায়া করেন, বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে।
আমরা যা কিছু করব, আমাদের যে আচরণ বা চর্চাগুলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখবে, তারা সেই চর্চাগুলোই শিখবে।
কিছু মানুষের সীমাহীন দায়িত্বহীনতা, অবহেলা আর একেবারে অপারগ সন্তানেরাই আমাদের দেশে তাদের পিতা–মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়।
আবার অনেক সময় খুব দরিদ্র অসহায় পরিবারের বৃদ্ধ পিতা–মাতা অর্থাভাবে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পান।
সারা জীবন ছেলে–মেয়ে, পরিবার–পরিজনের জন্য বিসর্জন দেওয়ার পর বৃদ্ধ বয়সে যখন বাবা–মায়ের জন্য সেবা যত্ন, মায়া–মমতা দরকার, তখন কিছু দুর্ভাগা পিতা–মাতার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
প্রত্যেক সন্তানের যা আছে, তা দিয়েই তার পিতা-মাতাকে ভালোবাসা উচিত।
আমরা যেমন আমাদের পিতা–মাতাকে ভালোবাসি, তেমনি স্বামী বা স্ত্রীর পিতা–মাতাকে ভালোবাসাটাও সবার কর্তব্য।
আমাদের নির্ভর করতে হবে আমাদের প্রিয়জনদের ওপর। আমরা যেন বৃদ্ধ পিতা–মাতা বা আত্মীয়স্বজনকে কখনোই অবহেলা না করি।