আমার চোখে বৃদ্ধার হাসিমাখা মুখ

যশোর বন্ধুসভার অর্থ সহায়তা পেয়েছেন যশোর সদরের বুনপাড়ার রমিজা বানু। ছবি: মুসলিমা আক্তার
যশোর বন্ধুসভার অর্থ সহায়তা পেয়েছেন যশোর সদরের বুনপাড়ার রমিজা বানু। ছবি: মুসলিমা আক্তার

ঈদ আসন্ন প্রায়, চারদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। জানতাম আমার চারপাশে বহু দরিদ্র মানুষ খুব কষ্টে আছেন। ঈদ মানে সবাই একসঙ্গে আনন্দ করা। এই মানুষগুলোর ঘরে এবার ঈদ আসবে না, এটা হতে পারে না।

সিদ্ধান্ত নিলাম আমার আশপাশের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করব। যেন ছোট করে হলেও তারা ঈদের আনন্দ পায়। যে–ই ভাবা সে–ই কাজ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমি আর আমার আম্মু এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে দেখলাম মানুষের অভাব-কষ্ট। বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করলাম। এভাবে প্রায় ৩৫৫ পরিবারের কাছে গেলাম মাত্র ৬ দিনে।

মোবাইল ফোনে ৪৫ জন দূরের বন্ধু, সংগঠনের বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের খবর নিলাম, যাঁরা কষ্টে আছেন। অন্য দিকে কাজ চলছে টাকা জমানোর। নিজের দুই মাসের বেতন, ঈদ বোনাসের সম্পূর্ণ টাকা জমা করলাম। আম্মু আর মামার কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করলাম। তাঁদের বললাম আমি এবারের ঈদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াব। তাঁরা সাধ্যমতো টাকা দিয়ে সাহায্য করলেন এবং এ কাজে আমাকে উৎসাহ দিলেন।

সংগ্রহ করা সব বিকাশ নম্বরে ৫০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠালাম। কোনো ব্যক্তিকে কত টাকা পাঠালাম,তা কাগজে নোট রাখলাম। আমার ছোট বোন হাবিবা আক্তার মিম ও ছোট ভাই সাইম হোসেন আমাকে দারুণ সাহায্য করেছে। সঠিকভাবে সবার টাকা পৌঁছাচ্ছে কি না, তা জানতে তিনজন মিলে ফোন করেছি।

ফোন করতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেয়েছি আবেগজড়িত খুশিমাখা কণ্ঠ। মুহূর্তে আমার চোখে বৃদ্ধার হাসিমাখা মুখ ভেসে উঠেছে। বৃদ্ধা নিশ্চিত করলেন তিনি টাকা পেয়েছেন। আমার মন–প্রাণ প্রশান্তিতে ভরে উঠল, তখনই মনে হলো আজ আমি সার্থক। মনে হলো আমি ঈদের খুশি অনুভব করছি। মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে, এ বছর আমার ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে।

এভাবে মোট ৪০০ পরিবার নিশ্চিত করল তারা টাকা পেয়েছে। তাদের নানা ভঙ্গির কথা ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ যেন আমি অনুভব করলাম। খুশিতে বারবার আমার মন নেচে উঠল। আমি যে দেশের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটা আমার ২০২০ সালের অন্য রকম প্রাপ্তি।

আমার সব ভালো কাজে মা সব সময় পাশে থাকেন, অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দেন। ছোটবেলা থেকেই এসব ভালো কাজের শিক্ষা পরিবার থেকে আমি পেয়ে এসেছি। আর আমার সাংগঠনিক শিক্ষা আমার সব ভালো কাজের গতি বৃদ্ধি করে। আমাকে সাহস জোগায়। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সংগঠন প্রথম আলো বন্ধুসভার প্রতি, যে সংগঠন আমাকে ভালো কাজ করতে শিখিয়েছে।

মুসলিমা আক্তার: অনুষ্ঠান সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা